পশ্চিমবঙ্গেও চালু হলো এনআরসি! by পরিতোষ পাল

আসামে জাতীয় নাগরিকপঞ্জীতে নাম থাকবে কি থাকবে না তা নিয়ে প্রবল আতঙ্ক বিরাজ করছে সেই রাজ্যের মানুষের মধ্যে। বিশেষ করে  বাঙালিরা বিতাড়নের আশঙ্কায় দিন গুনে চলেচেন। এরই মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, ভারতের প্রতি ইঞ্চি জমি থেকে অনুপ্রবেশকারীদের খুঁজে বের করে ফেরত পাঠাবেন। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের অন্যত্র নাগরিকপঞ্জী বা এনআরসি তৈরির কাজ শুরু না হলেও পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি’র থাবা পড়তে শুরু করেছে। সম্প্রতি কলকাতায় দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে বসবাসকারি একটি সাময়িকীর সম্পাদক ও প্রখ্যাত প্রাবন্ধিকের স্ত্রী ও ছেলের নাগরিকত্ব যাচাইয়ের নোটিশ দেয়া হয়েছে। আর এই নোটিশ পেয়ে সাময়িকী চতুরঙ্গের সম্পাদক আবদুর রউফ বিস্মিত হয়েছেন। জানা গেছে, আবদুর রউফ ও তাঁর পরিবার পার্ক সার্কাসে মেহের আলী রোডে দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে বসবাস করছেন। এতদিন ধরে ভারতের সবক’টি নির্বাচনে ভোটও দিয়েছেন পরিবারটি।
অথচ কিছুদিন আগেই নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে রউফের স্ত্রী মুস্তাব সেরা রউফ ও পুত্র আসাদ রউফের নামে নোটিশ দেয়া হয়েছে। তারা যে প্রকৃতই ভারতীয় নাগরিক তা প্রমাণের জন্য দু’জনকেই সশরীরে দপ্তরে হাজির হওয়ার কথা বলা হয়েছে। নোটিশে হুমকিও দেয়া হয়েছে, হাজিরা না দিলে একতরফা সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
অর্থাৎ ভোটার তালিকা থেকে নাম কেটে দেয়া হবে। আবদুর রউফ সাংবাদিকদের বলেছেন, তার স্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে একটি নামি স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। আর তাঁর পুত্র আসাদ লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স থেকে পাস করে বিদেশেই রয়েছেন। ফলে স্ত্রীর পক্ষে হাজিরা দেয়া সম্ভব হলেও পুত্রের পক্ষে হাজিরা দেয়া সম্ভব নয়। তবে নোটিশে দেয়া সময় ও তারিখ অনুয়ায়ী আলীপুর সার্ভে বিল্ডিংয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লাইন দিয়ে আর পাঁচজন সাধারণ নাগরিকের মতোই আবদুর রউফ পরিবারের পক্ষে দেখা করেছিলেন নির্দিষ্ট আধিকারিকের সঙ্গে। জানিয়েছেন, তারা দীর্ঘদিন ধরেই কলকাতাতেই বসবাস করছেন। জমা দিয়েছেন প্রয়োজনীয় নথি ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র। অবশ্য কমিশনের আধিকারিক আশ্বস্ত করেছেন বিষয়টি খতিয়ে দেখে সংশোধন করা হবে। তবে নির্বাচন কমিশন দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এইভাবে নোটিশ সাধারণত পাঠানো হয় খুব কম ক্ষেত্রেই। একমাত্র কোনো অভিযোগ এলেই এই ধরনের নোটিশ পাঠানো হয়ে থাকে। সেইমতো সব নথি পরীক্ষা করে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেয়া বা রেখে দেয়া হয়।
সিপিআইএম-এ বিভ্রান্তির প্রবণতা
ভারতের বৃহত্তম কমিউনিস্ট দল মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টি গত কয়েকটি নির্বাচনে জনভিত্তি হারিয়ে অস্তিত্ব সংকটের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। এরই মধ্যে দলের অভ্যন্তরে দেখা দিয়েছে বিভ্রান্তির প্রবণতা। কীভাবে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সংকট মোকাবিলায় জোট তৈরির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কিনা বা তা থাকলেও কার সঙ্গে কীভাবে জোট হতে পারে তা নিয়ে নানা মতের প্রতিফলন দেখা গেছে দলের নেতাদের মধ্যে। একসময় বিজেপি এবং কংগ্রেস থেকে সমদূরত্বের তত্ত্বকেই দলের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণকারীরা ঠিক করেছিলেন। তবে গত পার্টি কংগ্রেসে অবশ্য পরিস্থিতি অনযায়ী কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে সাম্প্রদায়িক শক্তির মোকাবিলা করার কথা বলা হয়। যদিও গত লোকসভা নির্বাচনে অনেক আলোচনার পরও সেই জোট তৈরি হয়নি। আর ফল বেরোনোর পর দেখা গেছে, দলের মধ্যেকার ক্ষয় আরও প্রবল হয়ে মাত্র ৭ শতাংশে এসে ঠেকেছে দলের জনভিত্তি। তবে নির্বাচনের পর আবার কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে রাজনৈতিক সঙ্কট মোকাবিলার রাস্তা খোঁজার চেষ্টা হচ্ছে।
তবে এরই মধ্যে দলের এক নেতা বলেছেন, বিজেপি’র সাম্প্রদায়িক রাজনীতির মোকাবিলায় কেউই অস্পৃশ্য নয়। এর পরেই সিপিআইএম’র এক বিধায়ক তৃণমূল কংগ্রেস রাজনৈতিক অচ্ছুৎ নয় ইঙ্গিত দিয়ে বলেছিলেন, বিজেপি কাউকে জয় শ্রীরাম ধ্বনি দিয়ে মারছে দেখলে আক্রান্ত ব্যক্তি তৃণমূল কংগ্রেসের হলেও তাকে আমি বাঁচাতে যাব। সেখানে যদি তৃণমূল নেতাও থাকেন তবুও আমি যাব। তিনি নিজের অবস্থানে অনড় থেকে পরবর্তী সময়ে এও বলেছেন, ইস্যুর ভিত্তিতে তৃণমূলের পাশে থাকতে আপত্তি নেই। রাজনীতিতে কেউ অস্পৃশ্য নয়। তবে একজোট হওয়ার জন্য তৃণমূলের সামনে শর্তও রাখেন তিনি। বলেন, বহু সিপিএম কর্মীর বিরুদ্ধে ভুয়া মামলা দেয়া হয়েছে। সেগুলো প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাইতে হবে। এর পরেই সোস্যাল মিডিয়ায় প্রশ্ন উঠেছে, ‘রাজনৈতিক অস্পৃশ্যতা’ না থাকলে তৃণমূল-বিজেপি’র ‘আঁতাত’ নিয়ে সিপিআইএম’র কি কথা বলা সাজে? এদিকে কংগ্রেসের অনেক নেতাই প্রধান শত্রু হিসেবে বিজেপিকে চিহ্নিত করে আগুন নেভাতে সবাইকে একসঙ্গে চলতে বলেছেন। ফলে সিপিআইএম’র মধ্যে বিতর্ক ঘণীভূত হয়েছে জোট নিয়ে। এই অবস্থায় সিপিআইএম’র পশ্চিমবঙ্গ কমিটির সম্পাদক সূর্য্যকান্ত মিশ্র দলের সকলকেই সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, বিজেপি’র মোকাবিলায় তৃণমূল বা তৃণমূলকে রুখতে বিজেপি’র হাত ধরা- এই দুই ‘বিপজ্জনক প্রবণতা’ থেকেই দূরে থাকতে হবে। তাঁর মতে, সমস্ত শান্তিপ্রিয় ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করার লড়াইকে দুর্বল করার জন্য বিজেপিকে নিয়ে তৃণমূলের এবং তৃণমূলকে নিয়ে বিজেপি’র বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এক বিপজ্জনক প্রবণতা চালু করার চেষ্টা হচ্ছে। আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থার ধর্মনিরপেক্ষ ভিত্তির ক্ষেত্রে এর গুরুতর প্রতিক্রিয়া রয়েছে এবং বাম ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পক্ষে তা গুরুতর বিপদ। তবে দলের নেতাদের মধ্যেকার ’বিভ্রান্তির প্রবণতা’ কাটানোর জন্য দলীয় নেতাদের মধ্যে আলোচনা করা হবে।
মেট্রোতে দরজা বন্ধের চেষ্টা হলে জরিমানা
ভারতের প্রথম মেট্রো রেল (পাতাল রেল) কলকাতা শহরে চালু হলেও এই মেট্রো রেলের যাত্রীদের প্রায় প্রতিদিনই কমবেশি নানা দুর্ভোগের মুখে পড়তে হচ্ছে। মেট্রো কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা জোড়াতালি দিয়ে রেল চালাচ্ছেন বলেই সংকট তীব্র হয়েছে। গত ১৩ই জুলাই এক দুর্ঘটনায় এক প্রৌঢ়ার মৃত্যু যাত্রী নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অনেক প্রশ্ন হাজির করেছে। মেট্রো রেলের দরজায় হাত আটকে মৃত্যু হয়েছিল সেই প্রৌঢ়ার। হাত আটকে থাকা অবস্থাতেই মেট্রো ছুট লাগিয়েছিল। ফলে দেওয়ালে ধাক্কা এবং বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছিল সেই ব্যক্তির। এরপরেই মেট্রো কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, স্টেশনে দুই প্রান্তে গাড়ির মতো লাগানো হবে লুকিং গ্লাস। যাতে চালক বা গার্ড দেখতে পারবেন বাইরের দিকটি। তবে যাত্রী সচেতনতার উপরও জোর দিয়েছে মেট্রো কর্তৃপক্ষ। স্টেশনে স্টেশনে মাইকে প্রচার এবং ভিডিও ক্লিপের মাধ্যম প্রচার করা সম্পর্র্কে। তবে মেট্রো রেলওয়ের কর্তারা বিশৃঙ্খল যাত্রীদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আইনি পথ নিয়েছেন। মেট্রোকর্তাদের অভিযোগ, যাত্রীদের অনেকেই দেরি করে প্ল্যাটফর্মে পৌঁছে শেষ মুহূর্তে হাত, পা, ব্যাগ বা ছাতার হাতল দিয়ে দরজা আটকে ট্রেনে ওঠার চেষ্টা করেন।
এতে দরজা খোলা ও বন্ধের ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হয়। অযথা বেশি সময় থামতে হয় একটি ট্রেনকে। এর ফলে মেট্রোর সময়ানুবর্তিতা যেমন ধাক্কা খায়, তেমনই শেষ মুহূর্তে ট্রেনে উঠতে গিয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দেয়। এই প্রবণতা রুখতেই রেলের আইনকে কাজে লাগিয়ে জরিমানার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, মেট্রোয় হুড়োহুড়ি করে উঠতে যাওয়া যাত্রীদের মধ্যে কেউ দরজা আটকানোর চেষ্টা করলে তাঁর বিরুদ্ধে অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী হাজার রুপি পর্যন্ত জরিমানা অথবা ছ’মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। অপরাধের মাত্রা বেশি হলে জেল ও জরিমানা, দু’টোই একসঙ্গে হবে। ইতিমধ্যে এক ডজনের বেশি যাত্রীকে জরিমানা করা হয়েছে। এতদিন মেট্রো স্টেশনে থুথু ফেলা, স্টেশন নোংরা করা এবং কম ভাড়ার টোকেন কাটার জন্য জরিমানা চালু ছিল। এবার তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মেট্রোর দরজা আটকে রাখার বিষয়টিও। নির্দিষ্ট মূল্যের টোকেন না কাটার ক্ষেত্রে ২৫০ রুপি পর্যন্ত এবং প্ল্যাটফরমে থুথু ফেলার ক্ষেত্রে ৫০০ রুপি পর্যন্ত জরিমানা করা হত। যাত্রীরা অবশ্য সময়ানুবর্তিতার দিকে মেট্রো কর্তাদের নজর দেয়ার আরজি জানিয়েছেন। সেইসঙ্গে ত্রুটিমুক্ত রেল চালানোর আবেদন জানানো হয়েছে।
নিজের রক্তে কমবে যন্ত্রণা
নিজের রক্তেই কমবে যন্ত্রণা। অস্ত্রোপচারের কোনো প্রয়োজনই পড়বে না। প্লেটলেট রিচ প্লাজমা (পিআরপি) পদ্ধতি প্রয়োগ করে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে এই চিকিৎসা করা সম্ভব। সমপ্রতি এমন চিকিৎসা পদ্ধতি কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে শুরু হয়েছে। ওই হাসপাতালের ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক রাজেশ প্রামাণিক জানিয়েছেন, এই পদ্ধতিতে রোগীর শরীর থেকে প্রথমে রক্ত সংগ্রহ করা হয়। এর পরে ওই সংগৃহীত রক্ত বিশেষ যন্ত্রে তীব্র গতিতে ঘোরানো হলে তাতে তিনটি স্তর তৈরি হয়। তারই একটি হলো, প্লেটলেট সমৃদ্ধ প্লাজমা বা পিআরপি। রোগীর আঘাত পাওয়া জায়গা চিহ্নিত করে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে সেখানে পিআরপি দেয়া হয়। দু’সপ্তাহ অন্তর তিন ধাপে রোগীকে ওই ইঞ্জেকশন দেয়া হয়। চিকিৎসকদের দাবি, সমপ্রতি এই পদ্ধতিতে চিকিৎসার মাধ্যমে যন্ত্রণা থেকে নিস্তার পেয়েছেন দুই রোগী। বাঁ হাতের যন্ত্রণায় কাবু হয়ে পড়েছিলেন এক লেখিকা। অসহনীয় যন্ত্রণার কারণে পুজো সংখ্যায় লিখতে পারেননি তিনি। অন্যদিকে, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাইক থেকে রাস্তায় পড়ে পায়ে গুরুতর আঘাত পেয়েছিলেন এক যুবক। চিকিৎসায় লক্ষাধিক টাকা খরচ হবে বলে জানিয়েছিল এক বেসরকারি হাসপাতাল। দু’জনকেই অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। তবে সরকারি হাসপাতালে আসার পর দু’জনের ক্ষেত্রেই পিআরপি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। থেরাপি প্রসঙ্গে চিকিৎসকদের বক্তব্য, পিআরপি’র ভিতরে প্রচুর গ্রোথ ফ্যাক্টর থাকে।
সেটাই ক্ষতস্থানকে সারিয়ে তুলতে সাহায্য করছে। জানা গেছে, খেলতে গিয়ে অসাবধানতাবশত পায়ে আঘাত, লিগামেন্ট এবং কাঁধের শিরায় চোট লাগলে পিআরপি পদ্ধতি প্রয়োগ করে চিকিৎসায় সুফল পাওয়া যাচ্ছে। পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা, টেনিস এলবোর ক্ষেত্রেও এই পদ্ধতি ভালো সাড়া দিচ্ছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েেেছন। তবে এই চিকিৎসা পদ্ধতির বিরুদ্ধ মতামতও রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.