সোনিয়া গান্ধী ও মনমোহনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক: প্রিয়াংকার আপ্লুত আলিঙ্গন

দিল্লি সফরের বিদায়ী দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেছেন সর্ব-ভারতীয় কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধী ও ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। রোববার দিনের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর হোটেল স্যুটে প্রায় আধ ঘণ্টা স্থায়ী ওই বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে কথা বলেন তারা। বৈঠকে কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াংকা গান্ধী ভদ্র এবং দলটির গুরুত্বপূর্ণ নেতা আনান্দ শর্মাও উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই’র বরাতে এনডিটিভিসহ দিল্লির বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম বৈঠকের খবরটি প্রকাশ করেছে। তবে সেখানে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণভাবে স্থান পেয়েছে বৈঠকে উপস্থিত কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াংকা গান্ধি ভদ্রের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে ধরার সচিত্র টুইটটি। ওই ছবিকে ‘পিকচার অব দ্য ডে’ হিসাবেও আখ্যা দিয়েছে অনেক সংবাদ মাধ্যম। পিটিআই’র খবরে বলা হয়েছে- ৬ই অক্টোবর কংগ্রেস নেতারা বাংলাদেশের সরকার প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে তারা উভয় দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি কথা বলেন।
শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে প্রিয়াংকার আবেগাপ্লুত আলিঙ্গন সংক্রান্ত টুইট বার্তাটি হুবহু তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে প্রিয়াংকা লিখেন- ‘শেখ হাসিনাজির কাছ থেকে প্রতীক্ষিত আলিঙ্গন পেলাম। দীর্ঘদিন ধরে তার সঙ্গে পুনরায় সাক্ষাতের অপেক্ষায় ছিলাম। স্বজন হারানো ও প্রতিকূলতা মোকাবিলায় তার শক্তি এবং যা বিশ্বাস করেন তা অর্জনে সাহস ও অধ্যবসায়ের সঙ্গে লড়াইয়ের কারণে তিনি আমার বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য বড় অনুপ্রেরণা।’ দিল্লির সংবাদ মাধ্যম এআনআই’র খবরে কংগ্রেস দলের দায়িত্বশীল সূত্রের বরাতে বলা হয়- পার্টি সূত্র এএনআইকে বলেছে, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়েও শেখ হাসিনার সঙ্গে কংগ্রেস নেতাদের আলোচনা হয়েছে। এএনআই’র রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়- বাংলাদেশে একটানা সবচেয়ে বেশি সময় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিত্ব হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০০৯ সালে দ্বিতীয় দফায় যখন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের প্রধান শেখ হাসিনা বাংলাদেশে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পান তখন ভারতে ছিল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীণ ইউপিএ জোটের সরকার। সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ২০১১ সালে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার দিন দিল্লি কাটিয়েছেন এক সরকারি সফরে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ভারতীয় চ্যাপ্টারের আয়োজনে অনুষ্ঠিত একটি সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসাবে অংশ নেয়া ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে দিল্লিতে দ্বিপক্ষীয় সফর করেন তিনি। সফরের তৃতীয় দিনে গত শনিবার দিল্লির ঐতিহাসিক হায়দারাবাদ হাউজে দুই প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। সেখানে দুই দেশের সম্পর্কের আগামীর ‘পথ নকশা’ সংক্রান্ত ৫৩ দফা যৌথ বিবৃতি, ৭টি চুক্তি-সমঝোতা এবং ৩টি উন্নয়ন প্রকল্পে যৌথ উদ্বোধন হয়।
শীর্র্ষ বৈঠকে বহুল প্রতীক্ষিত তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি সইয়ের তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জবাবে প্রধানমন্ত্রী মোদি ভারতের ফেডারেল সিস্টেমের প্রসঙ্গ টেনে তার সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত এটি নিষ্পত্তির বিষয়ে ফের আশ্বস্ত করেন। বৈঠকে তিস্তার অগ্রগতি না হলেও নাটকীয়ভাবে বাংলাদেশের ফেনী নদী থেকে ১.৮২ কিউসেক পানি ত্রিপুরার সাবরুম এলাকার জন্য ভারত প্রত্যাহার করতে পারবে মর্মে চুক্তি সই হয়। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের জন্য এই মুহুর্তের সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় আসামের নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে কোন কথা হয়েছে কি-না? তা যৌথ বিবৃতি বা দিল্লির বিদেশ মন্ত্রকের তরফে প্রচারিত কোন বার্তায় স্পষ্ট হয়নি। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব অবশ্য দিল্লিতে এ নিয়ে কথা বলেছেন। তার ভাষ্য মতে, নিউইয়র্কের পর দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। দিল্লির আশ্বাসে ভরসা রাখছে ঢাকা। তবে এনআরসি’র পরবর্র্তী ডেভেলপমেন্টের ওপরও নজর রাখবে বাংলাদেশ।

No comments

Powered by Blogger.