ভোগান্তি নিয়েই বাড়ি ফেরা

ঈদকে সামনে রেখে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন ঘরমুখো মানুষ। ঈদযাত্রার শুরুতেই বাস ট্রেন-লঞ্চে ঘরমুখো মানুষের ভিড় ছিল ব্যাপক। বৃহস্পতিবার অনেকেই অফিস শেষে বাড়ি চলে গেছেন। তবে ২২শে মে যারা ট্রেনের অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ করেছেন তারাই গতকাল ভ্রমণ করেছেন। বরাবরের মতো এবারও শিডিউল বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে ট্রেনে ঈদযাত্রা। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ছেড়েছে বিভিন্ন গন্তব্যের ট্রেন। ফলে যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ব্যাপক প্রস্তুতি সত্ত্বেও ঈদযাত্রার শুরুতেই ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ে ভোগান্তির শিকার হওয়ায় যাত্রীদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন রেলপথ মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন।
তিনি বলেন, ৩ থেকে ৪টি ট্রেন ছাড়তে দেরি হয়েছে। এজন্য যাত্রীদের ভোগান্তি সইতে হয়েছে । আমরা এজন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।
ঈদযাত্রায় এ বছর ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের চারটি সিটি করপোরেশনসহ এই তিন জেলা ছেড়ে যাচ্ছেন এক কোটি ৪৭ লাখ মানুষ। এর মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও জেলার অন্যান্য স্থান  থেকে যাবে এক কোটি ১০ লাখ মানুষ। নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির ঈদ-পূর্ব বার্ষিক প্রতিবেদনে এই পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে।
গতকাল কমলাপুর রেলস্টেশন, গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল এবং সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে সকাল থেকেই যাত্রীচাপ ছিল চোখে পড়ার মতো। বিকালের দিকে তা আরো বেড়ে যায়। ঈদের ছুটি একটু বেশি হওয়ায় অনেকেই পরিবারের সদস্যদের আগেভাগেই বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছেন।  গাবতলী বাস টার্মিনালে ভিড় ছিল। এখানে ঈদে বেশি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ করেন যাত্রীরা। টার্মিনালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সক্রিয় রয়েছেন। সায়দাবাদ বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় ব্যাংক কর্মকর্তা আতাউর ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি এখনো ছুটি পাইনি। কিন্তু পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পরে গেলে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হবে। তাই সবাইকে  আগে বাড়ি পাঠিয়ে দিলাম। আমি যাবো চার তারিখে। একা গেলে ভোগান্তি কম হবে। সায়াদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় এশিয়া বাসের চালক আলমগীর হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঢাকা কুমিল্লায় এখন আর তেমন যানজট নেই। আমরা খুব স্বস্তি নিয়ে গাড়ি চালাতে পারছি। যাত্রীরাও খুব আরামে যাচ্ছেন। চট্রগ্রামের যাত্রী আয়েশা আলম বলেন, মেঘনা গোমতী সেতু চালু হওয়ার পর আর বাড়ি যাওয়া হয়নি। এবারই প্রথম যাচ্ছি, শুনলাম যানজটবিহীন যাওয়া। দেখা যাক কি হয়। তবে সায়েবাদ আসতে আসতেই আমার বারোটা বেজে গেছে যানজটের কারণে। বাস কাউন্টারের কর্মীরা জানিয়েছেন, নির্ধারিত সময়েই গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে বাস।
এদিকে শুক্রবার রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেন সকাল ৬টায় কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ট্রেনটি সোয়া ৮টায় ছাড়ে। উত্তরবঙ্গগামী রংপুর এক্সপ্রেস সকাল ৯টায় ছাড়ার নির্ধারিত সময় থাকলেও ট্রেনটি বেলা ১টার পরে ছেড়ে যায়। লালমনি এক্সপ্রেস প্রায় ৭ ঘণ্টা দেরি করে। যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রামগামী সোনার বাংলা এক্সপ্রেস সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে ছাড়ার নির্ধারিত সময় থাকলেও কমলাপুর ছেড়ে যায় সকাল সোয়া ৮টায়। সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস সকাল ৬টা ৩৫ মিনিটে ছাড়ার নির্ধারিত সময় থাকলেও ছেড়ে যায় সাড়ে ৭টায়। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন রংপুরগামী যাত্রীরা। ‘রংপুর এক্সপ্রেস’ ট্রেনটির কমলাপুর ছেড়ে যাওয়ার কথা সকাল ৯টায়। সেই ট্রেনটি দুপুরে স্টেশনে প্রবেশ করে। ঈদে ঘরমুখো মানুষগুলোকে স্টেশনে পরিবার-পরিজন নিয়ে এই গরমের মধ্যে কষ্ট করতে হয়েছে। আবার কয়েকটি ট্রেন সঠিক সময়েও স্টেশন ছেড়ে গেছে। ধূমকেতু এক্সপ্রেসের যাত্রী মোবারক প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছিলেন। ট্রেন সঠিক সময়ে না ছাড়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ আমিনুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, কিছুটা দেরিতে ট্রেন ছেড়ে গেছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি, যাতে নির্ধারিত সময়ে ট্রেন ছেড়ে যেতে পারে।
মন্ত্রীর দুঃখ প্রকাশ: গতকাল সকাল ১০টায় কমলাপুর রেলস্টেশনে ঈদ উপলক্ষে রেলওয়ের সার্বিক কার্যক্রম পরিদর্শন করতে এসে রেলপথ মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ঈদযাত্রার শুরুতেই ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ে ভোগান্তির শিকার হওয়ায় যাত্রীদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। তিনি বলেন, ব্যাপক প্রস্তুতি সত্ত্বেও ৩ থেকে ৪টি ট্রেন ছাড়তে দেরি হয়েছে, এজন্য যাত্রীদের ভোগান্তি সইতে হচ্ছে। আমরা এজন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। তিনি বলেন, শনিবার থেকে আশা করছি শিডিউল অনুযায়ী ট্রেন চলবে। রেলপথমন্ত্রী বলেন, ঈদ উপলক্ষে শুক্রবার ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত কমলাপুর থেকে ১৮টি ট্রেন ছেড়ে গেছে। তন্মেধ্য ১৪টি ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে গেছে। সুন্দরবন, ধুমকেতু ও রংপুর এক্সপ্রেসসহ উত্তরবঙ্গগামী চারটি ট্রেন ছাড়তে দেরি হচ্ছিল। রংপুর এক্সপ্রেস সাত ঘণ্টা দেরিতে ছেড়েছিল। এজন্য রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, আশা করছি শনিবার রংপুর এক্সপ্রেসে শিডিউল বিপর্যয় থাকবে না।
কারণ রংপুর থেকে আলাদা ট্রেনের ব্যবস্থা করেছি, ওটা সময়মতো ঢাকা এসে পৌঁছাবে। রেলপথ মন্ত্রী বলেন, সফলতা ব্যর্থতা জনগণ বিচার করবে। তবে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় রেল ভালো সেবা দিচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন। ট্রেনের সংকট আগামী ঈদে থাকবে না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, কোরবানির ঈদের আগে আরও তিন-চারটি নতুন ট্রেন যোগ হবে। এছাড়া আগামী জুলাইয়ের মধ্যে আরও ৫০টি নতুন কোচ রেলে যোগ হবে। নতুন কোচ দিয়ে লালমনিরহাট ও রংপুর রুটে চালানো হবে। দুর্ঘটনা এড়াতে স্টেশনে কোনো মই থাকবে না জানিয়ে রেলপথমন্ত্রী বলেন, কেউ যদি ছাদে যায়, তাহলে নিজ দায়িত্বে ঝুঁকি নিয়ে যাবে। এতে কোনো অঘটন ঘটলে রেল মন্ত্রণালয় দায় নেবে না। তিনি ছাদে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। ‘রংপুর এক্সপ্রেসে’র দেরি হওয়ার ব্যাপারে রেলপথমন্ত্রী বলেন, এটি যাত্রীরা অবগত আছেন। পরে অতিরিক্ত ট্রেন দিয়ে এই সমস্যাগুলো সমাধান করা হবে। এই সময় রেল সচিব মোফাজ্জেল হোসেন, রেলওয়ের মহাপরিচালক কাজী রফিকুল আলম ও কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ আমিনুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.