মিশিগানে মুসলিম ফ্যাক্টর কমালার পক্ষে মিশেল

আর বাকি ৮ দিন। এরপরই যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এতে ‘নেক-টু-নেক’ বা সমানে সমানে টক্কর দিচ্ছেন ডেমোক্রেট কমালা হ্যারিস ও রিপাবলিকান ডনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু গাজা যুদ্ধ পাল্টে ফেলতে পারে নির্বাচনের গতিপথ। কারণ, ওই যুদ্ধের কারণে অনেক মুসলিম বর্তমান শাসকগোষ্ঠী ডেমোক্রেটদের পছন্দ করছে না। বিশেষ করে মিশিগানে এক র‌্যালিতে মুসলিম নেতারা মঞ্চে উঠে ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছেন। তাদের যুক্তি গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে জো বাইডেনের সরকার। সেই ক্ষোভ থেকে তারা ট্রাম্পকে বেছে নিয়েছেন। মিশিগান অন্যতম একটি সুইং স্টেট। সেখানে শনিবার রাতে এক র‌্যালিতে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন আরব-আমেরিকান বা মুসলিম ভোটাররা এবারের নির্বাচনকে যেকোনো দিকে ঘুরিয়ে দিতে পারেন। মিশিগানের নোভি’তে এক র‌্যালিতে তার সঙ্গে যুক্ত হন আরব-আমেরিকান ও মুসলিম সম্প্রদায়ের বেশ কিছু নেতা। তারা ট্রাম্পের সঙ্গে একই মঞ্চে উঠে তাকে সমর্থন দেন। এই রাজ্যটি কোনো দলকে বিশেষ করে সমর্থন করে না। তারা ট্রাম্পকেও সমর্থন করে না। কিন্তু এবারের নির্বাচনে তারা কমালা হ্যারিসকে সমর্থন দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। কারণ, গাজা যুদ্ধে যে ধ্বংসযজ্ঞ এবং গণহত্যা দেখছে বিশ্ব, কমালা হ্যারিসের দল বা তার প্রেসিডেন্ট বা প্রশাসন তা বন্ধে ব্যর্থ হয়েছে। পক্ষান্তরে ইসরাইলকে তারা অস্ত্র সরবরাহ দিয়ে গেছে। ঠিক এই রাজ্যে একই রাতে কমালা হ্যারিসের পক্ষে প্রচারণায় নেমেছেন সাবেক ফার্স্টলেডি মিশেল ওবামা। তিনি নারীদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে অগ্নিঝরা ভাষণ দেন। তিনি পুরুষ ভোটারদের প্রতি সরাসরি আহ্বান জানান ‘আমাদের জীবনকে সিরিয়াসলি নিন’। কমালা হ্যারিসের প্রচারণায় এটাই তার প্রথম উপস্থিতি। মিশেল বলেন, যদি আমরা এই দেশটাকে সাহায্য করতে চাই তাহলে ঘৃণা এবং বিভক্তির রাজনীতির পৃষ্ঠাটাকে উল্টে ফেলতে হবে। ওদিকে জাতীয় পর্যায়ে জনমত জরিপে গড় সমর্থনে দুই প্রার্থীর মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া গেছে। তাতে দেখা গেছে, কমালা হ্যারিস তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে সামান্য এগিয়ে আছেন। কমালাকে সমর্থন করছেন শতকরা ৪৮ ভাগ ভোটার। ট্রাম্পকে সমর্থন করছেন ৪৭ ভাগ। আগস্টের শেষের দিকে ট্রাম্পের চেয়ে কমালা এগিয়ে ছিলেন চার পয়েন্টে। কিন্তু সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সেই ব্যবধান ক্রমশ সংকীর্ণ হচ্ছে। পুরুষদের মধ্যে জনপ্রিয়তায় অনেকটাই এগিয়ে আছেন ট্রাম্প। অন্যদিকে নারী ভোটাররা বলেছেন, তারা কমালা হ্যারিসকে পছন্দ করেন। তবে তাদের ব্যবধান খুব কম। রাজনীতিতে এই লিঙ্গগত ব্যবধান যুক্তরাষ্ট্রের এবারের নির্বাচনে বড় রকমের প্রভাব ফেলতে পারে। কমালা হ্যারিস গত মাসে সিএনএন’কে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। এর কারণ আমি বিশ্বাস করি জাতি ও লিঙ্গভেদ উপেক্ষা করে সব মার্কিনির জন্য এই মুহূর্তে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনের জন্য আমিই সেরা ব্যক্তি। তবে নভেম্বরের নির্বাচনে কয়েকটি ফ্যাক্টর বড় হয়ে দেখা দিতে পারে। তার মধ্যে গাজা যুদ্ধ, লেবানন যুদ্ধ, ইরানের সঙ্গে ইসরাইলের সংঘাতময় পরিস্থিতি অন্যতম। এর প্রভাব পড়তে পারে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী মুসলিমদের মধ্যে। নারী ও পুরুষ লিঙ্গগত ব্যবধানও এক্ষেত্রে বড় হয়ে দেখা দিতে পারে। বিবিসি’র যুক্তরাষ্ট্র বিষয়ক স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট কেটি কে মনে করছেন নভেম্বরের এই নির্বাচন হয়ে উঠেছে লিঙ্গগত আদর্শের গণভোট। বিষয়টি নিয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামাজিক মাধ্যমে বেশ আলোচনা হয়েছে। ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় পডকাস্টের অন্যতম দ্য জো রোগান শো। এতে ডনাল্ড ট্রাম্পের একটি সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। সেখানে তিনি স্বীকার করেন যে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার সবচেয়ে বড় ভুল ছিল কিছু মানুষকে তার সরকারে নেয়া। এসব মানুষকে দায়িত্বে নেয়া উচিত হয়নি।
mzamin

No comments

Powered by Blogger.