সৌদির ‘গোলাপ শহর’, যেন সুগন্ধির স্মারক

মরুভূমির গোলাপের সুগন্ধি বোতলে ধারণ করার শিল্পে নিখুঁত দক্ষতা অর্জন করেছেন সৌদি আরবের বাসিন্দা খালাফুল্লাহ আল-তালহি। গোলাপ বড়ই পছন্দ করেন তিনি। নিজের বাচ্চাদের চেয়েও গোলাপের যত্ন নেন বেশি। এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা এএফপি। সেখানে বলা হয়েছে, গোলাপের শহর নামে পরিচিত সৌদির তাইফ শহর। সেখানে ৮০০ খামারে প্রায় ৩০ কোটি গোলাপ উৎপাদন করা হয়। আল-তালহির ধারণা অনুযায়ী এর মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ লাখ গোলাপের ফলন তিনি নিজেই করেন। বসন্তের মৃদু আবহাওয়ার আগমনের সঙ্গে সঙ্গে তাইফে গোলাপ ফুঁটতে দেখা যায়। যা বিশাল মরুভূমির দৃশ্যকে গোলাপী রঙের প্রাণবন্ত ছায়ায় সজ্জিত করে। একদল শ্রমিক ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফুলগুলো তোলেন। এরপর গোলাপের পাঁপড়িগুলো পানিতে ভিজিয়ে রাখেন। পরে তা সেদ্ধ করা হয়। মানুষের কাছে অতি পরিচিত এই ফুলটির সুগন্ধ প্রক্রিয়াজাত করা একটি জটিল বিষয়। বাষ্প করে তা সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে তা থেকে তৈরি হয় সুগন্ধি তেলে।

দীর্ঘদিন ধরে পবিত্র কাবা শরীফের দেয়াল ধোয়ার কাজে গোলাপ জল ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ওই গোলাপ জল তৈরি করা হয় গোলাপ থেকে। এছাড়া তাইফের গোলাপ থেকে তৈরি সুগন্ধি সৌদি আরবে আসা হজ্জযাত্রীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। স্থানীয়ভাবে এর ব্যাপক চাহিদার কারণে সীমিত পরিমাণে গোলাপ রপ্তানি করা হয়। তালহি বলেন, এখানে অনেক গোলাপ প্রেমি আছেন যারা শুধু গোলাপেরই সুগন্ধি পছন্দ করেন। ট্রেন্ডইকোনোমির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে সৌদি আরব ১৪১ মিলিয়ন ডলারের সুগন্ধি পণ্য রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে গোলাপ জলও আছে। ফুল কাটার মৌসুমে তালহির খামার থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার ফুল তোলা হয়। তালহি বলেন, আমরা খামারেই জন্মেছি এবং এগুলো নিয়েই আছি। তবে গ্রীষ্মের তীব্র তাপ, অতি শীত ও অপ্রত্যাশিত বন্যা তাইফের গোলাপ বাগানের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জলবায়ুু বিজ্ঞানীরা সতর্কতা জারি করেছেন যে, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে তাপপ্রবাহ, ভারী বৃষ্টিপাত ও খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি পাবে।  শুষ্ক জলবায়ু ও বিশাল মরুভূমির কারণে সৌদি আরব বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। আটল্যান্টিক কাউন্সিল ধারণা করছে, উচ্চ তাপমাত্রা ও পর্যাপ্ত সেচের পানির অভাবে ২০৫০ সাল নাগাদ গমের উৎপাদন ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমে যাবে। এছাড়া খেজুর ও অন্য ফসলের উৎপাদনও হ্রাস পাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর সঙ্গে গোলাপ উৎপাদনও কমে যেতে পারে।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.