শাহীনুর বেগমের সংসার চলে তালের আঁটি বিক্রি করে by রফিকুল ইসলামা

রসালো পাকা তালের পিঠা খাওয়ার সেই দিনগুলি এখন হারিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে মানুষের কাছে কচি তালের নরম আঁটির শাঁস অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি সু-স্বাদু এবং জনপ্রিয়। ফলে প্রচুর চাহিদার কারণে কচি অবস্থাতেই ব্যবসায়ীরা বাজারজাত করে থাকেন। এতে লাভও হয় বেশি। কিন্তু তাল গাছগুলো তাল শূন্য হয়ে পড়ায় আগের তুলনায় অনেকটাই কম পাওয়া যায় পাকা তাল।
প্রচুর চাহিদার কারণে তালের আঁটি বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করছেন গাইবান্ধা সদর উপজেলার খোলাহাটি ইউনিয়নের আনালেড়তাড়ি গ্রামের দরিদ্র গৃহবধু শাহীনুর বেগম ও স্বামী ডিপটি মিয়া। গাইবান্ধা জেলা শহরের শিল্পকলা একাডেমি সংলগ্ন এলাকার পিকে বিশ্বাস রোডের পাশে প্রতিদিন শাহীনুর বেগম বিক্রি করেন এই তালের আঁটি।
শাহীনুর বেগম জানালেন, একটি তালে ১-৪টি আটি থাকে। আবার কোনো কোনো তালে একটি বা দুটি আঁটিও থাকে। প্রতিটি আঁটি ৫টাকা মূল্যে বিক্রি করা হয়। দা দিয়ে কেটে কেটে তাল থেকে আঁটি বের করে পলিথিনে ভরে গ্রাহককে দেই।
উল্লেখ্য, তালের আঁটির চাহিদা এতটাই বেশি যে, নারী-পুরুষ, ছেলে-মেয়ে, শিশু-বৃদ্ধ সবগ্রাহকরা একসাথে তাদের চাহিদা মোতাবেক তালের আঁটির জন্য দাঁড়িয়ে ভীড় করে তখন শাহীনুর বেগম ও স্বামী ডিপটি মিয়া দুজন গ্রাহকের চাহিদা পূরণ করতে দিশেহারা হয়ে পড়েন। শাহীনুর বেগমের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তার স্বামী ডিপটি মিয়া মূলত জেলার বাইরে থেকে তাল সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন। কারণ গাইবান্ধা জেলায় তাল গাছের সংখ্যা খুব কম থাকায় জেলা থেকে চাহিদা মোতাবেক তাল সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। সেজন্য তাকে যেতে হয় নওগা জেলার সান্তাহার, নওগা, পত্নীতলা, বগুড়া জেলার সোনাতলাসহ বিভিন্ন জায়গায়। এই সমস্ত এলাকায় গিয়ে ডিপটি মিয়া ও তার সঙ্গের লোকজন ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকা দরে একটি গাছ চুক্তি নেয়। পরে নিজেরাই গাছ থেকে তাল পেড়ে নিয়ে আসে। প্রতিটি গাছ থেকে তাল পাওয়া যায় প্রায় ৫শ’থেকে ১ হাজার টাকা। ছোট ছোট ট্রাকে করে সংগৃত তাল নিয়ে এসে তারা গাইবান্ধায় বেচাকেনা করে।
এই পরিবারটি তালের আঁটির ব্যবসার সাথে ৮ থেকে ১০ বছর যাবত। তালের মৌসুম শেষ হলে অন্য সময় তারা পেয়ারা, বড়ইসহ অন্যান্য ফল-মূল বিক্রি করেন। এছাড়া পাশেই ছোট একটি চায়ের দোকান দিয়ে চা বিক্রি করে সংসার চালান। তারা জানান, অন্যান্য ব্যবসার চাইতে তালের আঁটি বিক্রির ব্যবসাটাই লাভজনক।

No comments

Powered by Blogger.