শান্তি প্রক্রিয়া বিনষ্ট করছে যারা by ড. জাফর নওয়াজ জসপাল

আমেরিকানরা যত দ্রুত সম্ভব আফগানিস্তান থেকে তাদের সামরিক বাহিনীকে সরিয়ে নিতে চায়। পাকিস্তান নিজেদের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে আফগানিস্তানের সব পক্ষের সাথে একটা বোঝাপড়ার সম্পর্ক এবং কাবুলের সাথে একটা আস্থার সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করছে। তাছাড়া, রাশিয়া ও চীন উভয়েই আফগান শান্তি প্রক্রিয়াকে সমর্থন করছে। এত সব উৎসাহব্যঞ্জক খবর সত্বেও আফগানিস্তানের শান্তির বিষয়টি এখনও সুদূর পরাহতই রয়ে গেছে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আফগানিস্তান সঙ্কটের দ্রুত সমাধানের জন্য চাপ দিচ্ছেন। ২০২০ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই তিনি আফগানিস্তান থেকে পুরো মার্কিন সেনা বা এর একটা বড় অংশকে দেশে ফিরিয়ে নিতে চান। ২৯ জুলাই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও জোর দিয়ে বলেন যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আফগানিস্তানের অন্তহীন যুদ্ধের সমাপ্তি টানতে চান।

তিনি বলেন, ওয়াশিংটন চায় যাতে আফগানরা তাদের দেশকে ফেরত নেয় এবং আমাদের দিক থেকে বছরে সেখানে বহু বিলিয়ন ডলার ব্যয় যেন সাশ্রয় হয়। সে কারণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে আফগানিস্তান সমস্যা নিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সাথে বিনিময় শুরু করেছেন।

ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউজের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আশ্বস্ত করেছেন যে, তিনি তালেবানদের বোঝানোর চেষ্টা করবেন যাতে তারা অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয় এবং কাবুল সরকারের ব্যাপারে তাদের অবস্থান বদল করে। তিনি জানান যে, তিনি ব্যক্তিগতভাবে তালেবানদের সাথে বৈঠক করবেন এবং তাদের বোঝাবেন যে আলোচনায় আফগানিস্তান সঙ্কটের একমাত্র সমাধান।

তবে, আফগানিস্তান শান্তি প্রক্রিয়া নস্যাৎ করতে যারা সচেষ্ট, তাদেরকে অবজ্ঞা করারও সুযোগ নেই। দোহাতে আন্ত:আফগান আলোচনায় এই আশা দেখা দিয়েছে যে, ঘানি সরকারের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনার ব্যাপারে আফগান তালেবানরা তাদের অবস্থানের পরিবর্তন করছে। তারা এরই মধ্যে সাক্ষাত করেছে। তবে, সরকারের প্রতিনিধিরা ব্যক্তিগতভাবে আলোচনায় অংশ নিয়েছেন, আফগান সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে নয়।

রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে যে, পরবর্তী দফা আন্ত:আফগান সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে নরওয়ের রাজধানী ওসলোতে। তাছাড়া, ইসলামাবাদ আফগানিস্তানের সমস্ত রাজনৈতিক পক্ষ এবং জাতিগত গ্রুপগুলোর সাথে যোগাযোগ রাখছে। জুনের শেষ সপ্তাহে ইসলামাবাদে আফগান রাজনৈতিক দল এবং জাতিগত গ্রুপগুলোর প্রতিনিধিদের ভুরবামে এক সংলাপে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। পরে, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের আমন্ত্রণে প্রেসিডেন্ট ঘানিও ইসলামাবাদ সফর করেন।

তবে, দেশে সহিংসতা অব্যাহত থাকায় সমস্ত ইতিবাচক প্রচেষ্টাকেই অকার্যকর মনে হচ্ছে। ২৮ জুলাই প্রেসিডেন্ট ঘানির রানিং মেট এবং সাবেক গোয়েন্দা প্রধান আমরুল্লাহ সালেহ’র কাবুল অফিসে হামলা হয়। বোমার স্প্লিন্টারে সালেহ আহত হন, ২০ জন নিহত হয়, আহত হয় পঞ্চাশের বেশি।

আফগানিস্তানে শান্তি প্রক্রিয়ার বিরোধীরা পুরো শান্তি প্রক্রিয়াকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে কারণ আফগানিস্তানে শান্তি কায়েম হলে সেটা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর জন্য ভালো হবে না এবং পাকিস্তান-বিরোধী শক্তিগুলোর জন্যও ভালো হবে না।

৩০ জুলাই পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশি দাবি করেন যে, “আমরা বলছি যে, সীমান্তের অন্য পাশে সন্ত্রাসীদের আস্তানা রয়েছে। সেখান (আফগানিস্তান) থেকে মানুষ এসে পাকিস্তানের ভেতরে (সন্ত্রাসী) তৎপরতা চালাচ্ছে”।

তাই উপসংহারে বলতে হয়, শান্তিপূর্ণ আফগানিস্তান শুধু আফগানদের জন্যই জরুরি নয়, বরং পাকিস্তানসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্যও এটা সমান গুরুত্বপূর্ণ। তবে সব কিছুর উর্ধ্বে আন্ত:আফগান সংলাপের ধারাবাহিকতা যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তানে শান্তি আনার ব্যাপারে একটা আশা তৈরি করেছে।

>>>ড. জাফর নওয়াজ জসপাল ইসলামাবাদের কায়েদে আজম ইউনিভার্সিটির স্কুল অব পলিটিক্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল রিলেশান্সের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর।

No comments

Powered by Blogger.