মা চেয়েছিলেন মেয়ে কোনো ধনী পরিবারে বড় হোক

পারিবারিক অশান্তির কারণে মেয়েকে নিজের কাছে রাখতে চাইছিলেন না মা রিমু আক্তার। কয়েকবার দত্তক দেওয়ারও চেষ্টা করেছেন, কিন্তু সফল হননি। শেষ পর্যন্ত গত বৃহস্পতিবার মেয়েটিকে সাজিয়ে-গুছিয়ে একটি বাসার ফটকের সামনে ফেলে রেখে চলে যান তিনি। শিশুটি যেন কোনো ধনী পরিবারের সন্তান হিসেবে বড় হয়, সে কারণেই এই কাজ করেছেন তিনি।
পঞ্চগড়ের কামাতপাড়া এলাকা থেকে নবজাতকটিকে কুড়িয়ে পাওয়ার তিন দিন পর আজ সোমবার মা রিমু আক্তারকে খুঁজে পেয়েছে পুলিশ। আজ দুপুরে তাঁকে প্রথমে পঞ্চগড় পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। পরে তাঁকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বিকেলে সদর উপজেলার ভীতরগড় এলাকার বাসিন্দা আইবুল ইসলাম এবং শিল্পী বেগমকে (রিমুর বাবা-মা) জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ডেকে এনে রিমুর পরিচয় নিশ্চিত হয় প্রশাসন। পরে প্রশাসনের কাছে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে এসব কথা জানান রিমু।
এরপর বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে পুলিশি হেফাজতে রিমুকে পঞ্চগড় সদর হাসপাতালের শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মেয়েকে বুকের দুধ খাওয়ান তিনি। এ সময় চার বছর বয়সী ছেলে সেজানও তাঁর সঙ্গে ছিল।
কেন নিজের মেয়েকে ফেলে রেখে গেছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে রিমু বলেন, ‘পারিবারিক যন্ত্রণা আর অশান্তি থেকে রেহাই পেতে মেয়েটিকে ফেলে রেখে গিয়েছি। চেয়েছিলাম শিশুটি কোনো ধনী পরিবারে বড় হোক। তাই একজন বড়লোকের বাড়ির সামনে ফেলে রেখে গিয়েছিলাম।’ ফেলে যাওয়ার দিন মেয়েটির বয়স ১২ দিন ছিল বলেও জানান তিনি।
তবে মায়ের খোঁজ পেলেও এখনই নবজাতকটিকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। নানা-নানি ও মায়ের সঙ্গে নবজাতকটিকে আরও কিছুদিন হাসপাতালের শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রেই রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ। শিশুটির মায়ের কথাবার্তা অসংলগ্ন মনে হওয়ার তাঁরও চিকিৎসা করা হবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন সূত্র। পরবর্তী সময়ে রিমুর অবস্থা স্বাভাবিক হলে তাঁর কাছে শিশুটিকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
পঞ্চগড় সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত ) জামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আজ দুপুরে পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলার মালিগাঁও এলাকার আবদুল খালেকের বাড়ি থেকে রিমু আক্তারকে উদ্ধার করা হয়। গত শুক্রবার চার বছরের ছেলেকে নিয়ে ঠাকুরগাঁও রেলস্টেশনে রিমুকে কান্নাকাটি করতে দেখেন আবদুল খালেক ও তাঁর স্ত্রী আমেনা বেগম। পরে তাঁরা শিশুটিসহ রিমুকে বাড়ি নিয়ে আসেন। পরে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) একজন সদস্যের মাধ্যমে আটোয়ারী থানায় খবর দেন আবদুল খালেক। খবর পেয়ে পুলিশ সোমবার রিমু আক্তারকে ওই বাড়ি থেকে উদ্ধার করে পঞ্চগড় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে আসে।
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন প্রথম আলোকে বলেন, রিমু আপাতত তাঁর বাবা-মায়ের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালের শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রেই শিশুটির দেখাশোনা করবেন। তাঁর কথাবার্তা অসংলগ্ন মনে হওয়ায় তাঁরও চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। পরবর্তী সময়ে পুলিশের প্রতিবেদন ও তাঁর আচরণের ওপর নির্ভর করে শিশুটিকে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে পঞ্চগড় শহরের কামাতপাড়া এলাকায় এক ব্যবসায়ীর বাড়ির ফটকের সামনে পড়ে থাকা অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। পরে শিশুটিকে পঞ্চগড় সদর হাসপাতালের শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি করে জেলা প্রশাসন। সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে শিশুটির যাবতীয় খরচ পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালে অসুস্থ শিশুদের নিয়ে আসা মায়েরাই ওই শিশুটিকে ধারাবাহিকভাবে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছিলেন। পরে স্থানীয় লোকজনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী শিশুটির মা রিমু আক্তারকে খুঁজতে শুরু করে পুলিশ।
গত বৃহস্পতিবার পঞ্চগড়ের কামাতপাড়া এলাকায় এক ব্যবসায়ীর বাড়ির ফটকের সামনে থেকে উদ্ধার করা হয় নবজাতকটিকে। ছবি: প্রথম আলো

No comments

Powered by Blogger.