আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এড়াতে শ্রীলংকার সঙ্গে সামরিক চুক্তি করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র

আমলাতন্ত্রকে পাশ কাটাতে শ্রীলংকার সঙ্গে বিশেষ বাহিনীর সহযোগিতা চুক্তি করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। তবে দ্বীপদেশটিতে কোন ঘাঁটি স্থাপনের পরিকল্পনা পেন্টাগনের নেই। শ্রীলংকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আলাইনা টেপলিজ এক টেলিভশন স্বাক্ষাতকারে এসব কথা বলেছেন।

যুক্তরাষ্ট্র শ্রীলংকার সঙ্গে ‘স্টেটাস অব ফোর্সেস এগ্রিমেন্ট’ (সোফা) নামে যে চুক্তি করতে চাচ্ছে তা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে তীব্র সমালোচনার প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রদূত এসব কথা বলেন। ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপদেশটির অনেক মিডিয়া ও বিশ্লেষক এই চুক্তিকে শ্রীলংকার সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি হিসেবে দেখছেন।

টেপলিজ জানান, ভিজিটিং ফোর্সেস এগ্রিমেন্ট (ফিএফএ) নিয়েও আলোচনা হচ্ছে এবং এটা সরকারের আমন্ত্রণে শ্রীলংকা সফরকারি মার্কিন সেনা সদস্যদের সফরের একটি কাঠামো প্রতিষ্ঠা করবে।

শনিবার রাতে শ্রীলংকার রাষ্ট্র পরিচালিত টিভি চ্যানেল রূপবাহিনীতে প্রচারিত ওই সাক্ষাতকারে মার্কিন দূত বলেন, বিএফএ একটি হালনাগাদ করা ও সম্প্রসারিত চুক্তি এবং এতে বেশ কিছু আমলাতান্ত্রিক সমস্যা নিরসন করা হয়েছে।

শ্রীলংকায় ২০১৭ সালের বন্যার উদাহরণ দিয়ে টেপলিজ বলেন, দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চেয়েছিলো এবং যুক্তরাষ্ট্র ত্রাণ সরবরাহ নিয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু তার জন্য বিমানগুলোকে সরকারের কাছ থেকে ক্লিয়ারেন্স নিতে হয়েছিলো।

চুক্তিটি হলে জরুরি পরিস্থিতিতে এসব কাজ দ্রুততার সঙ্গে করতে পারবে যুক্তরাষ্ট্র। রেড টেপ দূর করে আমরা সময় বাঁচাতে চাই।

ভারত মহাসাগরে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ত সমুদ্র রুটের পাশে শ্রীলংকার অবস্থান গত কয়েক বছর ধরে এখানে চীন বড় বিনিয়োগকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। সেখানে বন্দর, মহাসড়ক নির্মাণ করছে।

অন্যদিকে, প্রতিবেশী দেশ ভারত চাইছে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব প্রতিহত করতে। ভারতের সঙ্গে যোগ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান।

এর আগে, শ্রীলংকার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক চুক্তির কারণে চীনের সঙ্গে সম্পর্কের উপর কোন ধরনের প্রভাব পড়ার আশংকা বাতিল করেন দেন টেপলিজ।

গত বুধবার এক লাইভ ফেসবুক চ্যাটে তিনি বলেন, ভিএফএ নিয়ে চীনের কিছু করার নেই। এটা শ্রীলংকার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের দ্বিপাক্ষিক অংশীদারিত্ব।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও শ্রীলংকা এখন প্রতিটি প্রশিক্ষণ বা শিপ ভিজিটের আগে পড়ে প্রবেশ ও বাহির সংশ্লিষ্ট কিছু প্রশাসনিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা করছে। এর জন্য সময়ের প্রয়োজন।

টেপলিজ দাবি করেন যে এই চুক্তিতে দুই দেশেরই লাভ হবে। কোন ঘাঁটি হবে না, কোন স্থায়ী উপস্থিতি থাকবে না। সকল ব্যক্তি, নৌযান ও বিমান প্রবেশ অনুমোদন বা প্রত্যাখ্যানের সকল ক্ষমতা থাকবে শ্রীলংকার হাতে।

শ্রীলংকায় ইস্টার সন্ত্রাসী হামলার পর থেকেই মূলত এ ধরনের চুক্তির যৌক্তিকতা নিয়ে বিতর্ক জোরদার হয়ে ওঠে। ওই হামলার জেরে দেশের প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট মৈত্রিপালা সিরিসেনার মধ্যে মতবিরোধ তীব্র হয়ে ওঠে।

দেশের জন্য ক্ষতিকর হবে এমন কোন সমাকির সহযোগিতা চুক্তিতে সই না করার কথা ঘোষণা করেন সিরিসেনা।

এর কয়েক দিন পরেই বিক্রমাসিঙ্গে জানান যে চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা এখনো চলছে। তবে শ্রীলংকার সার্বভৌমত্বের জন্য ক্ষতিকর কোন চুক্তি অনুমোদন করবেনা বলে তিনিও উল্লেখ করেন।

No comments

Powered by Blogger.