ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক: উত্তেজনার মধ্যেই আশাবাদ by মাইকেল কুগেলম্যান

সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত উত্তেজনা বৃদ্ধির মধ্যেই উভয় পক্ষের বাগাড়ম্বড়তা বেশ আশাবাদের সঞ্চার করেছে। সিনিয়র মার্কিন ও ভারতীয় কর্মকর্তারা অনেক সমালোচনা করলেও তা ছিল নীতিপ্রণয়নের ক্ষেত্রে, অংশীদারিত্ব নিয়ে নয়।
অতিরিক্ত বাগাড়ম্বড়তা
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও জুনে অংশীদারিত্বের জন্য উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, আমরা অনেক দূর পাড়ি দিয়েছি। এখন ট্রাম্প প্রশাসন ও মোদি প্রশাসনের সামনে অবিশ্বাস্য সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বিশেষ অংশীদারিত্বের সুযোগ গ্রহণ করার। আমরা আরো এগিয়ে যেতে পারি।
পম্পেও ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সম্পর্কের ব্যাপারে একই ধরনের অনুভূতি প্রকাশ করে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে তারা কয়েক দিন আগে নয়া দিল্লিতে যৌথ সংবাদ সম্মেলনের সময় যেসব বাধার কথা বলেছলেন, সেগুলো তারা অতিক্রম করতে পারবেন। আর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওসাকায় অনুষ্ঠিত জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে নিজে বলেছেন, আমরা মহান বন্ধুতে পরিণত হয়েছি, আমরা এমন ঘনিষ্ঠ আর কখনো হইনি। আমি নিশ্চয়তা দিয়ে তা বলতে পারি।
যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে কঠিন অবস্থা অতিক্রম করার প্রেক্ষাপটে এসব মধুর মন্তব্যকে অংশীদারিত্বের মারাত্মক টানাপোড়েন আড়াল করার প্রয়াস বলে বাতিল করাটা স্বাভাবিক। বাস্তবে যতটা মনে হয়, অতিরিক্ত বাগাড়ম্বড়তা তার চেয়েও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ।
তবে পরিস্থিতি আরো কতটা অবনতি হতে পারে, এটি তাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। এর আগে ২০১৩ সালে সম্পর্ক বিশেষভাবে খারাপ হয়েছিল। তখন নিউ ইয়র্কে ভারতের ডেপুটি কনসাল জেনারেল দেবযানি খোবড়াগাড়েকে নিউ ইয়র্কে আটক করা হয়েছিল, তার পোশাক ছিঁড়ে ফেলা হয়েছিল, তাকে কিছু সময়ের জন্য কারাগারেও রাখা হয়েছিল। বর্তমানের চেয়েও উত্তেজনাকর পরিস্থিতি ছিল তখন। তখন কোনো মিষ্টি কথা বলা হয়নি, কেবলই ক্রুদ্ধ বক্তব্য শোনা গিয়েছিল। ভারতীয় এক কর্মকর্তা খোবড়াগাড়ের সাথে আচরণকে নিন্দনীয় ও বর্বর হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। অপর এক কর্মকর্তা বলেছিলেন, আমরা বানানা রিপাবলিক নই। এর নাটকীয় প্রতিক্রিয়ায় নয়া দিল্লিস্থ মার্কিন দূতাবাস থেকে নিরাপত্তা প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে নিয়েছিল ভারত, আমেরিকানদের জন্য অনেক সুবিধা প্রত্যাহার করেছিল ভারত।
এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা
অন্যদিকে বর্তমান সমালোচনা অনেক নমনীয় এবং প্রত্যাঘাত অনেক কম নাটকীয়। বস্তুত, মার্কিন পণ্যের ওপর অতি সাম্প্রতিক প্রতিশোধমূলক করারোপের আগে পর্যন্ত বেশ সংযমের পরিচয় দিয়ে আসছিল ভারত। তাছাড়া বিরোধ সত্ত্বেও উভয় দেশ একসাথে কাজ করার ইঙ্গিত দিয়ে আসছে। উভয় দেশের মধ্যেই যে এগিয়ে যাওয়ার আগ্রহ রয়েছে, এতে ওই বার্তাই পাওয়া যাচ্ছে। ওয়াশিংটন ও নয়া দিল্লি আন্তরিকভাবেই বিশ্বাস করে যে চীনা শক্তির বিরুদ্ধে অবাধ, উন্মুক্ত ও আইনভিত্তিক ব্যবস্থা-সংবলিত অভিন্ন এশিয়া দশৃন শক্তিশালী অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করবে। তবে এর মাধ্যমে উভয়ের কল্যাণের নিশ্চয়তা দেয়া যায় না। ব্রুকিংস ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক এক প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধের পর চীন প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত একই অবস্থান কিন্তু দুই দেশের মধ্যে গভীরতর সহযোগিতা সৃষ্টি করেনি। তবে ইতিবাচক বাগাড়ম্বড়তা উভয় পক্ষের মধ্যেই এই বার্তা দিচ্ছে যে তাদের মধ্যে অন্তত বর্তমানের জন্য হলেও ইতিবাচক সম্পর্ক বজায় রয়েছে।
কিন্তু তবুও এই সম্পর্ক তিক্ত হতে পারে, এমনকি পূর্ণ মাত্রায় সঙ্কটও সৃষ্টি করতে পারে। কল্পনা করে দেখুন, যুক্তরাষ্ট্র যদি ভারতের বাণিজ্যিক ব্যবস্থা তদন্ত করে, কিংবা রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ কেনার জন্য ভারতকে শাস্তি দেয়, তখন কী হবে। এ ধরনের পদক্ষেপের ফলে মারাত্মক উত্তেজনার সৃষ্টি করতে পারে। তবে বর্তমানে আমরা যেখানে আছি, ওই অবস্থা হওয়ার কথা নয়।
>>>লেখক: ডেপুটি ডিরেক্টর ও সিনিয়র এসোসিয়েট ফর সাউথ এশিয়া, এশিয়া প্রোগ্রাম, উইড্রো উইলসন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর স্কলার্স, ওয়াশিংটন, ডিসি
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং তার ভারতীয় প্রতিপক্ষ এস জয়শঙ্কর (ডানে)

No comments

Powered by Blogger.