মক্কা বৈঠকের প্রস্তুতি নিতে বোল্টনের মধ্যপ্রাচ্য সফর: ইরানই একমাত্র টার্গেট

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালের ৮মে পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ইরানের বিরুদ্ধে একের পর এক নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি সামরিক হামলার হুমকি দিয়েছেন। কিন্তু তেহরান ওয়াশিংটনের এসব নিষেধাজ্ঞা ব্যর্থ করে দেয়ার পাশাপাশি যে কোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নিরাপত্তা উপদেষ্টারা কার্যত: কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন।
পারস্য উপসাগর ও পশ্চিম এশিয়ায় সাম্প্রতিক উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন গত মঙ্গলবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে গেছেন। আমিরাতে পৌঁছে তিনি বলেছেন, "এ অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার জন্য মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করার জন্যই তিনি এখানে এসেছেন।" গণমাধ্যমগুলো এর আগে জন বোল্টনের আবুধাবি সফরের খবর দিয়েছিল। কিন্তু তিনি আমিরাতের কোন কোন কর্মকর্তার সঙ্গে  দেখা করবেন সে বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। এরপর তিনি সৌদি আরব, বাহরাইন, মিশর সফরে যাবেন বলে ধারনা করা হচ্ছে। আগামী ৩০মে মক্কায় আরব ও অন্যান্য মুসলিম দেশের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকের প্রস্তুতি হিসেবে জন বোল্টন মধ্যপ্রাচ্য সফরে বেরিয়েছেন বলে ধারনা করা হচ্ছে।
সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত রবিবার জানিয়েছে, রাজা সালমান ৩০মে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে আমিরাতের ফুজাইরা বন্দরে তেলবাহী জাহাজে হামলার বিষয়ে আলোচনার জন্য মক্কায় আরব দেশগুলোর নেতাদের জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। জাতিসংঘে  নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লাহ আল মোয়াল্লেমি দৈনিক আরব ইন্ডিপেন্ডেন্টকে দেয়া সাক্ষাতকারে ইরানের ওপর আমেরিকার চতুমুর্খী চাপ সৃষ্টিতে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, ইরানকে মোকাবেলার জন্যই এ বৈঠক ডাকা হয়েছে।
পশ্চিম এশিয়ায় চলমান উত্তেজনা ও ইরান ইস্যুতে চলতি সপ্তাহে সৌদি আরবে অন্তত তিনটি জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। আরব লীগ, পারস্য উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ ও ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা বা ওআইসি'র বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
ইরানের কথিত হুমকি মোকাবেলার কথা বলে আমেরিকা এ অঞ্চলে ব্যাপক সামরিক উপস্থিতি ঘটিয়েছে। এ অবস্থায় মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন আরব দেশগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে ফুজাইরা বন্দরে তেলবাহী জাহাজে হামলায় ইরানকে জড়িত করে ও সৌদি আরবে ইরানি হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে তেহরানের বিরুদ্ধে জোট গঠনের চেষ্টা চালাবেন বলে ধারনা করা হচ্ছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পেন্টাগনের একজন কর্মকর্তা দাবি করেছেন, ইরাকের কূটনীতিক এলাকায় রকেট হামলা ও ফুজাইরা বন্দরে জাহাজে হামলার সাথে ইরান ও ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া বাহিনী জড়িত। কিন্তু তেহরান বারবারই এসব হামলার সঙ্গে তাদের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে আসছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, জন বোল্টন সৌদি আরবসহ অন্যান্য মিত্রদের সহযোগিতায় জরুরি বৈঠকের আয়োজন করে এ অঞ্চলে আরো বেশি ইরানভীতি ছড়ানোর চেষ্টা করছেন। অথচ ইরান সবসময়ই উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা চালিয়ে আসছে এবং এ  লক্ষ্যে সম্প্রতি আরব দেশগুলোর সঙ্গে অনাক্রমণ চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.