হামাসকে সন্ত্রাসী তালিকা থেকে বাদ দেয়ার আবেদন

সন্ত্রাসীদের তালিকা থেকে নিজেদেরকে বাদ দেয়ার জন্য বৃটেনের কাছে আবেদন করেছে ফিলিস্তিনের যোদ্ধাগোষ্ঠী হামাস। এ বিষয়ে বৃটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপারের কাছে হামাসের পক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে বুধবার আবেদন জমা দিয়েছেন হামাসের সিনিয়র কর্মকর্তা মুসা আলু মারজুক। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামাসের রাজনৈতিক শাখার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং আইনি বিষয়ক প্রধান মারজুক ওই আবেদনে জানিয়েছেন, হামাস হলো ফিলিস্তিনের ইসলামপন্থি স্বাধীনতা ও প্রতিরোধ আন্দোলনের সংগঠন। তাদের উদ্দেশ্যই হলো ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বাধীনতা এবং জায়নবাদী প্রকল্পগুলোর মুখোমুখি হওয়া। এই আবেদনের পরিধি কমপক্ষে ১০০ পৃষ্ঠা। এতে মত নেয়া হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের সাবেক এডহকভিত্তিক বিচারক জন দুগার্ড সহ কমপক্ষে ২০ জন বিশেষজ্ঞের। এতে যুক্তি দেয়া হয়েছে যে, গাজায় গণহত্যা চালানো হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে বৃটেনের এর বিরোধিতা করার বাধ্যবাধকতা আছে। তা তারা করছে না। এর মধ্য দিয়ে তারা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে। হামাসের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আছে। সমাবেশের অধিকার আছে। তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে না বৃটেন। এটা বৈষম্যমূলক। এই আবেদনে বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন বৃটেনের আইনের অধীনে যেভাবে হামাসের কর্মকাণ্ডকে সন্ত্রাস হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, একই কাজ তো করছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী, ইউক্রেনের সেনাবাহিনী এবং বৃটিশ সেনাবাহিনী।

ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেবে ফ্রান্স
ফিলিস্তিনিদের জন্য সুখবর দিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে তার দেশ। তার এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ভারসেন আঘাবেকিয়ান শাহিন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা। এতে বলা হয়, বুধবার ফ্রান্স ৫ টেলিভিশন চ্যানেলকে ম্যাক্রন বলেছেন, ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ নিয়ে জাতিসংঘের সম্মেলনে চূড়ান্তভাবে তিনি তার দেশের অবস্থানের কথা পরিষ্কার করবেন। জুনে অনুষ্ঠেয় সৌদি আরবের ওই সম্মেলনের সহ-সভাপতি তার দেশ। ম্যাক্রন বলেন, আমাদেরকে অবশ্যই স্বীকৃতি দেয়ার দিকে এগিয়ে যেতে হবে। কয়েক মাসের মধ্যেই সেটা করবো আমরা। কাউকে খুশি করার জন্য আমি এটা করবো না। এটা করছি, এর একটিই কারণ। তা হলো ফিলিস্তিনিদের অধিকার আছে। ভারসেন আঘাবেকিয়ান শাহিন বার্তা সংস্থা এএফপি’কে বলেছেন, এই স্বীকৃতি হবে তার দেশের জন্য আর একটি সঠিক নির্দেশনা। ফিলিস্তিনি জনগণ এবং দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের জন্য একটি রক্ষাকবচ। তবে ফ্রান্সের এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সার।

তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র নিয়ে যেকোনো ‘একতরফা স্বীকৃতি’ হামাসকে উদ্বুদ্ধ করবে। এই ধরনের পদক্ষেপ কোনো শান্তি, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা আনবে না এ অঞ্চলে। পক্ষান্তরে এই পদক্ষেপ এসব বিষয়কে আরও দূরে সরিয়ে দেবে। উল্লেখ্য, এরই মধ্যে জাতিসংঘের ১৯৩টি দেশের মধ্যে ১৪৭টি দেশ ফিলিস্তিনকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর মধ্যে আছে আর্মেনিয়া, স্লোভেনিয়া, আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে, স্পেন, বাহামা, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো, জ্যামাইকা এবং বারবাডোজ। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক সমর্থন সত্ত্বেও কয়েকটি পশ্চিমা শক্তিধর দেশের কারণে সেই স্বীকৃতি আটকে আছে। এর মধ্যে আছে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, বৃটেন ও জার্মানি। এবার ইমানুয়েল ম্যাক্রন বলেছেন, কতোগুলো দেশের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে তিনিও ইসরাইলকে একটি রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার করেন। যেসব দেশ ইসরাইলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার করে না তার মধ্যে আছে সৌদি আরব, ইরান, ইরাক, সিরিয়া ও ইয়েমেন। ম্যাক্রন বলেছেন, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়ার মাধ্যমে ইসরাইলের অধিকারের পক্ষে যারা তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থানকে পরিষ্কার করে। দীর্ঘদিন ধরে ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের সমাধানে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পক্ষে অবস্থান ফ্রান্সের। ফ্রান্সের এই স্বীকৃতি দেয়ার ফলে ক্ষুব্ধ হবে ইসরাইল, এটা নিশ্চিত।  ওদিকে সম্প্রতি মিশর সফরে গিয়ে সেখানকার প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি এবং জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহর সঙ্গে কথা বলেছেন ইমানুয়েল ম্যাক্রন। সেখানে তিনি পরিষ্কার করেছেন যে, গাজায় জায়নবাদীদের বসতি সম্প্রসারণ অথবা গাজার মানুষের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার দৃঢ়বিরোধী ফ্রান্স।

বেশির ভাগ আমেরিকানই ইসরাইলকে অপছন্দ করেন
সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, বেশির ভাগ মার্কিন নাগরিকেরই ইসরাইল সম্পর্কে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। গাজায় ইসরাইলের বর্বর হামলার ফলে এই বিদ্বেষ আরও জোরদার হয়েছে। এ খবর দিয়েছে মিডেল ইস্ট আই। এতে বলা হয়, সম্প্রতি পিউ রিসার্চ নামের একটি সংগঠন এ বিষয়ে একটি জরিপ করেছে। সেখানে দেখা গেছে, ৫৩ শতাংশ মার্কিন নাগরিক এখন ইসরাইলের বিষয়ে নেতিবাচক মনোভব পোষণ করেন। ২০২২ সালের মার্চে করা জরিপে এ হার ছিল ৪২ শতাংশ। রিপাবলিকানদের তুলনায় ডেমোক্রেটদের ইসরাইল সম্পর্কে নেতিবাচক মতামত প্রকাশের পরিসংখ্যান বেশি। সর্বশেষ জরিপে ৬৯ শতাংশ ডেমোক্রেট ও ৩৭ শতাংশ রিপাবলিকান ইসরাইলকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। গাজা যুদ্ধ শুরুর আগে ২০২২ সালে ২৭ শতাংশ রিপাবলিকান ইসরাইলের বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব রাখতেন। তবে গাজা যুদ্ধের পর থেকে রিপাবলিকানদের মধ্যে নেতিবাচক মতামত পোষণকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ১০ শতাংশ। এক্ষেত্রে ৫০ বছরের নিচে যাদের বয়স তাদের মধ্যে ইসরাইলের প্রতি বিদ্বেষী মনোভাব বেশি বেড়েছে বলে ওই জরিপে বলা হয়েছে। এ বয়সের প্রায় ৫০ শতাংশ রিপাবলিকান এবার ইসরাইলের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ডেমোক্রেটদের মধ্যেও ইসরাইলকে নিয়ে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বেড়েছে। ২০২২ সালের তুলনায় এবার ১৬ শতাংশ বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে শুধু ১৮ থেকে ৪৯ বছর বয়সী রিপাবলিকান গ্রুপ ছাড়া বাকি সব ধরনের বয়স গ্রুপের মানুষ মনে করেন, গাজায় ইসরাইলের হামলা তাদের ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গত কয়েক বছরে মার্কিন ইহুদিদের সঙ্গে ইসরাইলের দূরত্ব বেড়েছে। বিশেষ করে ইসরাইল সরকার ও দেশটির সুপ্রিম কোর্টের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে। গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এ দূরত্ব আরও দ্রুত বেড়েছে।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.