বিশ্বের সবচেয়ে দুর্ঘটনাপ্রবণ সড়ক

ভারতে সড়কে বেড়েছে মৃত্যুর মিছিল। দেশটিতে প্রতি তিন মিনিটে একজন সড়কে প্রাণ হারান। বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক সড়কগুলোর মধ্যে ভারত অন্যতম। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। ভারতের সংবাদপত্রগুলোতে প্রতিদিন পাহাড়ি খাদে বাস পড়ে যাওয়া, মাতাল চালকের পথচারীকে পিষে দেয়া, দাঁড়িয়ে আছে এমন কোনো ট্রাকে গাড়ির ধাক্কা ও বড় যানবাহনের ধাক্কায় ছোট গাড়ি ভেঙে যাওয়ার মতো খবর লক্ষ্য করা যায়। ২০২৩ সালে ভারতে সড়কে প্রাণ হারান কমপক্ষে ১ লাখ ৭২ হাজার মানুষ। প্রতিদিনের হিসাবে ওই সংখ্যা ৪৭৪। অর্থাৎ প্রতি তিন মিনিটে ১ জন করে মারা যান সড়ক দুর্ঘটনায়। এদিকে ডিসেম্বরে মৃতের সংখ্যা উদ্বৃত করে ভয়ঙ্কর চিত্র তুলে ধরেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিষয়ক মন্ত্রী নিতিন গড়করি। ২০২৩ সালে মৃতের মধ্যে শিশু ছিল ১০ হাজার। স্কুল ও কলেজের কাছে সড়ক দুর্ঘটনায় আরও ১০ হাজার প্রাণহানি ঘটে। প্রাণ হারিয়েছেন ৩৫ হাজার পথচারী। দুই চাকার গাড়ির আরোহীদেরও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। অতি দ্রুত গাড়ি চালানোকে এসব সড়ক দুর্ঘটনার বড় কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অসাবধানতার জন্য প্রাণ হারিয়েছেন অনেকে। এর মধ্যে হেলমেট না পরার কারণে প্রাণ হারান ৫৪ হাজার মানুষ। ১৬ হাজার প্রাণ হারান সিটবেল্ট না পরার কারণে। এ ছাড়া অতিমাত্রায় পণ্য পরিবহনও সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।

এতে নিহত হন ১২ হাজার মানুষ। বৈধ লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোয় ৩৪ হাজার সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। ভুল দিকে গাড়ি চালিয়েও প্রাণ খুইয়েছেন অনেকে। ২০২১ সালের ১৩ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে বৈধ লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোর কারণে। সড়কে চলা বেশির ভাগ যানবাহনই অতি পুরনো। বেশির ভাগ গাড়িতেই সিট বেল্ট নেই। এয়ার ব্যাগের কথা ভাবা তো বিলাসিতা। এ ছাড়া ভারতের সড়কের পরিস্থিতি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে সেখানকার ট্রাফিক সিস্টেম। বাইসাইকেল, সাইকেল ও রিকশার মতো যানবাহনের সঙ্গে রাস্তায় জায়গা করে নেয়ার জন্য যানজট সৃষ্টি করে বাস, মোটরসাইকেল, কারের মতো মোটরচালিত যানবাহনগুলো। নিজেদের জিনিস বিক্রয়ের জন্য পথচারীদের পথ আটকে দেন হকাররা। এতে সড়কে আরও যানজট সৃষ্টি হয়। এ সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা ও বিনিয়োগ করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে তা সত্ত্বেও সড়কে থেমে নেই  বিশৃঙ্খলা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু অবকাঠামো না বরং মানুষের ব্যবহারও সড়কে বিশৃঙ্খলার জন্য দায়ী। এদিকে সড়ক দুর্ঘটনার মতো ঘটনা ভারতের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছে। সড়ক দুর্ঘটনার কারণে দেশটির মোট দেশজ উৎপাদন বা বার্ষিক জিডিপির ৩ শতাংশ ক্ষতি হয়। উল্লেখ্য, ভারতে আছে বিশ্বের দ্বিতীয় সড়ক নেটওয়ার্ক। যা ৬৬ লাখ কিলোমিটার বিস্তৃত।

এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের পর ভারতের অবস্থান। গড়করি বলেন, জনগণের অসচেতনতা ও আইনের প্রতি উদাসীনতা সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। তবে গত মাসে তিনি সড়কের ত্রুটিপূর্ণ নকশার জন্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের ওপর দোষ চাপান। এ ছাড়া নিম্নমানের নির্মাণ ও দুর্বল ব্যবস্থাপনার বিষয়টিও নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, সবচেয়ে বড় অপরাধী হলেন সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা। এ দেশে রাস্তার সাইনবোর্ড ও মার্কিং সিস্টেমও অতি দুর্বল। ২০১৯ সালে তার মন্ত্রণালয় মহাসড়কে ৫৯টি বড় ধরনের ত্রুটির কথা জানায়। ১৩ হাজার ৭৯৫টি সড়ক দুর্ঘটনা কালো তালিকাভুক্ত করা হলেও মাত্র ৫ হাজার ৩৬টি দীর্ঘমেয়াদি সংশোধনের মধ্যদিয়ে গেছে। বছরের পর বছর ধরে ভারতের ট্রান্সপোর্টেশন রিসার্চ অ্যান্ড ইনজুরি প্রেভেনশন সেন্টার (টিআরআইপিপি)  সড়ক নিরাপত্তা নিরীক্ষা সড়ক অবকাঠামোতে বড় ধরনের ত্রুটি উন্মোচিত করেছে। সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে ক্রাশ ব্যারিয়ার ব্যবহারের নির্দেশ দেয়া হয়। বলা হয়, ক্রাশ ব্যারিয়ার সড়কে দেয়া হয় যাতে এর সাহায্যে গাড়িগুলো সহজে থামানো যায়। তবে বেশির ভাগ জায়গাতেই এর উল্টোচিত্র চোখে পড়ে। উচ্চতা, ব্যবধান ও স্থাপনের জন্য স্পষ্ট মান থাকলেও বাস্তবতা ভিন্ন গল্প বলে। ভুল উচ্চতায় ধাতব বাধা, কংক্রিটের ওপর ভিত্তি স্থাপনের মতো কাজের ফলে বাস, ট্রাকের মতো গাড়ি থামার বদলে উল্টে যেতে পারে। এ বিষয়ে দিল্লির আইআইটি’র ইমেরিটাস অধ্যাপক গীতাম তিওয়ারি বলেন, ক্রাশ ব্যারিয়ারগুলো যদি ঠিকমতো স্থাপন না করা হয় তাহলে তা ভালো করার চেয়ে বরং খারাপ করতে পারে। তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম মূল কারণ হলো- নিরাপত্তা মান না মানলে সেক্ষেত্রে ন্যূনতম জরিমানা নির্ধারণ। এ বিষয়ে গড়করি সম্প্রতি বলেছেন, তিনি ২৫ হাজার কিলোমিটারের দুই লেনের সড়কগুলোকে চার লেনের সড়কে পরিণত করবেন। এতে সড়কে প্রাণহানি কমবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.