কার স্বার্থে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধের দামামা?

যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয় মিত্ররা জানিয়ে দিয়েছে, এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি যে এখনই ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেতে হবে।
গত সোমবার ন্যাটো মিত্রদের সঙ্গে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য ব্রাসেলসে গিয়েছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। কিন্তু সেখানে তিনি ন্যাটো পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ইরানের সঙ্গে সামরিক সংঘাতের যৌক্তিকতা প্রমাণে সক্ষম হননি। উল্টো ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রধান ফেদেরিকো মঘেরিনি যেকোনো মূল্যে সামরিক সংঘর্ষ এড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন পম্পেওকে।
একাধিক ইউরোপীয় সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, ইরানের কাছ থেকে কোনো বিশেষ হুমকি তৈরি হয়েছে বলে ন্যাটোর সদস্যরা বিশ্বাস করে না।
ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়ারা ইরাকে মার্কিন সেনাদের জন্য বর্ধিত হুমকি হয়ে উঠেছে—যুক্তরাষ্ট্রের এই দাবি খণ্ডন করে একজন ব্রিটিশ সামরিক কমান্ডার জানিয়েছেন, ইরাকে বা সিরিয়ায় ইরানপন্থী মিলিশিয়াদের অতিরিক্ত কোনো কার্যকলাপের তথ্য তাঁদের কাছে নেই।
এদিকে স্পেন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পারস্য উপসাগরের দিকে অগ্রসরমাণ একটি নৌবহর থেকে নিজেদের ফ্রিগেট সরিয়ে আনার কথা ঘোষণা করেছে। তাদের নৌবাহিনীর সঙ্গে এর আগে যে সমঝোতা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র তা ভঙ্গ করেছে বলে অভিযোগ করেছে স্পেন।
এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও তড়িঘড়ি করে যুদ্ধে যাওয়ার যে কথাবার্তা চলছে, তাতে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন।
জানা গেছে, মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন ইরানে সরকার পরিবর্তনের পক্ষে যেসব গরম-গরম কথা বলছেন, তাতে ট্রাম্প অসন্তুষ্ট।
এক টুইটে ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইরান প্রশ্নে তাঁর প্রশাসনের মধ্যে পরস্পরবিরোধী অবস্থান নেই। তবে কী করা হবে, সে প্রশ্নে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তিনিই নেবেন।
মার্কিন রিপাবলিকান নেতারাও ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ নিয়ে উসকানিমূলক কথাবার্তায় অসন্তুষ্ট বলে জানা গেছে।
পেন্টাগনের সামরিক নেতৃত্ব ইরানের বিরুদ্ধে ১ লাখ ২০ হাজার সৈন্যের অংশগ্রহণে যুদ্ধপরিকল্পনা করেছে বলে তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর রিপাবলিকান নেতারা খোলামেলাভাবেই এই যুদ্ধ মহড়ার কোনো যৌক্তিক ভিত্তি রয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
যুদ্ধের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে এই প্রশ্নে কংগ্রেসের সম্মতি নিতে হবে—এমন দাবি রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক উভয় পার্টির নেতারাই তুলেছেন।
ট্রাম্পের অনুগত হিসেবে পরিচিত ইউটাহ থেকে নির্বাচিত সিনেটর মাইক লি বলেছেন, ‘ইরান বা অন্য যেখানেই আমরা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ি না কেন, এ জন্য অবশ্যই কংগ্রেসের অনুমোদন লাগবে।’
পর্যবেক্ষকেরা অবশ্য বলছেন, যে দ্রুতগতিতে ঘটনা গড়াচ্ছে, তাতে সামান্য কোনো উসকানি থেকে বড় ধরনের যুদ্ধ বেধে যেতে পারে। এই উসকানি শুধু ইরানের কাছ থেকে নয়, এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশ থেকেও আসতে পারে।
ইসরায়েল ছাড়াও সৌদি আরব ও অন্য উপসাগরীয় দেশগুলো ইরানকে তাদের জন্য একটি বড় ধরনের হুমকি মনে করে।
ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের সঙ্গে ইরান রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। সৌদি আরবের চোখে বিষয়টি একটি বড় অপরাধ।
বাহরাইন ও আরব আমিরাতও নিজেদের শিয়া সংখ্যালঘুদের ব্যাপারে ইরানের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট। ইরানকে শায়েস্তা করতে তারা বড় রকমের যুদ্ধ বাধাতে আপত্তি করবে না বলে মনে হয়।
সাবেক মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রবার্ট গেইটস সে রকম একটি আশঙ্কার কথা উল্লেখ করেছেন তাঁর সম্প্রতি প্রকাশিত স্মৃতিকথা ‘ডিউটি’-তে। ২০০৭ সালে সৌদি বাদশা আবদুল্লাহর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের কথা স্মরণ করে গেইটস লিখেছেন, আবদুল্লাহ তাঁকে সরাসরি প্রশ্ন করেন, ইরানকে শায়েস্তা করতে যুক্তরাষ্ট্র এখনো কেন সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। যুক্তরাষ্ট্র না করলে সৌদি আরব একাই তেমন ব্যবস্থা নেবে বলে তাঁকে জানিয়েছিলেন আবদুল্লাহ।

No comments

Powered by Blogger.