জুলহাসের উড়োজাহাজ নিয়ে মানিকগঞ্জে হৈচৈ by রিপন আনসারী
পরীক্ষামূলকভাবে প্লেনটি নিয়ে আকাশে উড্ডয়নের জন্য বেলা ১১টার দিকে ২৮ বছর বয়সী জুলহাস প্লেনের স্টিয়ারিং সিটে বসে পড়েন। চারদিকে তখন উৎসুক মানুষের ভিড়। যমুনায় জেগে ওঠা চড়ে প্লেনটি রানওয়ের মাধ্যমে নিমিষের মধ্যেই আকাশে উড়ে যায়। প্লেনটি ৪০ থেকে ৪৫ ফুট উচ্চতায় অবস্থান করে প্রায় দুই মিনিট। আকাশে উড়ার দৃশ্য দেখে অনেকেই হতবাক হয়ে যান। অপলকদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন অনেকেই। হইহুল্লোড় ও করতালি দিয়ে জুলহাসের এই কারিশমাকে অভিবাদন জানান উৎসুক মানুষ। নিজের তৈরি প্লেন চালিয়ে আকাশে উড্ডয়নের পর জুলহাস তার এই কারিশমার গল্প তুলে ধরেন সাংবাদিকদের কাছে। তিনি বলেন, ছয় ভাই ও দুই বোনের মধ্যে আমি পঞ্চম। ইলেকট্রিক মিস্ত্রি হিসেবে বর্তমানে কাজ করছি ঢাকায়। ২০১৪ সালে এসএসসি পাস করার পর অর্থাভাবে লেখাপড়া করতে পারেননি। প্লেন তৈরি করে সেই প্লেন চালিয়ে আকাশে উড়বো- এমন ইচ্ছা জেগেছিল ছোটবেলা থেকেই। সেই ইচ্ছা আল্লাহ আমার পূরণ করেছেন।
জুলহাস বলেন, সম্পূর্ণ নিজের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে আমি প্লেনটি তৈরি করেছি। প্লেন তৈরি করতে গিয়ে আমাকে তিন বছর গবেষণা করতে হয়েছে। এরপর পুরোপুরি এক বছর লেগেছে প্লেনটি তৈরি করতে। মোট চার বছরের পরিশ্রমে এই প্লেনটি তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। এটা তৈরিতে যে মেটেরিয়াল আছে সেগুলো কিনতে প্রায় দেড় লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। আর এটা তৈরির জন্য যে জ্ঞানটা প্রয়োজন সেই জ্ঞান অর্জন করতেও ৮/১০ লাখ টাকা লেগেছে।
এই প্লেনে অ্যালুমিনিয়াম, এসএস পাইপ, লোহা সবই ব্যবহার করছি। যেখানে যেটা পারফেক্ট হয় সেখানে সেটা লাগানো হয়েছে। আর আমার সামর্থ্য অনুযায়ী মাত্র ১৩ হাজার টাকা দিয়ে একটি পানির পাম্পের সাতঘোড়া ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্লেনটি চেষ্টা করলে মেঘের উপর থেকেও ঘুরানো সম্ভব। যেহেতু এটা একটা প্রশিক্ষণ বিমান সেহেতু এটাকে বেশি উঁচুতে উঠানো ঝুঁকিপূর্ণ বলে আমি মনে করি। আমি কখনোই ৫০ ফুটের উপরে ওঠানোর চেষ্টা করিনি এবং ভবিষ্যতেও করা হবে না। তবে এটাকে যদি ডেভেলপ করা হয় তাহলে এটার লিমিট বাড়ানো যেতে পারে। মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. মনোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, জুলহাসের প্লেন তৈরি এবং মেধা দেখে আমি মুগ্ধ। তাকে গবেষণা কাজে সরকার সহযোগিতা করবে। প্রাথমিকভাবে কিছু আর্থিক সহযোগিতা করে উৎসাহ দেয়া হয়েছে। তবে ওর মধ্যে যে মেধা রয়েছে সে যদি ধরে রাখতে পারে তাহলে বহুদূর এগিয়ে যেতে পারবে।

No comments