ভুয়া বিয়ের ফাঁদ! পাকিস্তানে ১১ চীনা নাগরিক জেলে

চীনে ১৪০ কোটি মানুষের মধ্যে নারীর চেয়ে পুরুষের সংখ্যা বেশি প্রায় ৩ কোটি ৪০ লাখ। এই সংখ্যাটি পুরো মালয়েশিয়ার জনসংখ্যারও বেশি। এসব পুরুষ ভবিষ্যতে হয়তো কখনো বিয়েই করতে পারবেন না। কারণ, তারা জীবনসঙ্গিনী হিসেবে পাত্রী খুঁজে পাবেন না দেশের ভিতরে। এ অবস্থায় সেখানে নারীর চাহিদা তীব্র। এ জন্যই হয়তো বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নারীদের দিকে চোখ পড়েছে সেদেশের কিছু পুরুষের। তারা ওইসব দেশের নারীদের বিয়ে ফাঁদে ফেলছে। তারপর তাদেরকে নিয়ে চীনে পৌঁছানোর পর বেরিয়ে আসছে আরেক রূপ। ওইসব নারীকে দিয়ে জোরপূর্বক দেহব্যবসা করানো হচ্ছে বলে অভিযোগ। এমনই বেশ কতগুলো ঘটনা ধরা পড়েছে পাকিস্তানে। বিয়ের ফাঁদে ফেলে যুবতীদের চীনে নেয়ার অভিযোগে সেদেশের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট চীনের ১১ জন নাগরিককে বিচার বিভাগীয় রিমান্ডের অধীনে জেলে পাঠিয়েছে সোমবার। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সিকে (এফআইএ) তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিতে নির্দেশনা দিয়েছেন।  এ খবর দিয়েছে অনলাইন ডন।
এতে বলা হয়, যুবতী পাচারের সঙ্গে যুক্ত ওই ১১ চীনা নাগরিক হলেন হোংফা ইয়াং, লিবিয় লিউ, বো ওয়াং, চুয়ানজিয়া লিউ, গোংঝে হি, তিয়ানি লিউ, ফেং সু ইয়াং, চ্যান ইয়েন, সোং গুওকিয়ান, লিও এবং ওয়েই লিনপিং। এফআইএর অভিযোগ, অভিযুক্ত এসব চীনা নাগরিক পাকিস্তানি যুবতীদের সঙ্গে ভুয়া বিয়ের চুক্তি করে। এক্ষেত্রে তারা স্থানীয় মধ্যস্থতাকারীর সহায়তা নেয়। বিয়ের নাটক সাজায় তারা। তারপর ওইসব যুবতীকে চীনে নিয়ে যায়। সেখানে দেহব্যবসায় নামতে বাধ্য করে। এ ছাড়া ওইসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে অঙ্গহানী করে তা দিয়ে বাণিজ্য করার অভিযোগ আছে।
এসব ব্যক্তিকে দু’দিনের রিমান্ডে দেয়া হয়েছিল। রিমান্ড শেষে তাদেরকে সোমবার আদালতে হাজির করা হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা এ সময় আদালতকে বলেন, অভিযুক্তদের আর নিরাপত্তা হেফাজতে নেয়ার প্রয়োজন নেই। তাদের কাছ থেকে আর কোনো তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। এমন বক্তব্যের জবাবে ম্যাজিস্ট্রেট আমির রাজা বিত্তু তাদেরকে ১৪ দিনের বিচার বিভাগীয় রিমান্ডের অধীনে জেলে পাঠান। অন্যদিকে যথাসময়ের মধ্যে চালান জমা দিতে নির্দেশ দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে।
ওদিকে লু ইয়াফ ও কয়েকজন চীনা নাগরিক লাহোর হাইকোর্টে এফআইএ এবং পুলিশের বিরুদ্ধে হয়রানি করার অভিযোগ করেছেন আইনজীবীর মাধ্যমে। তাদের এ আবেদন গ্রহণ করেন বিচারপতি সরদার আহমেদ নাঈম। এই আদালতে লু ইয়াফ ও অন্যরা তাদের আইনজীবীর মাধ্যমে দাবি করেন যে, তারা বৈধ ব্যবসায় ভিসায় পাকিস্তান গিয়েছেন। আইনজীবী বলেন, তার মক্কেলদের বিরুদ্ধে ভুয়া বিয়ের কেলেঙ্কারি ছড়িয়ে দেয়ার পর থেকেই এফবিআই ও পুলিশ তাদেরকে হয়রান করছে। তিনি বলেন, আবেদনকারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে আইন প্রয়োগকারীরা এবং তারা তাদের পাসপোর্ট ও মোবাইল ফোন জব্দ করেছে। এই আবেদনে তার মক্কেলদের যেন আইন প্রয়োগকারীরা হয়রান না করেন এমনটা দাবি করেছেন ওই আইনজীবী।
কিন্তু লু ইয়াফের আইনজীবীর এই আবেদনের বিরোধিতা করেছেন একজন আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা। তিনি বলেছেন, দেশের নাগরিক ও বিদেশী সবার জন্যই সমান পাকিস্তানের আইন। তিনি আদালতকে নিশ্চয়তা দেন যে, চীনা নাগরিকদের হয়রান করা হয় নি। আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে আইন প্রয়োগকারীরা। এ সময় আইন প্রয়োগকারীদের আইন অনুসরণ করার নির্দেশনা দিয়ে ওই আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন বিচারক।
ওদিকে লাহোরের একজন যুবতী বিয়ে করেছেন এক চীনা নাগরিককে। তিনি বলেছেন, তার স্বামী ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তার পরিচয়পত্র কেন ইস্যু করা হচ্ছে না সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার ও ন্যাশনাল ডাটাবেজ অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন অথরিটির কাছ থেকে জবাব চান বিচারপতি শাহিদ করিমের মাধ্যমে। ওই নারীর নাম আসিফা শাহজাদি। তিনি তার আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতকে বলেন, তিনি চীনা নাগরিক ওয়াং ফাই’কে বিয়ে করেছেন। তিনি ইসলাম গ্রহণ করার পর নাম দেয়া হয়েছে আবদুল রশিদ। শাহজাদী বলেন, তিনি তার বৈবাহিক অবস্থা ও স্বামীর নাম উল্লেখ করে পরিচয়পত্র চেয়ে আবেদন করেছেন। কিন্তু তাকে তা দেয়া হচ্ছে না। তার স্বামীর পক্ষে যে ডকুমেন্ট দেয়া হয়েছে তা তারা মানছে না।

No comments

Powered by Blogger.