বিহারি ক্যাম্পে ত্রিমুখী সংঘর্ষ, গুলিতে চোখ গেল যুবকের, আহত ৭০

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বিহারি ক্যাম্পে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নকে কেন্দ্র করে ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সকালে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) সদস্যরা ক্যাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গেলে এ ঘটনা ঘটে। বিহারি ক্যাম্পের বাসিন্দারা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নের বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা আছে ডিপিডিসির সদস্যদের জানালে তারা তা আমলে নেননি। এসময় ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মিজানুর রহমান মিজান তার লোকজন নিয়ে ক্যাম্পে উপস্থিত হন। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করতে ডিপিডিসি কর্মীদের সহযোগিতা করেন। তখন বিহারিরা বিক্ষোভ শুরু করলে মিজানের লোকজনও পাল্টা বিক্ষোভ করেন। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সময় পুলিশ সেখানে উপস্থিত হলে পুলিশের ওপর ইট পাটকেল ছুড়তে থাকেন ক্যাম্পের বাসিন্দারা।
পরে পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়ে এবং লাঠিচার্জ করে। এসময় কে বা কারা পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন দেয়। পুলিশের রাবার বুলেটে রকি নামে এক যুবকের চোখে লাগে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওই যুবকের চোখ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সংঘর্ষে পুলিশসহ ৭০ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ৭ জনকে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশের টানা ৩ ঘণ্টার চেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, দুপুর ১২ টার দিকে ঢাকার মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন করতে যান ডিপিডিসির লোকজন। এ সময় বিহারিরা সংস্থাটির সদস্যদের হাইকোর্টের একটি আদেশ দেখান। সেই আদেশে ত্রাণ মন্ত্রণালয় তাদের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেন উল্লেখ রয়েছে বলে জানান বিহারিরা। পরে কাউন্সিলর মিজানুর রহমান মিজান ঘটনাস্থলে গেলে বিহারীদের সঙ্গে বাক-বিতন্ডা হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ক্যাম্পের মোস্তাকিম কাবাব রেস্টুরেন্টের পাশে বিহারীদের সঙ্গে কাউন্সিলরের লোকজনদের সংঘর্ষ বাঁধে। এসময় বিহারী ও কাউন্সিলরের সমর্থকরা বেশ কয়েক জায়গায় টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে পুলিশ ও কাউন্সিলরদের লোকজন বিহারিদের ধাওয়া দেয়। এতে ত্রিমুখী সংঘের্ষর ঘটনা ঘটে। দুপুর ৩ টা পর্যন্ত ছয়দফা সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের পুলিশসহ ৭০ জন আহত হন।
উর্দু স্পিকিং পিপলর্স ইউথ রিহাবিল্যাট্যাসান মুভমেন্টের সভাপতি সাদাকাত খান ফাক্কু জানান, বিহারি ক্যাম্পে ঘন ঘন বিদ্যুৎ যায়। বিষয়টি বিদ্যুৎ বিভাগকে একাধিকবার জানালেও কোন কাজ আসেনি। আদালতের একটি নির্দেশনা আছে যে, দেশের ৭০ টি বিহারি ক্যাম্পের বিদ্যুতের বিল দিয়ে থাকেন ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
স্থানীয় বিহারি ক্যাম্পের বাসিন্দা জুয়েল জানান, পরিকল্পিতভাবে বিহারিদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। ডিপিডিসির লোকজন বিদ্যুৎ বিছিন্ন করতে আসলেই স্থানীয় কাউন্সিলর ঘটনাস্থলে তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে হাজির হন। তিনি তার লোকজনকে সেখানে উস্কানি দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ কাউন্সিলদের পক্ষ নিয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন।
তবে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমান মিজান সাংবাদিকদের বলেন, প্রতি মাসে এক কোটি ২০ লাখ টাকার বিদ্যুৎ খরচ হয় জেনেভা ক্যাম্পে। ত্রাণ মন্ত্রণালয় বিদ্যুৎ বিল না দেয়ায় মোটা অঙ্কের টাকা বকেয়া হয়েছে, ফলে এলাকায় বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। আমরা ডিপিডিসির লোকজনকে জানালে তারা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য গেলে বিহারিরা তাদের ওপর হামলা চালায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মো. আলাউদ্দিন জানান, সংঘর্ষে আহত রকির শরীরে ও ডান চোখে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। চোখের অবস্থা খুবই গুরুতর। তাকে চক্ষু বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবে আপাতত দেখে মনে হচ্ছে, চোখটি নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি তার চিকিৎসায়। রকি জেনেভা ক্যাম্পের ৭ নম্বর সেক্টরে থেকে মোহাম্মদপুরের একটি মোটরসাইকেল গ্যারেজে চাকরি করেন।
তেজগাঁও বিভাগের ডিসি আনিসুর রহমান বলেন, সকাল থেকে ছয় দফা পুলিশের ওপর হামলা, পুলিশের গাড়ি ভাঙ্গচুরের দায়ে ক্যাম্পের ভিতরে তল্লাশি করে ৭ বিহারী যুবককে আটক করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।

No comments

Powered by Blogger.