সাতদিনেই পৃথিবীর সাত আশ্চর্য ঘুরে দেখলেন ব্রিটিশ পর্যটক

সাতদিনেই বিশ্বের সাত আশ্চর্যের সবই ঘুরে দেখার সাধ ছিল সায়মন উইলসন নামে ব্রিটিশ একজন পর্যটকের। আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি, নিজের সেই ইচ্ছে ঠিকই পূর্ণ করেছেন তিনি। পাঁচ মহাদেশের সাতটি আশ্চর্য উপভোগ করতে সব মিলিয়ে তার খরচ হয়েছে ৬ হাজার পাউন্ড (৬ লাখ ৩১ হাজার টাকা)।
ইউটিউব তারকা হিসেবে সায়মন উইলসনের পরিচিতি আছে। ইতালির রোমের কলোসিয়াম, মিসরের গিজার গ্রেট পিরামিড, জর্ডানের বিলুপ্ত নগরী পেত্রা, ব্রাজিলের ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার মূর্তি, মেক্সিকোর মায়া সভ্যতার বিস্ময়নগরী চিচেন ইৎজা, চীনের গ্রেট ওয়াল ও ভারতের তাজমহল ঘুরে দেখেছেন তিনি। এজন্য তার লেগেছে ছয় দিন, নয় ঘণ্টা, তিন মিনিট।
কলোসিয়ামে ব্রিটিশ পর্যটক সায়মন উইলসন
অনেকদিনের ইচ্ছেপূরণ হওয়ার পর যেন রাজ্যের ক্লান্তি এসে ভর করেছে সায়মনের ওপর। মেইল অনলাইন ট্রাভেলকে তিনি বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে ভালোভাবে ঘুমাইনি। এই কয়েকদিন শুধু উড়োজাহাজের খাবারই খেয়েছি।’
ওয়েলসের রেক্সহাম শহরের বাসিন্দা সায়মনের অনলাইন ফলোয়ার প্রচুর। সাত আশ্চর্য দেখতে বের হওয়ার সময় ব্যাগে ক্যামেরার যন্ত্রপাতি, কয়েকটি থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট ও দুটি টি-শার্ট নিয়েছেন তিনি।
পিরামিডের সামনে ব্রিটিশ পর্যটক সায়মন উইলসন
গত ২৮ জুলাই ভোর ৪টা ৪৫ মিনিটে ম্যানচেস্টার বিমানবন্দর থেকে রোমের উদ্দেশে সায়মনের মহাকাব্যিক যাত্রা শুরু হয়। গ্ল্যাডিয়েটরদের স্মৃতিবিজড়িত কলোসিয়াম দুই ঘণ্টা ঘুরে দেখার পরই তাকে রওনা দিতে হয়েছে মিসরের পথে। সেখানেও বেশি সময় মেলেনি। হোটেলে পাঁচ ঘণ্টা থাকার পর গিজায় পিরামিড দেখতে বেরিয়ে পড়েন তিনি।
পেত্রা সবচেয়ে প্রিয় ব্রিটিশ এই ভ্রমণপ্রেমীর
জর্ডানের পেত্রায় প্রত্নতাত্ত্বিক বিস্ময় দেখে মুগ্ধ হন সায়মন। জর্ডানের দক্ষিণ পশ্চিমে ওয়াদি মুসার পূর্বে হুর পাহাড়ের পাদদেশে খ্রিস্টপূর্ব ৩১২ সনে নাবাতাইন রাজ্যের রাজধানী হিসেবে গড়ে ওঠে পেত্রা। হলিউডের ‘ইন্ডিয়ানা জোন্স অ্যান্ড দ্য লাস্ট ক্রুসেড’ (১৯৮৯) ছবির শুটিং হয়েছে সেখানে।
জর্ডানে ৪১ পাউন্ডের বিনিময়ে একটি গুহায় রাতে থাকার জায়গা ভাড়া নেন সায়মন। তার কথায়, ‘পেত্রা সবচেয়ে ভালো লেগেছে। এটি এককথায় চোখধাঁধানো। আর গুহায় আমার সেরা রাত কেটেছে বলবো।’
তাজমহলে তীব্র গরম ভুগিয়েছে এই ভ্রমণপিপাসুকে
চতুর্থ দিনে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সমাধি তাজমহলে যেতে দুটি ফ্লাইট ও চার ঘণ্টা ক্যাবে চড়তে হয়েছে সায়মনকে। তবে সেখানকার গরম (৪২ সেন্টিগ্রেড) বেশ ভুগিয়েছে তাকে। তিনি বলেন, ‘গ্রীষ্মকালে অনেক উষ্ণ দেশে বেড়িয়েছি। কিন্তু এমন দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো গরম কোথাও লাগেনি। একঘণ্টা ধরে ঘেমে ভিজে গিয়েছিলাম। এ কারণে অসুস্থ লাগছিল।’
চীনের গ্রেট ওয়ালে পর্যটক সায়মন উইলসনের সেলফি
২২ বছর ধরে তাজমহল বানাতে কাজ করেছে ২০ হাজার শ্রমিক। তবে সায়মন সেখানে ছিলেন মাত্র একঘণ্টা! এরপর একটি ফ্লাইটে ও ১২৫ পাউন্ডের রিটার্ন ক্যাব রাইডে চড়ে চীনের গ্রেট ওয়ালে পৌঁছান তিনি। এর মোট দৈর্ঘ্য ২১ হাজার ১৯৬ কিলোমিটার।
চিচেন ইৎজার সামনে ব্রিটিশ এই ভ্রমণপ্রেমী
চীন থেকে সায়মন পাড়ি জমান মেক্সিকোর চিচেন ইৎজায়। সবশেষে ব্রাজিলের রিও ডি জানেইরোতে দাঁড়িয়ে থাকা ক্রাইস্ট দ্য রিডিমারের সামনে গিয়ে সাত আশ্চর্যের সবই দেখার আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হয় তার। ৪ আগস্ট ম্যানচেস্টারে বাড়ির পথে রওনা দেন তিনি। এ যাত্রায় তাকে পাড়ি দিতে হয়েছে ৯ হাজার ৩০০ মাইল।
ক্রাইস্ট দ্য রিডিমারে যাওয়ার মাধ্যমে অসম্ভবকে সম্ভব করলেন ব্রিটিশ এই পর্যটক
পর্যটক সায়মন উইলসনের যাত্রাপথ
প্রথম দিন: যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার থেকে কলোসিয়াম (১ হাজার ৩০০ মাইল)
দ্বিতীয় দিন: ইতালির রোম থেকে গিজার পিরামিড (১ হাজার ৪৬৮ মাইল)
তৃতীয় দিন: মিসর থেকে পেত্রা (৪৭০ মাইল)
চতুর্থ দিন: জর্ডান থেকে তাজমহল (২ হাজার ৫০০ মাইল)
পঞ্চম দিন: ভারতের দিল্লি থেকে গ্রেট ওয়াল (২ হাজার ২৭০ মাইল)
ষষ্ঠ দিন: চীনের বেইজিং থেকে চিচেন ইৎজা (৯ হাজার ৩৪০ মাইল)
সপ্তম দিন: মেক্সিকো থেকে ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার (৩ হাজার ৯০০ মাইল)
>>>সূত্র: মেইল অনলাইন ট্রাভেল

No comments

Powered by Blogger.