প্রবল বাধার মুখে নতুন শ্রীলংকা-যুক্তরাষ্ট্র সামরিক চুক্তি সইয়ের প্রচেষ্টা by আনা পারারাজাসিঙ্গম

ভারত মহাসাগরে কৌশলগত অবস্থানের আলোকে ওয়াশিংটন ও বেইজিং উভয়ের কাছে আকষর্ণীয় স্থান শ্রীলংকা। যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয়ে ভারত মহাসাগরে তাদের অবস্থান বাড়ানোর চেষ্টা করার প্রেক্ষাপটে শ্রীলংকা হয়ে পড়েছে তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ দেশ। সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র এখন শ্রীলংকার সাথে স্ট্যাটাস অব ফোর্সেস এগ্রিমেন্ট (সোফা) চুক্তি নিয়ে নতুন করে আলোচনা করতে চাইছে। শ্রীলংকার সাথে যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৫ সালে প্রথমে যখন এই চুক্তিতে সই করেছিল, তখন দৃশ্যপটে চীন ছিল না।

তবে এখন সোফা চুক্তি নিয়ে শ্রীলংকায় তীব্র বিরোধিতার সৃষ্টি হয়েছে। বিরোধীরা আশঙ্কা করছে, এর ফলে দ্বীপদেশটিতে মার্কিন ঘাঁটি প্রতিষ্ঠিত হবে এবং এতে করে দেশের সার্বভৌমত্বের সাথে আপস করা হবে। সোফা সই নিয়ে স্থানীয় বিরোধিতার কারণেই ২৭ জুন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর শ্রীলংকা সফর বাতিল হয়। মধ্যপন্থী শ্রীলংকা ফ্রিডম পার্টির সভাপতি শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মৈত্রিপালা সিরিসেনা তার দেশে আমেরিকান সৈন্যের উপস্থিতি প্রত্যাখ্যান করেছেন। শ্রীলংকার বর্তমান সেনাবাহিনীর কমান্ডার মহেশ সেনানায়েকের অবস্থানও একই। তিনি স্থানীয় মিডিয়াকে বলেছেন, তিনি সোফা সই করবেন না। শ্রীলংকার প্রতিরক্ষা সচিব জেনারেল (অব.) শান্ত কোটেগোড়াও সোফার বিরুদ্ধে আপত্তি উত্থাপন করে বলেছেন, শ্রীলংকায় বিদেশী সৈন্যের প্রয়োজন নেই। সাবেক প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসার এসএলপিপির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত সিংহলি উগ্র জাতীয়তাবাদী দল এমইপি ও মার্কসবাদী জনতা বিমুক্তি পেরামুনাও সোফার বিরোধিতা করছে।

ডানপন্থী ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) প্রধান প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিঙ্গেই শুধু সোফা নিয়ে নতুন করে আলোচনা চাচ্ছেন। ১০ জুলাই তার দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা পার্লামেন্টে তিনি বলেন, সোফা কোনো সামরিক চুক্তি নয়, এটি মার্কিন সৈন্যদের কিছু অধিকার ও সুবিধা দেয়ার চুক্তি।

তিনি বলেন, সোফা একটি শান্তিকালীন নথি। তিনি পার্লামেন্টকে আশ্বস্ত করে বলেন, শ্রীলংকার সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলে, এমন কোনো চুক্তিকে তিনিও সমর্থন করবেন না।

অবশ্য সানডে টাইমসে ৩০ জুন ফাঁস হওয়া নথিতে বলা হয়েছে, এই চুক্তিতে সেনা সদস্য, সামরিক জাহাজ ও বিমানকে অবাধে শ্রীলংকায় চলাচল করতে দেয়ার অনুমতি রয়েছে। তাছাড়া মার্কিন সামরিক বাহিনীর কোনো সদস্য শ্র্রীলঙ্কায় অপরাধ করলে তার বিচার করতে পারবে না শ্রীলংকা। সোফা চুক্তিতে আবদ্ধ অন্যান্য দেশের নজির এক্ষেত্রে সামনে আসছে। বিশেষ করে হাইতিতে মার্কিন সৈন্যরা শিশুদের পতিতাবৃত্তির একটি চক্র পরিচালনা করলেও দেশটির কর্তৃপক্ষ ওই সৈন্যদের বিচার করতে পারেনি। ফলে আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে, মার্কিন সৈন্যরা কোনো অপরাধ করলেও পার পেয়ে যেতে পারে।

আর সোফা নিয়ে আশঙ্কা প্রশমন করতে শ্রীলংকায় মার্কিন মিশন চুক্তিটির পক্ষে সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করেছে। শ্রীলংকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত অ্যালাইনা টেপলিজ স্থানীয় মিডিয়াকে বলেন, প্রস্তাবিত চুক্তিতে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কিছুটা হ্রাস করার ব্যবস্থা রয়েছে। শ্রীলংকায় মার্কিন ঘাঁটি করার কোনো পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের নেই। কিন্তু তার মন্তব্য শ্রীলংকার জনগণের ভয় প্রশমিত করতে পারেনি।

শ্রীলংকায় চীনা উপস্থিতিতে ভীত হয়েই দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্র তার অবস্থান মজবুত করার উদ্যোগ নিয়েছে বলে অনেক শ্রীলংকান মনে করে।

সোফা নিয়ে প্রবল উন্মাদনা সৃষ্টি হওয়ায় এবং রাষ্ট্রদূতের মন্তব্য তা প্রশমিত করতে না পারায় বিক্রমাসিঙ্গের বেশ কষ্ট হচ্ছে তার অনুসারীদের বোঝাতে। ফলে সোফা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু করতে সমস্যা হচ্ছে। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে শ্রীলংকার তাৎপর্য অনুধাবন করে যুক্তরাষ্ট্র সোফা চুক্তির আশা ছেড়ে দেবে, এমন সম্ভাবনা ক্ষীণ।

No comments

Powered by Blogger.