গাজায় হামলা জোরালো, নিহত আরও ১৯: গাজা দখলের পরিকল্পনা অনুমোদন দিলো ইসরাইল

ইসরাইলি বাহিনী গাজায় টানা হামলা জোরদার করেছে। সোমবার ভোরে হামলায় কমপক্ষে ১৯ জন নিহত হয়েছেন বলে গাজার সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে। এর আগের দিন রোববার গাজাজুড়ে ২৪ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে ইসরাইলি বাহিনী। অন্যদিকে মানবিক ত্রাণ বন্ধ করে দেয়ায় গাজার মানুষ এখন অনাহারে। তাদের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘ ও অন্য মানবিক সংস্থাগুলো ইসরাইলের প্রস্তাবিত সাহায্য বিতরণ পরিকল্পনাকে বিপজ্জনক বলে আখ্যা দিয়েছে। ইসরাইলের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বেসরকারি নিরাপত্তা কোম্পানিগুলো খাদ্য বিতরণ করবে। আর ইসরাইলি সেনারা বাইরের নিরাপত্তা দেবে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে,  ইসরাইলি সেনাদের অধীনে নাগরিকদের রেশন সংগ্রহে বাধ্য করা হবে। এমন হলে পরিস্থিতি মানবিক কর্মীসহ অনেকের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে জাতিসংঘের হিউম্যানিটারিয়ান কান্ট্রি টিম। তারা আরও বলেছে, গাজার বেশির ভাগ অসহায় ও অক্ষম মানুষ এই প্রক্রিয়ায় বাদ পড়বে।

ইসরাইল গত ৯ সপ্তাহ ধরে গাজায় খাদ্য ও সহায়তা প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এর ফলে গাজাবাসীর রান্না বন্ধ। খাদ্যের গুদাম খালি। শিশুদের অপুষ্টির হার বেড়েছে। ওদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, কমপক্ষে ৫২,৫৩৫ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইল। তাদের হামলায় আহত হয়েছেন ১,১৮,৪৯১ জন। তবে সরকারের মিডিয়া অফিস বলছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে বহু মানুষ চাপা পড়ে থাকার কারণে প্রকৃত মৃতের সংখ্যা ৬১,৭০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে। ওদিকে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা ইসরাইলের একটি বিমানবন্দরের খুব কাছে হামলা করেছে। এর প্রতিবাদে ইরানে ও ইয়েমেনে হুতিদের লক্ষ্য করে হামলা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তবে হুতিরা হুঁশিয়ারি দিয়েছে, গাজায় ইসরাইলের ‘আগ্রাসী যুদ্ধ’ চালিয়ে যাওয়ার জবাবে তারা বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরকে লক্ষ্য করে হামলা চালাতেই থাকবে।

পশ্চিম তীরে সোমবার ভোরে শুকবা (রামাল্লাহর পশ্চিমে), আল-ইয়ামুন (জেনিনের উত্তরে), বেইত উম্মার (হেব্রনের উত্তরে) ও খিরবেত ইয়ানুন (নাবলুসের দক্ষিণে) অভিযান চালিয়ে অনেক ফিলিস্তিনিকে গ্রেফতার করেছে ইসরাইলি বাহিনী।

গাজা দখলের পরিকল্পনা অনুমোদন দিলো ইসরাইল

ফিলিস্তিনের গাজা দখলে নেয়ার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে ইসরাইলের নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা। এর মধ্যে হামাসের বিরুদ্ধে সামরিক হামলা বৃদ্ধির বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ইসরাইলি এক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। এতে বলা হয়, মন্ত্রিসভার বৈঠকে গাজার ২১ লাখ ফিলিস্তিনিকে উপত্যকাটির দক্ষিণে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনার বিষয়টিও অনুমোদন পেয়েছে। যাতে সেখানের মানবিক সংকট আরও প্রকট হবে। গাজা দখলের বিষয়টিকে ‘ভালো পরিকল্পনা’ বলে অভিহিত করেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হামাসকে নির্মূল করে জিম্মিদের দেশে ফেরাতে তাদের পরিকল্পনাই উত্তম। মন্ত্রিসভা নীতিগতভাবে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে মানবিক সহায়তা সরবরাহ ও বিতরণের একটি পরিকল্পনাও অনুমোদন করেছে। ইসরাইলের গত দুই মাসের অবরোধের ফলে গাজায় যে তীব্র মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে তা কমিয়ে আনতেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। তবে এসব পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছে জাতিসংঘসহ অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থা। তারা বলেছে, এসব প্রস্তাব মৌলিক মানবিক নীতির লঙ্ঘন হবে। ফলত ইসরাইলের এসব প্রস্তাবে তাদের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা করা হবে না। এদিকে ইসরাইলের প্রস্তাবকে ‘রাজনৈতিক ব্ল্যাকমেইল’ বলে অভিহিত করেছে হামাস।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় হামলা শুরু করে ইসরাইল। গত ১৯ জানুয়ারি উপত্যকাটিতে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। ১৮ মার্চ ওই যুদ্ধবিরতি ভেঙে ব্যাপক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। সোমবার গাজার উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন, এদিন উত্তর গাজায় আকাশপথে ইসরাইলের হামলায় অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে উপত্যকাটিতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ৫২ হাজারে। 

mzamin

No comments

Powered by Blogger.