নিন্দা বর্ষণের মধ্যেও শাসকদলের নরম মনোভাব -প্রিয়া সাহার বক্তব্য নিয়ে আনন্দবাজার

ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া সাহার নালিশ নিয়ে বিতর্কে জেড়বার নেটিজেনরা। শাসকদল আওয়ামী লীগ, ১৪ দল এমনকি সরকারের মন্ত্রীদের মধ্যেও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কিন্তু লন্ডন সফরে থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পরিস্থিতি বদলে যায়। কলকাতার আনন্দবাজার এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে শিরোনাম করেছে, তসলিমা প্রিয়ার পাশে, নরম হাসিনা। আনন্দবাজার লিখেছে,
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছে নালিশ করায় এনজিও-কর্মী প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীদের নিন্দা বর্ষণের মধ্যেই নরম মনোভাব নিয়ে চলার নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শাসক দল আওয়ামী লীগের যে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শনিবারেও প্রিয়া সাহার বক্তব্যকে ‘দেশদ্রোহী’ কাজ বলে কঠোর শাস্তি দাবি করেছিলেন, তিনিই রবিবার সাংবাদিক বৈঠক ডেকে জানিয়েছেন প্রিয়া সাহার ব্যাখ্যা না-শুনে কোনও আইনি ব্যবস্থা না-নেয়ার জন্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
ওয়াশিংটনে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের একটি আলোচনা সভার পরে বিশ্বের নানা দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বুধবার হোয়াইট হাউসে গিয়ে প্রিয়া ট্রাম্পের কাছে অভিযোগ করেন, বাংলাদেশে নির্যাতনের মুখে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা ক্রমেই কমছে। তার পরেও রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা মুসলিম মৌলবাদীদের নিরন্তর নির্যাতন চলছে তাঁদের ওপর। এর পরেই শাসক দলের একের পর এক নেতা-মন্ত্রী প্রিয়ার কাজকে ‘সরকার-বিরোধী চক্রান্তের অঙ্গ’ বলে বিবৃতি দেওয়া শুরু করেন।
সোশ্যাল সাইটে নেটিজেনদের আক্রমণ শালীনতার মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। শনিবার ঢাকায় প্রিয়ার বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখান সরকার-সমর্থকেরা। রবিবার দু’টি আলাদা আলাদা মামলা করে প্রিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনেন দুই ব্যক্তি। মামলার তোড়জোড় শুরু করেছিল সরকারের আইন মন্ত্রকও। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন লন্ডনে। দুপুরে ওবায়দুল কাদের তাঁর নির্দেশের কথা ঘোষণা করার পরে আইন মন্ত্রক হাত গুটিয়ে নেয়। বিকেলে প্রিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দু’টিও খারিজ হয়েছে।
আক্রমণের মধ্যেই নেটিজেনদের একাংশ প্রিয়ার বক্তব্যের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন। ২৫ বছর আগে বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন ফেসবুকে লেখেন, ‘ট্রাম্পকে প্রিয়া সাহা যা বলেছেন, কমই বলেছেন। খুব মাপা সময়। ভয়াবহতা বর্ণনা করার সময় তাই পাননি।’ তসলিমার কথায়, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বৈষম্য ও নির্যাতন বাংলাদেশে চলছেই। সাম্প্রদায়িক সংঘাতের পটভূমিকায় সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ নিয়ে ‘লজ্জা’ উপন্যাসের জন্যই মৌলবাদীদের রোষে পড়ে দেশ ছাড়তে হয়েছিল তসলিমাকে। প্রিয়ার বক্তব্যকে সমর্থন করে ফেসবুকে লিখেছেন গণ আন্দোলন মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারও। সরকারি তথ্য দিয়ে তিনি দেখিয়েছেন, ট্রাম্পকে দেওয়া প্রিয়ার পরিসংখ্যান আদৌ ভুল নয়। ইমরান লিখেছেন, ‘প্রিয়া সাহার বক্তব্য ভুল প্রমাণিত করার জন্য তিনি দেশে ফেরার আগেই সকল সাম্প্রদায়িক দেশদ্রোহীকে কঠোর শাস্তি দিয়ে প্রমাণ করা হোক বাংলাদেশ বাস্তবেও একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ।’
এর মধ্যেই ইউটিউবে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে আত্মপক্ষ সমর্থন করেছেন প্রিয়া সাহা। সেখানে তিনি দাবি করেছেন, সরকারি তথ্য থেকেই তিনি তাঁর পরিসংখ্যান পেয়েছেন। ১৯৪৭-এ ভারত ভাগের সময়ে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানে ধর্মীয় সংখ্যালঘু ছিলেন জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ। এখনকার বাংলাদেশে তা কমে ৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ২০১১-র একটি গবেষণার রিপোর্ট বলছে, বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন ৬৩২ জন করে সংখ্যালঘু কমে যাচ্ছেন।
মশা মারতে কামান দাগাতে চাই না -প্রিয়া সাহা প্রসঙ্গে কাদের
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছে নালিশ করা বাংলাদেশের নারী প্রিয়া সাহার বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মশা মারতে কামান দাগাতে চাই না। তার বিষয়ে সরকার ধীর গতিতে এগোচ্ছে। বিষয়টার গভীরে আমরা যাচ্ছি, সবকিছু জেনেশুনে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে চাই। গতকাল সচিবালয়ে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। শেখ হাসিনা যখন বিরোধী দলে ছিলেন প্রিয়া সাহা তার তখনকার বক্তব্যে অনুপ্রাণিত হয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে অভিযোগ করেছেন বলে জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনার বক্তব্যে তিন কোটি ৭০ লাখ লোক মিসিং-এ কথা তো নেই। শেখ হাসিনা তো এরকম কোনো কথা বলতে পারেন না। এ ধরনের বক্তব্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে বলা, এটা আমাদের দেশকে ছোট করা।
এটা একটা কাল্পনিক বক্তব্য, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য। আমরা রয়ে-সয়ে অগ্রসর হচ্ছি, মশা মারতে আমরা কামান দাগাতে চাই না। তিনি বলেন, বিষয়টা আমরা আরও খোঁজ-খবর নিয়েছি,এসব বক্তব্য দেয়ার পেছনে অন্য কারো হাত আছে কি না এবং তিনি যখন দেশে ফিরবেন, তিনি বলেছেন দেশে ফিরবেন... তখন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে যে, তিনি কী উদ্দেশ্যে বলেছেন, কেন বলেছেন, কী ইনফরমেশনের ভিত্তিতে বলেছেন-সেটা তাকে অবশ্যই ব্যাখ্যা করতে হবে। কারণ, দেশে গোটা জাতির মধ্যে কনফিউশন সৃষ্টি হয়েছে।

শেখ হাসিনা মাইনরিটি নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন সে বক্তব্যের সাথে সংখ্যা তত্ত্বের এই বিষয়টাতে কোনো মিল নেই। প্রিয়া সাহার স্বামী দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চাকরি করেন-এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, উনার স্বামী সরকারি চাকরি করেন। এক পরিবারে স্বামী-স্ত্রী-ছেলে- মেয়ে সবাই এক মতালম্বী হবেন- এমন তো কোনো কথা নয়। উনার স্ত্রী অন্যায় করলে,সেটার জন্য স্বামীকে কেন অভিযুক্ত করতে হবে-এটা তো কোনো আইনে নেই। আমরা অহেতুক এ ধরনের বিষয়কে কেন ইনভাইট করতে যাব। প্রিয়া দেশে না এলে কী ব্যবস্থা নেবেন-এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন,উনি নিজেই বলেছেন দেশে ফিরে আসবেন। আর এটা এমন একটা বিষয় নয় যে, জোর করে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হবে, এরকম কিছু আমরা পাইনি। আমরা খতিয়ে দেখছি,সেরকম কিছু হলে পরে দেখা যাবে। প্রিয়া সাহার বিষয়ে সরকার ব্যাকফুটে গেল কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা ব্যাকফুটের কোনো বিষয় না। উনি এনজিও সংগঠনের নেতৃত্ব দেন, আবার হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের অ্যাপেক্স বডির অর্গানাইজিং সেক্রেটারি। কাজেই এটাকে তো তুচ্ছ জ্ঞান আমরা করতে পারি না।

এটা তার নিজের নাকি শেখানো কথা, কী মনে করছেন-এ বিষয়ে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, সেটা আমাদের জানা নেই। কারো প্ররোচনা কাজ করেছে কি-না, পেছনে কোনো রাজনৈতিক মতলব আছে কি-না, উস্কানি আছে কি-না, বিষয়টা আমাদের জানতে হবে এবং আমরা বিষয়টা খতিয়ে দেখছি। সারাদেশে ছেলেধরা সন্দেহে পিটিয়ে মানুষ মারা হচ্ছে-এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন,এ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমি কথা বলেছি, তারা বিষয়টির পুনরাবৃত্তি রোধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন, এটাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে জানিয়েছেন। পিটিয়ে মানুষ মারার সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীরা জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ আসছে- এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন,দলীয় নেতাকর্মী কেউ যদি জড়িত থাকে তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে আমরা আপসহীন। সবার ক্ষেত্রে একই রকমের আইন প্রযোজ্য হবে, একই রকমের ব্যবস্থা প্রযোজ্য হবে। দলীয় লোকের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা শেখ হাসিনার সরকার কখনও করেনি, এখনও করবেন না, ভবিষ্যতেও না।

এদিকে পবিত্র ঈদ-উল-আযহায় দশ দিন সিএনজি ফিলিং স্টেশন ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে বলে জানান তিনি। ওবায়দুল কাদের বলেন, ঈদের আগে তিন দিন ও পরের তিন দিন ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। পচনশীল দ্রব্য,গার্মেন্ট ও ওষুধবাহী যানবাহন যথারীতি চলবে। তিনি বলেন,এছাড়া ঈদের আগের সাতদিন এবং পরের তিন দিন মোট ১০ দিন সিএনজি স্টেশন ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে। গার্মেন্ট কর্মীদের ঈদের সময় বিআরটিসি বাস দিয়ে সহযোগীতা করা হবে এবং ধাপে ধাপে ছুটির বিষয়ে মালিকদের যথাযথ উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি। সড়কের কারণে যানজটের সৃষ্টি হবে না আশা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের বন্যা কবলিত এলাকায় সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং তা জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করা হচ্ছে। মহাসড়কে কোথাও সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার কোন কারণ নেই, সব গুড শেইপে রয়েছে এবং ভালও থাকবে। সেতুমন্ত্রী বলেন,যত্রতত্র পশুর হাট যেন না বসে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলকে জানোনো হয়েছে, রাস্তা এবং রাস্তার আশে পাশে যেন পশুর হাট না বসে, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে এ বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে অনুরোধ করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.