অবিশ্বাস্য! মানুষের খুলির তৈরি কাপে মদ পান করতেন অক্সফোর্ডের কিছু শিক্ষক

অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্য বিশ্ববিখ্যাত বৃটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক কয়েক দশক ধরে মানুষের মাথার খুলির তৈরি কাপে পান করতেন মদ। যে তথ্য লুট হওয়া মানব দেহাবশেষের সহিংস ঔপনিবেশিক ইতহাস সম্বলিত একটি বইয়ে উঠে এসেছে। অক্সফোর্ডের পিট রিভার্স মিউজিয়ামের বিশ্ব প্রত্নত্তত্ব বিভাগের কিউরেটর অধ্যাপক ড্যান হিকসের মতে, ২০২৫ সাল পর্যন্ত ওরচেস্টার কলেজের আনুষ্ঠানিক নৈশভোজে পানপাত্রটি নিয়মিতভাবে ব্যবহৃত হতো। যেগুলো মানুষের মাথার খুলি দিয়ে তৈরি। এ খবর দিয়েছে অনলাইন দ্য গার্ডিয়ান।

এতে বলা হয়, ‘এভরি মনুমেন্ট উইল ফল’ নামের একটি বই লিখেছেন ড্যান হিকস। যেখানে তিনি মাথার খুলির লজ্জাজনক ইতিহাস তুলে ধরেছেন। হিকস বলেছেন, কাপ ফুটো হয়ে মদ বেরোতে শুরু করলে তাতে চকলেট পরিবেশন করা হতো।

অক্সফোর্ডের এই প্রত্নতত্ত্ববিদ বলেছেন, শিক্ষক এবং অতিথিদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অস্থিরতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ কমনরুমের আচার-অনুষ্ঠানের ইতি ঘটে। পরে ২০১৯ সালে খুলি কীভাবে ‘অস্বাভাকি ধরণের পানপাত্রে পরিণত’ হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে হিকসকে আমন্ত্রণ জানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ।

হিকস বলেন, ঔপনিবেশিকাতার উত্তরাধিকার সম্পর্কে বিতর্কই মূলত এ বিষয়ের ওপর মনযোগ আকর্ষণ করেছে। যেখানে সিসিল রোডস অথবা এডওয়ার্ড কলস্টনের মতো প্রসিদ্ধ বৃটিশরা এ থেকে লাভবান হয়েছেন। তারা কীভাবে তাদের নাম ধারণকারী মূর্তি, বস্তু বা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্মরণীয় হয়ে আছেন।

তবে হিকস দেখাতে চেয়েছেন, ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে থাকা মানুষদের পরিচয় প্রায়শই ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা হয়েছে। কারণ বর্ণবাদী বৃটিশ সংস্কৃতি ও শ্বেত আধিপত্যবাদী ধারণার ফলে তাদের (ঔপনিবেশিক শাসনে ভুক্তভোগী মানুষ) উল্লেখযোগ্য বলে গণ্য করা হতো না। এ সব মানুষদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ ও তাদের পরিচয় ধ্বংস করার প্রচেষ্টা সহিংসতার অংশ বলে মন্তব্য করেছেন এই প্রত্নতত্ত্ববিদ।

হিকস সেই ব্যক্তির কোনো রেকর্ড খুঁজে পাননি যার দেহাবশেষ থেকে পানপাত্র তৈরি করা হয়েছিল। যদিও কার্বন ডেটিংয়ে দেখা গেছে খুলিটি প্রায় ২৫৫ বছর পুরোনো। খুলির আকার ও গঠন থেকে বুঝা যায় এটি ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের। যা দাসত্বের শিকার কোনো নারীর বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে পানপাত্রটির বৃটিশ মালিকদের সম্পর্কে সুপরিচিত তথ্য পাওয়া গেছে। ১৯৪৬ সালে জর্জ পিট-রিভার্স নামে সাবেক এক শিক্ষার্থী ওরচেস্টার কলেজে পানপাত্রটি দান করেছিলেন। যার নাম পানপাত্রের রূপার অংশে খোদাই করা আছে। যাকে বৃটিশ ফ্যাসিবাদী নেতা অসওয়াল্ড মোসলেকে সমর্থন করার অভিযোগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়  অন্তরীণ করে বৃটিশ সরকার।

কাপটি পিট-রিভার্সের দাদা ভিক্টোরিয়ান বৃটিশ সৈনিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক অগাস্টাস হেনরি লেন ফক্সের ব্যক্তিগত সংগ্রহের অংশ ছিল। ১৮৮৪ সালে পিট রিভার্স একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। একই বছরে সথবি’র নিলাম থেকে কাপটি কিনেছেলেন তার বড় ভাই।

নথি থেকে জানা গেছে তখন কাপটিতে একটি কাঠের স্ট্যান্ড ছিল যার নীচে রানী ভিক্টোরিয়ার একটি শিলিং বসানো ছিল। কাপটির রূপালী অংশ থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, এটি ১৮৩৮ সালে তৈরি করা হয়েছিল। সেই বছরই রানী ভিক্টোরিয়ার অভিষেক হয়েছিল।

কাপটির বিক্রেতা ছিলেন আইনজীবী ও অক্সফোর্ডের ওরিয়েল কলেজের স্নাতক বার্নার্ড স্মিথ। তিনি মূলত প্রাচীন অস্ত্রশস্ত্র ও বর্ম সংগ্রহ করতেন। অধ্যাপক হিকসের ধারণা, তিনি তার বাবার কাছ থেকে কাপটি উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন। তার বাবা ক্যারিবীয় অঞ্চলে বৃটিশ রাজকীয় নৌবাহিনীতে কাজ করতেন।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.