ইসরাইলি হামলার মধ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় উড়ল ফিলিস্তিনের পতাকা
ওদিকে সোমবার গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ৫২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৩ জনই নিহত হয়েছেন একটি স্কুলে আশ্রয় নেয়া অবস্থায়। গাজা শহরের সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসসাল জানান, ফাহমি আল-জারজাওয়ি স্কুলে ভোররাতে চালানো এক বিমান হামলায় কমপক্ষে ৩৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে বহু। এর বেশিরভাগই শিশু। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে পোড়া লাশ ধ্বংসস্তূপ থেকে টেনে তোলা হচ্ছে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। ইসরাইলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, ওই ভবনটি হামাস ও ইসলামিক জিহাদের পরিকল্পনা ও হামলা সংগঠনের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। তবে প্রত্যক্ষদর্শী ফারাহ নুসসাইর বলেন, স্কুলে ছিল সাধারণ মানুষ- শিশু, বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ। তারা শুধু একটু নিরাপত্তা ও খাদ্য চেয়েছিল। তিনি আরও বলেন, আমরা দক্ষিণে পালিয়ে গিয়েছিলাম, ওরা সেখানেও বোমা ফেলল। আমরা উত্তরে ফিরলাম, সেখানেও বোমা। স্কুলে এলাম, তাও নিরাপদ নয়। এখন কোথাও নিরাপদ নয়- না স্কুল, না হাসপাতাল, কোথাও না। উত্তর গাজার জাবালিয়ায় আরেকটি হামলায় কমপক্ষে ১৯ জন নিহত হয়েছে বলে বাসসাল জানিয়েছেন।
এই ঘটনার মধ্যেই গাজায় মানবিক সহায়তা দেওয়ার কথা যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত এক সংস্থার। কিন্তু এর প্রধান জ্যাক উড রোববার হঠাৎ পদত্যাগ করেছেন। সোমবার থেকে কার্যক্রম শুরুর কথা থাকলেও, পদত্যাগের মাধ্যমে মানবিক নীতিমালা বজায় রাখা সম্ভব নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন। জ্যাক উড বলেন, সংস্থাটি মানবিক নীতিমালা- মানবতা, নিরপেক্ষতা, পক্ষপাতহীনতা এবং স্বাধীনতা, অনুসরণ করতে পারছে না। এই সংস্থা গাজায় খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহের জন্য বেসরকারি ঠিকাদার ও ইসরাইলি নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে। সোমবার থেকেই তাদের কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা। সপ্তাহের মধ্যে ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে সহায়তা পৌঁছানোরও কথা। সংস্থাটি ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিবারগুলোকে যাচাই করে সাহায্য দেবে বলে জানা গেছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা সোমবার জানায়, গাজায় যুদ্ধের কারণে শতকরা ৫ ভাগেরও কম চাষযোগ্য জমি ব্যবহার উপযোগী আছে। এপ্রিলে শতকরা ৮০ ভাগ জমি ক্ষতিগ্রস্ত এবং শতকরা ৭৭.৮ ভাগ জমি অনুপযোগী হয়ে পড়ে। মাত্র ৬৮৮ হেক্টর (১,৭০০ একর) জমি এখন চাষের উপযুক্ত।
ওদিকে, হামাস যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের মধ্যস্থতায় একটি নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে বলে এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এই প্রস্তাবে ৭০ দিনের যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি ১০ জন জীবিত ইসরাইলি জিম্মির মুক্তি এবং গাজা থেকে আংশিক সেনা প্রত্যাহার অন্তর্ভুক্ত আছে। এছাড়া, ইসরাইলের জেলে থাকা শত শত ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু ইসরাইলের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এই প্রস্তাবকে অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেন। তিনি দাবি করেন, কোনো দায়িত্বশীল সরকার এমন চুক্তি মেনে নিতে পারে না। হামাস আদতে কোনো চুক্তিতে আগ্রহী নয়।
ওদিকে ইসরাইলের যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার বিরোধিতা করে ইউরোপীয় নেতারা চাপ সৃষ্টি করছেন। সোমবার জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মাৎসে বলেন, সত্যি বলতে, এখন আমি আর বুঝতে পারছি না ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকায় কী করছে, তাদের লক্ষ্য কী। তিনি জার্মান পাবলিক সম্প্রচার মাধ্যম ডব্লিউডিআর’কে বলেন, আমি আর ইসরাইলের উদ্দেশ্য বুঝতে পারছি না।

No comments