যেভাবে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন

যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্র্রাট। চাঁদাবাজি, টেন্ডার বাণিজ্য, ক্যাসিনোকাণ্ড, মাদক ব্যবসাসহ অসংখ্য অভিযোগ তার নামের পাশে। সম্প্রতি ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকে আলোচনায় তিনি। ক্যাসিনো ডনদের গ্রেপ্তারের পর তাদের মুখ থেকে গডফাদার হিসেবে আসে তার নাম। দুই যুগ আগে সাধারণ ওয়ার্ড নেতা হিসেবে আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে কাজ শুরু করেন সম্রাট। সম্রাটের বেড়ে ওঠা মতিঝিল আর রমনা এলাকায়। তার বাবা ছিলেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কর্মচারী। তিন ভাইয়ের মধ্যে সম্রাট দ্বিতীয়।
এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় সম্রাটের রাজনৈতিক জীবন শুরু। সেটা ১৯৯০ সাল। সেই সময় তিনি ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে রমনা অঞ্চলে সংগঠকের দায়িত্বে ছিলেন। এ কারণে তখন নির্যাতনসহ জেলও খাটতে হয় তাকে। এরপর থেকেই ‘সম্রাট’ খ্যাতি পান কর্মী সমর্থকদের কাছ থেকে। ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাটের পৈত্রিক নিবাস ফেনীর পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের পূর্ব সাহেবনগর গ্রামে। ১৯৯১ সালে ছাত্রলীগে থাকা অবস্থায় এরশাদের পতনের পর ক্ষমতায় আসে বিএনপি সরকার। সে আমলে সম্রাটের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যুবলীগের একজন প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিতি পান তিনি। ১/১১-এর রাজনৈতিক  প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সময় সম্রাট যুবলীগের প্রথমসারির নেতা ছিলেন। ১৯৯৩ সালে ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পান সম্রাট।

ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন সম্রাট। নিজের ওয়ার্ড সভাপতি লুৎফুর রহমানকে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। কিন্তু ওই ঘটনায় সম্রাটসহ তিনজনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হলেও পরে তা আর বাস্তবায়ন হয়নি। তবে তারপর থেকে মতিঝিলের ক্লাব পাড়ায় সম্রাটের দাপট বেড়ে যায়। যুবলীগের এক নেতা জানান, ২০০৩ সালে যুবলীগের কাউন্সিলে জাহাঙ্গীর কবীর নানক ও মির্জা আজম দায়িত্ব পাওয়ার পর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সম্রাটের আসা-যাওয়া বেড়ে যায়। তখনই ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পান মহিউদ্দিন মহি এবং সাধারণ সম্পাদক হন নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন। সে সময় মহির সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে শাওন নিজের হাত শক্ত করতে সম্রাটকে দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক করেন। শাওনের বিশ্বস্ত হিসেবেই সম্রাট আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সাল থেকে ঢাকা সিটি কর্পোরশনের দরপত্র নিয়ন্ত্রণ করতেন। ২০১২ সালে ওমর ফারুক চৌধুরী যুবলীগের চেয়ারম্যান হওয়ার পর সম্রাট ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি হন। সভাপতির দায়িত্ব নেয়ার পর আরমানকে সহ-সভাপতি করে নেন তিনি। আরমান কখনোই আওয়ামী লীগের কোনো অঙ্গ সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সম্রাটের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত যুবলীগ নেতা আরমানও দীর্ঘদিন ধরে ক্যাসিনো কারবারে জড়িত। সূত্র জানায়, সম্রাটের চাঁদাবাজির হাতেখড়ি ২০০১ সালে। সংগঠন চালানোর নামেই চাঁদাবাজিতে নামে তিনি। এ সময় বিভিন্ন অফিসে, বিভিন্ন লোকের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন।

ব্যবসায়ীক মহলের যোগাযোগ গড়ে ওঠে তার। এক এগারোর সময় আওয়ামী লীগের সিনিয়র অনেক নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ট হন সম্রাট। এ সময় দল পরিচালনা করা, যুবলীগের ঢাকা মহানগরীকে ঠিক রাখার দায়িত্ব নেন সম্রাট। এরপর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে রাতারাতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট বড় ফ্যাক্টরে পরিণত হন। বিশেষ করে মতিঝিল পাড়ায় তার একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম হয়। দ্রুতই মতিঝিল পাড়া তার দখলে চলে যায়। এই সময়েই তার সঙ্গে সিঙ্গাপুরের কানেকশন হয়। সিঙ্গাপুরে ক্যাসিনো বাণিজ্য এবং নানারকম ব্যবসা বাণিজ্যের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। একদিকে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির কাঁচা টাকা অন্যদিকে সিঙ্গাপুরের হাতছানি দুইয়ে দুই মিলিয়ে সম্রাট নগরীতে আত্মপ্রকাশ করে। এরপর সবার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যান ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট। সম্রাট সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের চেয়ে অর্থ উপার্জনের দিকেই বেশি মন দেন। এজন্য গড়ে তোলেন ক্যাডার বাহিনী।

No comments

Powered by Blogger.