বরিস জনসনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে নতুন সংশয় by বেনজামিন কেনতিশ ও জন স্টোন

নতুন একটি চুক্তি অনুমোদনের জন্য পার্লামেন্টের সময় লাগলেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বৃটেনের বেরিয়ে যাওয়া বিলম্বিত হবে না বলে জানিয়েছে বৃটিশ সরকার। এর ফলে একটি ব্রেক্সিট চুক্তি সম্পাদনে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে নতুন করে সংশয় দেখা দিয়েছে। তার ব্রেক্সিট বিষয়ক মধ্যস্থতাকারী ডেভিড ফ্রস্ট এই সপ্তাহে ব্রাসেলসে আলোচনাকালে তথাকথিত ‘টেকনিক্যাল এক্সটেনশন’ (বা সময় বর্ধিতকরণ)-এর বিষয় উড়িয়ে দেন। দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফাঁস হওয়া একটি কূটনৈতিক মেমো দেখতে পেয়েছে, যেখানে এ কথা বলা হয়েছে।
যদি প্রধানমন্ত্রী ব্রাসেলসের সঙ্গে একটি নতুন চুক্তি করতে সক্ষমও হন তাহলেও তা অনুমোদন করাতে পার্লামেন্টের সময় শেষ হয়ে যাবে বলে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার বরিস জনসন দাবি করেছেন, ব্রাসেলসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার পক্ষের রিমেইনার’রা। তারা চাইছেন যাতে ব্রেক্সিট বন্ধ হয়ে যায়। এর মধ্য দিয়ে তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বৃটেনের একটি চুক্তিভিত্তিক বিচ্ছেদের সুযোগকে ধ্বংস করছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্ট স্থগিত করার পর হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি দিনে একটি চুক্তি অনুমোদন করানো অসম্ভব হবে বলে সতর্ক করছেন এমপিরা।
এতে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে যে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সরকার আলোচনা জোরালো করা সত্ত্বেও বৃটেন চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
ইনস্টিটিউট ফর গভর্নমেন্ট নামের থিংক ট্যাংক বলেছে, যথাসময়ের মধ্যে একটি চুক্তি পার্লামেন্টের জন্য অনুমোদন দেয়া হবে অত্যন্ত ‘ট্রিকি’ বিষয়। এতে বিরোধী লেবার দলের এমপিরা এই দাবি করে বসতে পারেন যে, নতুন একটি চুক্তির বিষয়ে দরকষাকষিতে ‘সিরিয়াস’ ছিলেন না জনসন। এর পরিবর্তে তিনি লোকজনকে এমন কথা বলবেন, যা তারা শুনতে চেয়েছিল।
ডাউনিং স্ট্রিট থেকে বলা হয়েছে, যদি এমপিদেরকে রাতভর কাজ করতেও হয় তবু ৩১শে অক্টোবরের মধ্যে একটি চুক্তি অনুমোদন করাতে হবে। আগামী সপ্তাহে চুক্তিবিহীন একটি ব্রেক্সিটের জন্য ব্যবসায়ী ও জনগণকে প্রস্তুত থাকার এক প্রচারণা শুরু হচ্ছে। ১০ কোটি পাউন্ডের এই কর্মসূচির নাম দেয়া হয়েছে ‘গেট রেডি’। বৃটেনে ফ্লু ভ্যাকসিন বা ফ্লুর টিকা শেষ হয়ে যেতে পারে এমন সতর্কতা দেয়ার পরে চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দেয়। এ অবস্থায় চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট আটকাতে এমপিরা শেষ পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। এ জন্য এই গ্রীষ্মের বিরতির পর আগামী সপ্তাহে যখন পার্লামেন্ট বসবে তখন তারা তাদের তৎপরতা শুরু করবেন। প্রধানমন্ত্রী জনসন সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে পার্লামেন্ট স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ৩১শে অক্টোবরের মাত্র দু’সপ্তাহ আগে তা আবার শুরু হবে। এতে বিরোধীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট নিয়ে। তবে শুক্রবার তারা একটি ধাক্কা খেয়েছেন। পার্লামেন্ট স্থগিতকরণকে অসাংবিধানিক আখ্যায়িত করার দাবি জানানো হয়েছিল। কিন্তু এদিন পার্লামেন্ট স্থগিতকরণ অব্যাহত থাকবে বলে আদালত রায় দিয়েছেন।
ওদিকে বরিস জনসন বলেছেন, তিনি চাইছেন একটি চুক্তির মধ্য দিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ুক বৃটেন। তিনি শুক্রবার অভিযোগ করেন, চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট থামাতে একদল এমপি চেষ্টা করছেন। এতে তার জন্য চুক্তি করা অনেক কঠিন হয়ে যাচ্ছে। জনসনের ভাষায়, আমার অনেক বন্ধু ও ইউরোপের অংশীদার যা মনে ধারণ করছেন তা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। তারা মনে করছেন, ব্রেক্সিট থামিয়ে দেয়া যাবে। তারা মনে করছেন, বৃটেনকে থামিয়ে রাখা যাবে পার্লামেন্ট ব্যবহার করে। আমাদের যে চুক্তি প্রয়োজন তারা আমাদেরকে সেই সুযোগটাকে কমিয়ে দিচ্ছেন।
মনে করা হচ্ছে যে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে ডেভিড ফ্রস্ট আশ্বস্ত করেছেন যে, এই চুক্তির বিষয়ে অবশ্যই একমত হতে হবে এবং তা ডেডলাইন ৩১ শে অক্টোবরের মধ্যে অনুমোদিত হতে হবে। যদিও বেশির ভাগ ভাষ্যকার আশা করেন যে, যেকোনো বড় সাফল্য আসতে পারে ১৭ই অক্টোবর ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের সামিটে। আর সেটা হতে পারে বৃটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করার ঠিক দু’সপ্তাহ আগে। ব্রাসেলকে ওই কূটনীতিক এটা নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে, ব্রেক্সিট চুক্তি অনুমোদন হতে পারে অক্টোবরের দ্বিতীয়ার্থে, যদিও জনসনের পার্লামেন্ট স্থগিত করার সিদ্ধান্তের কারণে ব্রেক্সিট নিয়ে বিতর্কের জন্য এমপিদের সময় কমিয়ে দেয়া হয়েছে।
কিন্তু ইনস্টিটিউট ফর গভর্নমেন্ট-এর সিনিয়র গবেষক ম্যাডি থিমোন্ট জ্যাক দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টকে বলেছেন, ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের পরে পার্লামেন্টের মাধ্যমে একটি চুক্তি অনুমোদন করানো হবে খুবই কঠিন। এক্ষেত্রে একটিই বাস্তবসম্মত পথ আছে। তাহলো এ বিষয়ে আপনার থাকতে হবে আইনগতভাবে লিখিত দলিল, যাতে এটাকে আপনি সরাসরি বৃটিশ আইনে পরিণত করতে প্রস্তুত থাকতে পারেন। তারপর আপনি প্রত্যাশিত কোনো উপায়ে ‘উইড্রয়াল এগ্রিমেন্ট বিল’ পাস করিয়ে নিতে পারেন। জনসন বলেছেন, রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের বক্তব্যের ওপর ভোট হবে ২১ ও ২২শে অক্টোবর। সুতরাং ওই সময় থেকে ৩১শে অক্টোবর পর্যন্ত মাত্র ৬টি কার্যদিবস থাকবে, যা নামমাত্র সময়। যদি আইনগত দলিল প্রস্তুত না থাকে তাহলে বিলম্বিত হবে। যদি তারা শেষ মুহূর্তে কিছু একটায় সম্মত হন তাহলে তা আইনে পরিণত হতে প্রস্তুত থাকবে না। এটা একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেবে।
মিসেস থিমোন্ট জ্যাক আরো বলেন, উইড্রয়াল এগ্রিমেন্ট বিলকে ব্রেক্সিট চুক্তির জন্য আইনে পরিণত করতে হবে। এই বিলটি অতিমাত্রায় জটিল। বৃটিশ আইনের ওপর এর বড় রকমের প্রভাব রয়েছে। তাই এটাকে নিয়ে পার্লামেন্টে তাড়াহুড়ো করা উচিত হবে না। যদি তারা হাউজ অব কমন্সের মাধ্যমে তাড়াহুড়ো করেন, যাচাইবাছাই এড়িয়ে যান, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে আইনে পরিণত করা ভালো কোনো কিছু হবে না।
(দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ)

No comments

Powered by Blogger.