রোহিঙ্গা সমাবেশ নিয়ে কক্সবাজারের ডিসি’র প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে by দীন ইসলাম

রোহিঙ্গা মহাসমাবেশ দেশের জন্য এক ধরনের হুমকি। এ সমাবেশ রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ২৫শে আগস্ট কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে অনুষ্ঠিত রোহিঙ্গাদের মহাসমাবেশ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এমনটাই জানিয়েছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন। মহাসমাবেশ নিয়ে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ডিসি’র কাছে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গা নাগরিকদের বাংলাদেশে আগমনের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস এন্ড হিউম্যান রাইটস’ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে রোহিঙ্গারা কুতুপালংস্থ এক্সটেনশন ক্যাম্পে জমায়েত হয়ে মিয়ানমারের নাগরিকত্ব লাভ ও নিষ্ঠুরতার বিচার নিশ্চিত করা হলে প্রত্যাবাসনে সম্মত মর্মে বক্তব্য দেন। ওই দিন সকাল নয়টা থেকে বেলা ১২ টা পর্যন্ত সমাবেশ চলে। ওই সংগঠনের চেয়ারম্যান রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ। তিনি সম্প্রতি জনৈক প্রিয়া সাহার সঙ্গে বাংলাদেশে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ, মো. ইলিয়াছ, মোস্তাফিজুর রহমান, আব্দুর রহিম প্রমুখ বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে মুহিবুল্লাহ বলেন, মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জায়গা এখনও নিরাপদ নয়।  তাদের নিয়ে যদি ক্যাম্পে রাখা হয় তাহলে বাংলাদেশের ক্যাম্পই তাদের জন্য ভালো। তাই নাগরিকত্ব, নিরাপত্তাসহ অধিকার বাস্তবায়ন না হলে মিয়ানমারে ফিরবে না রোহিঙ্গারা।
রোহিঙ্গা নেতারা সমাবেশে বলেন, রোহিঙ্গা মুসলমানদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে নিতে হবে মিয়ানমারকে। সঙ্গে রাখাইনে ফেলে আসা ভিটেমাটিও ফিরিয়ে দিতে হবে। তাহলেই প্রত্যাবাসন সফল হবে। আমাদের সব সময় ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমাদের যদি মিয়ানমারে ফিরে যেতে হয়, এক সঙ্গে যাব, এক সঙ্গে সীমান্ত পার হবো। প্রতিবেদনে জানানো হয়, শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় (আরআরআরসি), কক্সবাজারের অধীনের ক্যাম্প ইনচার্জরা তাদের মৌখিকভাবে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল করার অনুমতি দেন। এরপরও তারা গণহত্যার বিচার ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনের দাবি সংক্রান্ত লিফলেটসহ মিছিল নিয়ে মহাসমাবেশ করেছে। ডিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের মহাসমাবেশ করার ক্ষেত্রে যেসব এনজিওদের ইন্ধন বা সহযোগিতা রয়েছে, সেসব এনজিওদের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের মাধ্যমে জানা যায় যে, বেশ কয়েকটি এনজিও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিরোধী কর্মকান্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। এ বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে নতুন পুরাতন মিলে বাংলাদেশে বসবাসকারি রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখ। তারা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন ক্যাম্পে বসবাস করছেন। ২৫ আগস্ট বাংলাদেশে আগমনের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে মহাসমাবেশ নিয়েই এখন যত আলোচনা চলছে।

No comments

Powered by Blogger.