ইউক্রেন ইস্যু: ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে উত্তেজনা তুঙ্গে!

ইউক্রেন ইস্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এবং ইউরোপের সম্পর্ক ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে তীব্র বাকযুদ্ধের পর ট্রাম্প ইউরোপকে কঠোর বার্তা দিয়েছেন। যেখানে আমেরিকানদের পুতিনের চেয়ে অভিবাসী গ্যাং, মাদক ব্যবসায়ী ও অপরাধীদের বিষয়ে বেশি মনোযোগ দেয়ার কথা বলেছেন ট্রাম্প। এদিকে তার এই বার্তা ইউরোপকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। কেননা, তারা বুঝতে পারছে যে, নিরাপত্তা ইস্যুতে হয়তো আর যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করা সম্ভব হবে না। এ খবর দিয়েছে ডেইলি মেইল অনলাইন। এতে বলা হয়, নিজের সোশ্যাল ট্রুথে ওই মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প। সেখানে তিনি লিখেছেন, আমাদের পুুতিনের বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে অধিক সময় নষ্ট করা উচিত নয়। বরং অভিবাসী ধর্ষক গ্যাং, মাদক ব্যবসায়ী, খুনি এবং মানবিক চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে পালিয়ে এসে আমেরিকাতে অনুপ্রবেশকারী ব্যক্তিদের নিয়ে বেশি চিন্তা করা উচিত- যাতে আমাদের পরিণতি ইউরোপের মতো না হয়। ট্রাম্পের এসব মন্তব্য এমন সময়ে এলো যখন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের বাকযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েনে পড়েছে ইউরোপ। এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপের দেশগুলো এমন আশঙ্কার মধ্যে পড়েছে যে, তারা মনে করছে নিরাপত্তা ইস্যুতে হয়তোবা আর যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করতে পারবে না। বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার রোববার বলেছেন, ইউরোপের সকল দেশের সঙ্গে আলোচনার পর ইউক্রেনের প্রতিরক্ষার ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ন্যাটো জোটভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বছরের পর বছর ধরে এই প্রতিরক্ষা ব্যয় এখন ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্কের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত ন্যাটো থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেননি ট্রাম্প। তবে ন্যাটোর কার্যক্রম নিয়ে ইতিমধ্যে বেশ সমালোচনা করেছেন তিনি। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক মিত্র এবং বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্কও তাকে এ বিষয়ে সমর্থন দিয়েছেন।

এর আগে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেছিলেন, ন্যাটোতে অর্থ ব্যয় নিয়ে তার যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। ন্যাটোকে মার্কিন অর্থ ব্যয় নিয়ে এমন মন্তব্য করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেছেন, ন্যাটো আমাদের সুরক্ষা দিচ্ছে না। ট্রাম্প ব্লকটিকে আমেরিকার জন্য প্রতিরক্ষা ব্যয় দ্বিগুণ করার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রথম মেয়াদেও ন্যাটো থেকে বের হয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ফিরে আসার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যু তার ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান বিভেদের প্রতিনিধিত্ব করছে। মূলত ইউক্রেন ইস্যুতে ইউরোপের সঙ্গে ট্রাম্পের বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে গত সপ্তাহের শুক্রবার। হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন জেলেনস্কি। পরে সাংবাদিকদের সামনে ওভাল অফিসে জেলেনস্কির সঙ্গে বাকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন ট্রাম্প ও তার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স। এক পর্যায়ে জেলেনস্কিকে বের হয়ে যেতে বলা হয়েছে বলেও খবর রয়েছে। ওভাল অফিসে উভয় পক্ষই উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় করেছে।

ট্রাম্প হুমকি দেন জেলেনস্কি যদি শান্তিচুক্তিতে রাজি না হন তাহলে ইউক্রেনকে সম্পূর্ণরুপে ত্যাগ করবেন তিনি। জেলেনস্কিকে অকৃতজ্ঞ বলেও অভিহিত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। জেলেনস্কি নিজের অবস্থান থেকে ট্রাম্পকে তার দেশের ধ্বংসযজ্ঞের ছবি দেখান এবং যুক্তি দিয়েছিলেন যে, তিনি আমেরিকান জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞ। ওভাল অফিসে দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে এমন উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় এর আগে কখনো দেখা যায়নি। এটা নজিরবিহীন। সেখানে সাংবাদিকরা উপস্থিত থাকায় তাদের ওই উত্তেজিত মুহূর্ত অল্প সময়ের মধ্যেই সারা দুনিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে। ইউক্রেন ইস্যুতে বিপাকে পড়েছে ইউরোপ। তারা ইউক্রেন ইস্যুতে লন্ডনে রোববার একটি শীর্ষ সম্মেলনে বসেন। যা প্রতিনিধিত্ব করেছে বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার। সেখানে ইউক্রেন সংঘাত থামাতে প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি এবং স্থায়ী নিরাপত্তার জন্য কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে রাজি করানো যায় সেটা নিয়ে আলোচনা করেন। যদিও জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের ওই উত্তেজিত মুহূর্ত তৈরি হওয়ার আগেই সম্মেলনটি নির্ধারণ করা হয়। শীর্ষ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্টারমার বলেছেন, বিশ্ব এখন ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। এ পরিস্থিতিতে এমন একটি পথের প্রয়োজন যা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে উপস্থাপন করা যায়। 

mzamin

No comments

Powered by Blogger.