রংপুর রণক্ষেত্র, কাউন্সিলরসহ নিহত ৪, আহত শতাধিক

রংপুরে শিক্ষার্থী ও আওয়ামী লীগের ভয়াবহ সংঘর্ষে আওয়ামী-যুবলীগ ও ছাত্রলীগ, সিটি কাউন্সিলরসহ ৪ জনকে পিটিয়ে হত্যা করেছে আন্দোলনকারীসহ বিক্ষুব্ধ জনতা। উত্তাল রংপুর, মাঠ এখন রণক্ষেত্র। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচি চলাকালীন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ চলাকালীন সময় আওয়ামী লীগের যুবলীগ-ছাত্রলীগের ক্যাডাররা দেশীয় অস্ত্র, ছোরা, তলোয়ার, এসএস পাইপসহ পিস্তল নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে গুলি চালায়। তাদের গুলিতে এক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হলে নিয়ন্ত্রণহীন শিক্ষার্থীরা বেপরোয়া হয়ে পাল্টা ধাওয়া করে দু’জন যুবলীগ-ছাত্রলীগ কর্মীকে আটক করে পিটিয়ে হত্যা করে। এর পরপরই আওয়ামী লীগ নেতা, রংপুর সিটি করপোরেশনের ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হারাধন রায় ও ভাগ্নেকে ঘেরাও করে বিক্ষুব্ধ জনতা পিটিয়ে হত্যা করে। এ সংঘর্ষে আহত শতাধিক। নিহত দু’জনের লাশ রংপুর মেডিকেল হাসপাতালে পড়ে আছে। অপর দু’জনের লাশ নগরীর পায়রা চত্বরে পড়ে রয়েছে। ব্যাপক সংঘর্ষ হলেও নগরীর কোথাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, সেনবাহিনীসহ প্রশাসনের কাউকে দেখা যায়নি।

সরজমিন দেখা যায়, সকাল থেকে রংপুর টাউন হলের সামনে আন্দোলনকারীরা আসতে শুরু করে। মুহূর্তের মধ্যে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের উপস্থিতিতে রাজপথ মহাসমুদ্রে পরিণত হয়। শান্তিপূর্ণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালীন একঘণ্টার মধ্যে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষার্থী সেখানে জমায়েত হয়ে সরকারের পতনে একদফা দাবিতে নানা স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় দেখা যায় শিক্ষার্থীরা তাদের ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ডে লেখা “মোদির পোষা হাসিনা, আমরা তোমায় মানি না” সেই সঙ্গে “আর কোনো আপস নাই খুনী স্বৈরাচার হাসিনার পদত্যগ চাই” “একদফা আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষজন। আন্দোলন চলাকালীন বেলা ১১টায় আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কাশেম, তুষার কান্তি মণ্ডলের নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্র ও পিস্তল নিয়ে ৭-৮শ’ নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে একটি পক্ষ সামনের দিকে এগুতে থাকে। এ সময় আন্দোলনকারীরা তাদের আসতে দেখে প্রতিহত করার উদ্যোগ নিলে সংঘর্ষে নগরীর সিটি করপোরেশন এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পিস্তল দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি ছুঁড়লে একজন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে আন্দোলনকারীরা ঝাঁপিয়ে পড়ে আওয়ামী-যুবলীগ-ছাত্রলীগের ওপর। ধাওয়া করে একে একে ৪ জনকে পিটিয়ে হত্যা করে। বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলছিল। এ সময় দু’পক্ষেরই কমপক্ষে ১০০ জন আহত হয়। শিক্ষার্থী মৌমিতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের এখন আলোচনায় বসতে বলতেছেন। তার বাবা তো আলোচনায় বসেননি। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমার ভাইয়ের লাশের উপর দিয়ে আলোচনায় বসতে পারবো না। তাই আর কোনো আলোচনা নয়, বর্তমান সরকারের পদত্যাগ চাই। শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবির উপর ভর করে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করছে। আমি প্রশাসনের ভাইদের বলবো অনেক হয়েছে। দালালি করেছেন এখন বাঁচতে চাইলে আপনারা নিরপেক্ষ থাকেন। কারণ যারা আন্দোলনে রয়েছে তারা আপনার ভাই-বোন। তাদের ওপর গুলি করবেন না।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্বশুরবাড়ি এলাকা পীরগঞ্জে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। এ ছাড়াও পীরগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে ১২টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.