মোদির আল্টিমেটাম জবাব দিয়েছে পাকিস্তান
এ সময় তিনি পাকিস্তানে চালানো অপারেশন সিঁদুর কীভাবে অভিযান চালিয়েছে তার বর্ণনা দেন। বলেন, ভারতের ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র যেভাবে আঘাত করেছে তা পাকিস্তান কল্পনাও করতে পারেনি। এ সময় মোদি দাবি করেন পাকিস্তান হতাশ হয়ে পড়েছিল। আঘাতে তারা পীড়িত হয়ে বিশ্ব জুড়ে ফোন করেছে। তাদের হস্তক্ষেপ চেয়েছে যুদ্ধবিরতির জন্য। কিন্তু ‘পাকিস্তান শুধু যখন ভারতের প্রতি আবেদন করেছে এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, তারা কোনো রকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত হবে না, অগ্রসরমান সামরিক তৎপরতা দেখাবে না, তখনই ভারত যুদ্ধবিরতি বিবেচনা করেছে’। মোদি দাবি করেন ভারতের সুনির্দিষ্ট ও শক্তিশালী হামলায় পাকিস্তান গভীরভাবে হতাশ হয়ে পড়ে। ভারতের সীমান্তে তারা হামলার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু আমরা তাদের হার্টের ভেতর আঘাত করেছি। পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের ভাওয়ালপুর এবং মুরিদকে’র মতো স্থানকে তিনি ‘টেরর ইউনিভার্সিটি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, বিশ্বের সব বড় বড় সন্ত্রাসী হামলা, হোক সেটা ৯/১১, লন্ডন টিউব বোমা হামলা অথবা বড় কোনো সন্ত্রাসী হামলা- যেসব হামলা কয়েক দশকে ভারতে চালানো হয়েছে- এর সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে এসব সন্ত্রাসীর যোগসূত্র আছে। সুনির্দিষ্ট হামলায় ভারত শুধু পাকিস্তানে সন্ত্রাসীদের অবকাঠামোই গুঁড়িয়ে দিয়েছে এমনটা নয়, তাদের নৈতিকতাও গুঁড়িয়ে দিয়েছে।
ইসলামাবাদ এবং রাওয়ালপিন্ডিকে (সেনা সদরদপ্তর) সতর্ক করে দিয়ে নরেন্দ্র মোদি বলেন, অপারেশন সিঁদুর শুধু একটি অপারেশন নয়। একই সঙ্গে এটা হলো সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতীয় নীতির পরিবর্তন। অপারেশন সিঁদুর নতুন এক পরিস্থিতি উল্লেখ করে মোদি বলেন, যেখানেই সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি থাকবে সেখানেই হামলা করবে ভারত। যদি আমাদের দেশ আক্রান্ত হয় তাহলেও অবশ্যই একই কাজ করবে। পাকিস্তানের পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইলের উল্লেখ করে মোদি বলেন, এটা ভারতকে বিরত করতে পারবে না। তিনি বলেন পারমাণবিকভাবে ব্ল্যাকমেইল করা কোনোভাবে সহ্য করবে না ভারত। এমন হলে ভারত সুনির্দিষ্ট হামলা করবে। এক্ষেত্রে ভারত সন্ত্রাসে মদতদাতা সরকার এবং সন্ত্রাসী হামলার মূল হোতাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করবে না।
এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির টেলিভিশন ভাষণের প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে আসিফ বলেন, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী। অথচ ভারতই বারবার নিষ্ক্রিয় ঘোষিত সংগঠনগুলোকে সক্রিয় করে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে শান্তি বিনষ্টের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। একজন পরাজিত নেতার মরিয়া আকুতি স্পষ্ট হয়েছে মোদির বক্তব্যে। তবে তিনি একে একটি ইতিবাচক দিক হিসেবেও দেখছেন। কারণ, মোদি নিজেই স্বীকার করেছেন- কাশ্মীর ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আলোচনা এখনো উন্মুক্ত রয়েছে। খাজা আসিফ এই মন্তব্যকে দুই দেশের চলমান উত্তেজনার মধ্যেও এক ধরনের ‘আশার আলো’ হিসেবে দেখছেন। তিনি আরও দাবি করেন, ভারতের অভ্যন্তরেই মোদির জনপ্রিয়তা কমে যাচ্ছে এবং জনগণ ধীরে ধীরে তার নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে। পাকিস্তানের অবস্থান পরিষ্কার করে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতে ভারতের সঙ্গে যেকোনো সংলাপেই কাশ্মীরসহ সব মূল ইস্যু উত্থাপন করা হবে। খাজা আসিফ ভারতকে শুধু পাকিস্তানে নয়, কানাডার মতো অন্য দেশেও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, ভারত শুধু পূর্ব সীমান্তেই সরাসরি লড়াই করছে না, বরং পশ্চিম সীমান্তেও তেহরিকে তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) ও বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)-এর মতো গোষ্ঠীগুলোকে মদত দিয়ে পাকিস্তানকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টায় লিপ্ত। তিনি জানান, দীর্ঘ দুই দশক ধরে ভারতের এই প্ররোচনামূলক ভূমিকার কারণে পাকিস্তানকে এখন পশ্চিম সীমান্তেও সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করতে হচ্ছে, যা আগে প্রয়োজন পড়তো না।
১০ই মে থেকে শুরু হওয়া প্রতিরোধমূলক অভিযানের ধারাবাহিকতায় পাকিস্তান এখন উচ্চমূল্যসম্পন্ন ভারতীয় লক্ষ্যবস্তুতে হামলার পরিকল্পনা করে বলে জানান আসিফ। তার ভাষ্য অনুযায়ী, পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে ভারত ইতিমধ্যে পাঁচটি দেশের কাছে মধ্যস্থতার অনুরোধ জানিয়েছে, যাতে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি সম্ভব হয়। এই বক্তব্যগুলো এমন সময়ে এসেছে যখন দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে আবারো উত্তেজনার নতুন ধারা তৈরি হয়েছে। খাজা আসিফের বক্তব্য স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছে, পাকিস্তান আর আগের মতো আত্মরক্ষামূলক অবস্থানে নেই; বরং তারা এখন সক্রিয় কূটনৈতিক ও প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। মোদির বক্তব্যে আলোচনার দরজা খোলা থাকার স্বীকারোক্তিকে পাকিস্তান এক নতুন সম্ভাবনার সূচনা হিসেবে দেখছে। তবু দুই দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক অনেকটাই নির্ভর করছে পারস্পরিক কূটনৈতিক সদিচ্ছা ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় চাপের ওপর।

No comments