জনগণের ভয় ভেঙেছে -আলী রীয়াজ
দেশের চলমান সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে এ বিষয়ে ইলিয়ন স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ডিস্টিঙ্গুইশড অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজের সঙ্গে কথা বলেছে ভারতীয় গণমাধ্যম স্ক্রল ইন। অধ্যাপক রীয়াজ আওয়ামী লীগের কর্তৃত্ববাদী শাসন এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতার চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিশদভাবে কথা বলেছেন।
স্ক্রল ইন: আমরা কয়েক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশ থেকে কিছু অবিশ্বাস্য এবং করুণ দৃশ্য দেখেছি। আপনি কী এই কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণ ব্যাখ্যা করবেন: আন্দোলনের প্রেক্ষাপট এবং বর্তমান পরিস্থিতি? হঠাৎ এই ছাত্র-জনতার বিস্ফোরণের কারণ কী?
আলী রীয়াজ: সবার আগে আমাদের বুঝতে হবে গত কয়েক সপ্তাহে বাংলাদেশে দু’টি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এক্ষেত্রে আপনি প্রথমে যেটি উল্লেখ করেছেন তা হলো কোটা সংস্কার আন্দোলন। জুলাইয়ের শুরু থেকেই এই আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে আমি পরে ফিরে আসবো...১৬ই জুলাই থেকে বিক্ষোভের আরেকটি মাত্রা শুরু হয়েছে। যেটি বাংলাদেশে বর্তমান শাসনের বিরুদ্ধে বেশ জনপ্রিয় আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। যদিও দুটি পরিস্থিতি একই সময়ে উদ্ভূত কিন্তু এখানে ভিন্নতা রয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে কথা বললেও দুটি পরিস্থিতির ভিন্নতা আমাদের বুঝতে হবে।
বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে দীর্ঘদিন ধরে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। অর্থাৎ, সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ চাকরি কোটার ভিত্তিতে এবং বাকি ৪৪ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে। এই ৫৬ শতাংশের মধ্যে ৩০ শতাংশ প্রাথমিকভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। তারপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা দেখেছি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা মুক্তিযোদ্ধা এবং পরে তাদের উত্তরসূরি পর্যন্ত এই কোটার নিয়োগ পৌঁছেছে। ২০১০ সালে আসলে মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরসূরিদের তৃতীয় প্রজন্ম পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছিল। বাকি ২৬ শতাংশ কোটা নারী, আদিবাসী সম্প্রদায়, দুর্গম অঞ্চলের জনগণের জন্য সংরক্ষিত ছিল।
২০১৮ সালে কোটা সংস্কারের লক্ষ্যে একটি আন্দোলন হয়েছিল। সেটিও ছিল শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। মূলত ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাকে রাজনৈতিকভাবে দলীয়করণ হিসেবে দেখা হয়। অর্থাৎ যারা শাসনকে সমর্থন করে এই কোটার ভিত্তিতে তাদের নিয়োগ দেয় সরকার। সে সময় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একমত হয়ে পুরো কোটা ব্যবস্থা বাতিল করার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। এর কয়েক বছর পর মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের দাবিতে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আদালতে যান। যা এ বছরের জুনে, হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে ২০১৮ সালের কোটা ব্যবস্থা বাতিলের পরিপত্রকে বাতিল করে দেয়া হয়। মূলত হাইকোর্টের ওই রায়কে কেন্দ্র করেই ১লা জুলাই থেকে আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। সারা বাংলাদেশে শিক্ষার্থীরা আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ শুরু করে। তবে এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন বাধার সম্মুখীন হয়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালাতে শুরু করে সরকারের ছাত্র সংগঠন। এরপরেও এই আন্দোলনে অনেকটা শান্তি বজায় ছিল। কারণ ছাত্ররা সহিংসতার পথ পরিহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
তবে শেষ পর্যন্ত এই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ১২ই জুলাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করেন এবং কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভকারীদের ইঙ্গিত করে একটি মন্তব্য করেন, যার পর থেকেই আন্দোলন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
প্রশ্ন: তিনি কি রাজাকার বলেছিলেন নাকি পাকিস্তানি সেনাদের দোসর?
আলী রীয়াজ: হ্যাঁ, বিষয়টা এমনই। তার ওই মন্তব্যকে শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত অবমাননাকর ও আপত্তিকর বলে মনে করেছে। এরপর রাতেই ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। পরের দিন, সারা দেশে বিক্ষোভ আরও জোরালোভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়। পুলিশের গুলিতে একদিনে ছয় শিক্ষার্থী নিহত হন। এতেই মূলত আন্দোলনের দ্বিতীয় পরিস্থিতির সূচনা হয়। কার্যত এরপর থেকেই শিক্ষার্থীরা সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেয় দেশের সাধারণ নাগরিকরা।
এখানে বুঝতে হবে তাদের অভিযোগটা কি ছিল? বছরের পর বছর ধরে শিক্ষার্থীরা দেখেছে বাংলাদেশে উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, তবুও বেকারত্বের হার অনেক বেশি। অন্যদিকে তারা ব্যাপক দুর্নীতি দেখেছে। উদাহরণস্বরূপ, তারা দেখেছে যে, সাবেক পুলিশ প্রধান অবৈধভাবে প্রচুর সম্পদের মালিক হয়েছেন। দুর্নীতির দায়ে সাবেক সেনাপ্রধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।
প্রশ্ন: তাহলে কোটা সংস্কার আন্দোলন আওয়ামী সরকারের দীর্ঘ কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করেছিল?
আলী রীয়াজ: আমার সেটাই মনে হয়। এই কোটা সংস্কার আন্দোলন অন্যান্য রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যর্থতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ জাগিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশে তিনটি নির্বাচন হয়েছে, যাতে কারচুপির অভিযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে জনগণের ক্ষোভ প্রকাশের কোনো উপায় ছিল না। তাই কোটা আন্দোলন যখন রাজপথে ছড়িয়ে পড়ে তখনই এই মেলবন্ধন তৈরি হয়। কমবয়সী বাংলাদেশি এবং সর্বস্তরের জনগণ এই আন্দোলনে শরিক হয়েছে এবং দেশ একটি গণঅভ্যুত্থানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন প্রধানমন্ত্রী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছেন?
আলী রীয়াজ: না, আমি এমনটা মনে করছি না। দেশের ইন্টারনেট সেবা পুনরায় চালু হলেও তা এখনো সীমিত আকারে রয়েছে। প্রায় এক কোটি প্রবাসী দেশের বাইরে রয়েছেন। ইন্টারনেট না থাকায় তারা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। মূলত এই প্রবাসী আয় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিশাল অবদান রাখে। তাই তাদের উপেক্ষা করা যায় না। আন্দোলন দমাতে ছয় ছাত্রনেতাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের মধ্যে দু’জনকে হাসপাতাল থেকে তুলে নেয়া হয়েছে। পুলিশের দাবি তারা ছাত্রনেতাদের হেফাজতের জন্য তাদের জিম্মায় নিয়েছে। তবে পরিবারগুলোর দাবি তাদের ওই নেতাদের সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হয়নি। তাই এই হেফাজতের বিষয়টি জোরপূর্বকভাবে তুলে নেয়া হিসেবেই দেখা হচ্ছে। তবে তাদের তুলে নিয়েও আন্দোলন দমাতে পারেনি। অন্যান্য ছাত্রনেতারা আন্দোলন চালিয়ে নিয়ে গিয়েছেন।
এরপর শিক্ষার্থীরা নয় দফা দাবিতে তাদের আন্দোলন শুরু করে। তাদের নয় দফা দাবি ছিল: প্রধানমন্ত্রীর অবমাননাকর মন্তব্যের জন্য তাকে ক্ষমা চাইতে হবে এবং পদত্যাগ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ উপাচার্যদের পদত্যাগ ইত্যাদি। তাই এমন অনেক দাবি রয়েছে যা পূরণ হয়নি। তাই কয়েকজন ছাত্রনেতা যখন আন্দোলন প্রত্যাহার করে বিবৃতি দেন, তখন সকলের কাছে স্পষ্ট হয় যে, এটি স্বেচ্ছায় করা হয়নি।
আন্দোলন প্রত্যাহার করার পরও বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়েছে। অনেক শহরের ছাত্ররা যেখানে পারছে রাস্তায় নেমে এসেছে। যদিও কারফিউ শিথিল করা হয়েছে, আমরা জানি যে রাতের কারফিউ বাড়ি-ঘরে অভিযান চালানো এবং লোকদের গ্রেপ্তার করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। ইতিমধ্যে দশ হাজারের বেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের বেশির ভাগই তরুণ। তাই সরকার সবকিছু স্বাভাবিক বলে দাবি করলেও বাস্তবে স্বাভাবিকতা ফিরে আসেনি।
প্রশ্ন: শেখ হাসিনা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন তাতে তিনি তার অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ফলাও করে প্রচার করছেন। আপনি কি মনে করেন এই আন্দোলনকে টপকে যাওয়া তার জন্য কঠিন হবে?
আলী রিয়াজ: হ্যাঁ, ‘গণতন্ত্রের আগে উন্নয়ন’-এর যে আখ্যান তিনি প্রচার করেন তা এখন আর কাজ করবে না। আসলে এই আন্দোলন শুরু হওয়ার আগেই তার আখ্যান জনগণের কাছে উন্মোচিত হয়ে গিয়েছিল। এই আন্দোলন দানা বাধার পেছনে এটিও একটি কারণ। গত দুই বছরে দেশের অর্থনীতির যে হাল হয়েছে তাতে প্রধানমন্ত্রী হাসিনার উন্নয়নের আখ্যান যে একটি ফাঁপা দাবি ছিল তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। অধিকাংশ মানুষ এই তথাকথিত উন্নয়নের কোনো সুফল পাচ্ছে না বলে ক্ষোভ বিরাজ করছে। ফলে তার উন্নয়নের আখ্যান ভেসে গেছে। হাসিনার জন্য এটা কোনো বৈধ আদর্শ হতে পারে না। ২০১৪ সাল থেকে, এই সরকার তার নৈতিক বৈধতা হারিয়ে ফেলেছে; কারণ নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে তখন থেকেই। মূলত এই জালিয়াতি ঢাকতেই তারা অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফাঁকা বুলি প্রচার করেছে। কিন্তু এ বিষয়টি দ্রুতই জনগণের সামনে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। যার পরিণতি আমরা এখন রাজপথে দেখতে পাচ্ছি। সরকার পুলিশ, সেনাবাহিনী দিয়ে কারফিউ জারি রেখেছে।
সরকার যত বেশি দমনপীড়ন করবে ততই তারা জনগণের ক্ষোভের আগুনে জ্বলবে। ইতিমধ্যেই এই আন্দোলন এই শাসনের মূলকে নাড়িয়ে দিয়েছে। তবে এই আন্দোলন ক্ষমতার পরিবর্তন ঘটায় কিনা সেটি এখনো স্পষ্ট নয়। কিন্তু সেই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে শেখ হাসিনার ক্ষমতার ভিত্তি কী তা আমাদের বুঝিয়ে বলুন? দৃশ্যত অত্যন্ত অজনপ্রিয় হওয়া সত্ত্বেও তিনি কীভাবে ক্ষমতায় থাকবেন?
আলী রীয়াজ: সরকার ব্যবসায়ী এবং আমলাতন্ত্রের ওপর টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। যেখানে তারা একটি সুবিধাভোগী গোষ্ঠী তৈরি করেছে। আর তাদের ক্ষমতার গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হচ্ছে পুলিশ ও সামরিক বাহিনী। গোটা পুলিশ বাহিনী রাষ্ট্রের যন্ত্র না হয়ে ক্ষমতাসীন দলের দোসর হয়ে উঠেছে। এবং এই বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করতে, সরকারকে সেনাবাহিনীর ওপর নির্ভর করতে হয়েছে।
সরকার ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করে শাসন করছেন। ভয়ই হয়ে উঠেছে সবাইকে নিয়ন্ত্রণে রাখার যন্ত্র। মনে রাখবেন, বিগত এক দশকে, বাংলাদেশি রাষ্ট্র মানুষের উপর নজরদারি করার জন্য প্রচুর ক্ষমতা সঞ্চয় করেছে এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং গুম সহ বিভিন্ন ধরনের দমনমূলক ব্যবস্থা ব্যবহার করছে, তাই এই সমস্ত কিছু ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে যেভাবে খুশি সেভাবেই দেশ চালাচ্ছে।
এখন অবশ্য বাঁধ ভেঙে গেছে। জনগণের মন থেকে এই শাসনের ভয় কেটে গেছে। কারণ তরুণ বাংলাদেশিরা রাস্তায় নেমে তাকে চ্যালেঞ্জ করেছে। এই আন্দোলনের আগ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করা নিষিদ্ধ ছিল। কেউ শাসন, নির্বাচনী প্রক্রিয়া, ক্ষমতাসীন দলের সমালোচনা করলে সাধারণ জনগণ তা এড়িয়ে যেত। এখন সে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। এটাই এই আন্দোলনের বড় অর্জন। লোকেরা তাকে নাম ধরে চ্যালেঞ্জ করতে পারে, তাকে স্বৈরাচারী বলে ডাকতে পারে- যা আগে লোকেরা এড়িয়ে যেতেন।
প্রশ্ন: গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে অবিশ্বাস্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে যা বিশ্বের নজর কেড়েছে। আপনি কি মনে করেন যে এই ধরনের অস্থিতিশীলতা এখন এটিকে বিপন্ন করতে পারে?
আলী রীয়াজ: দেখুন, বাংলাদেশ যে ব্যাপক অর্থনৈতিক অগ্রগতি করেছে, সেই দাবিটি পুনর্বিবেচনা করা দরকার। এটি দুটি কারণে। প্রথমত- অনেক ক্ষেত্রে, অর্থনৈতিক তথ্য তৈরি করা হয়েছে। সরকার, অন্য যেকোনো স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থার মতো, প্রজেক্ট করার চেষ্টা করেছিল যে, তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তাদের কৃতিত্ব। আমরা জানি, কর্তৃত্ববাদীরা পরিসংখ্যান পছন্দ করে। তার মানে কী কোনো অগ্রগতি হয়নি? না এটা সত্য না। হয়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। কিন্তু সেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সমবণ্টন হয়নি। ফলে এই সরকারের অধীনে অর্থনৈতিক বৈষম্য বেড়েছে। এই সরকারের আমলে আমরা নিরবচ্ছিন্ন দুর্নীতি দেখেছি, আমরা পুঁজির উড্ডয়ন দেখেছি, আমরা দেখেছি শাসনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা তাদের ঋণখেলাপি এবং অর্থ ফেরত দিচ্ছেন না, বিশাল অবকাঠামো প্রকল্পগুলো ব্যয়ের দিক থেকে আকাশচুম্বী হয়েছে।
প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সমপ্রদায় যথেষ্ট কাজ করেছে?
আলী রীয়াজ: না, আমি তা মনে করি না। এখানে তারা গণতন্ত্রকে পেছনে ফেলেছে। উদাহরণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কথাই ধরা যাক। ২০২১ সাল থেকে তারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের কথা বলে আসছে। আমরা বাংলাদেশ সরকারের ওপর এই ব্যাপক বাগাড়ম্বরপূর্ণ চাপ দেখেছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের কথা এলে তারা চুপ হয়ে যায়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্ষেত্রেও তাই। মানবাধিকারের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও তারা আসলে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এক্ষেত্রে তারা কঠোরের পরিবর্তে নমনীয় ছিল।
এই বিষয়ে পশ্চিমাদের চিন্তাভাবনা হচ্ছে হাসিনাকে গণতন্ত্রের প্রশ্নে খুব বেশি চাপ দেবেন না; কারণ তখন তিনি চীনের সঙ্গে মিত্রতা করবেন। আমি মনে করি এটি একটি মূর্খতা। আপনি যদি গত ১০ বছরের দিকে তাকান, হাসিনাকে ঠেলে দেয়ার জন্য পশ্চিমাদের অলসতা সত্ত্বেও তিনি চীনের আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছেন। বাংলাদেশে বেইজিংয়ের অর্থনৈতিক পদচিহ্ন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের নিষ্ক্রিয়তার সবচেয়ে বিরক্তিকর দিকটির জন্য আমি ভারতকে সবার আগে যুক্ত করতে চাই। কারণ বাংলাদেশে কী ঘটছে তা জানা সত্ত্বেও একটি অগণতান্ত্রিক শাসনকে লাগাতার সমর্থন দিচ্ছে দিল্লি। ভারতের ব্যবসায়িক স্বার্থ এবং আঞ্চলিক আধিপত্য বজায় রাখতে তারা এই শাসনকে প্রতিষ্ঠিত রাখতে চায়। কিন্তু, আমার মতে, ভারতের এই আচরণের কারণে বাংলাদেশে ভারত বিরোধিতা আরও প্রকট হচ্ছে।
No comments