প্রতি দশ হাজারে ১৭ জন অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন by ফরিদ উদ্দিন আহমেদ

দেশে প্রতি দশ হাজারে ১৭ জন অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন লোক রয়েছে। অটিজম নিয়ে সর্বশেষ ২০১৭ সালের গবেষণায় এই চিত্র উঠে আসে। দেশে ৪৭ হাজার অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মানুষ আছে। প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণ জরিপের হিসাব অনুসারে ১৬ লাখ ৪৪ হাজার প্রতিবন্ধী আছে দেশে। ওই জরিপে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন লোকের এই সংখ্যা পাওয়া যায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)-এর ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াটিক নিউরোডিজঅর্ডার অ্যান্ড অটিজম (ইপনা) উপ-পরিচালক সহযোগী অধ্যাপক ডা. গোপেন কুমার কুণ্ডু বলেন, অটিজম জেনিটিক্যালি হওয়ায় এর ভালো ডায়াগনোসিস হওয়া উচিত। তাহলে এটি চিহ্নিত করা সহজ হবে। তিনি বলেন, ২০১৩ সালের এক জরিপে অটিজমের সংখ্যা ছিল দশমিক ১৫ শতাংশ।
দেশে গ্রামের তুলনায় শহরে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুর সংখ্যা বেশি।
এই সংখ্যা গ্রামে শূন্য দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। আর ঢাকা সিটিতে ৩ শতাংশ বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। ২০১৩ সালের এক গবেষণার ফলাফল তুলে বিএসএমএমইউ-এর ইপনা-এর চিকিৎসকরা বলেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশে এখনো বড় ধরনের কোনো গবেষণা না হলেও কমিউনিটি হেলথ কর্মীরা এই গবেষণা চালিয়েছেন। সাতটি বিভাগের সাত উপজেলায় এবং ঢাকার মিরপুর এলাকায় এই গবেষণা চালানো হয়। এতে ৭ হাজার পরিবারের তথ্য নেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তারা। চিকিৎসকরা ২০১৪ সালের তথ্য তুলে ধরে আরো জানান, ৪২টি ছেলে শিশুর মধ্যে একজন এবং ১৮৯টি কন্যাশিশুর মধ্যে একজন অটিজম শিশু রয়েছে। ৬৮টি শিশুর মধ্যে একজন অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু পাওয়া যাবে। ২০১৪-১৫ সালের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশে ১৪ লাখ ৮২ হাজার প্রতিবন্ধীর মধ্যে ২ দশমিক ৯ শতাংশ হচ্ছে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু। আর বিশ্ব চিত্রে দেখা গেছে, গত ৪০ বছরের বেশি সময়ে অটিজম শিশুর সংখ্যা ১০ গুণ বেড়েছে। অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুদের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতিবছর ২রা এপ্রিল বিশ্বব্যাপী অটিজম সচেতনতা দিবস পালিত হয়। এবার ১২তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে-‘সহায়ক প্রযুক্তির ব্যবহার, অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তির অধিকার।’
জানা যায়, অটিজম কোনো রোগ নয়, এটা শিশুদের মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশজনিত একটি সমস্যা, যা শিশুর সামাজিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধা সৃষ্টি করে। এদের আচরণের পরিবর্তন দেখা যায়। আশেপাশের পরিবেশ ও ব্যক্তির সঙ্গে মৌখিক ও ইশারা ইঙ্গিতের মাধ্যমে যোগাযোগের সমস্যা। অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুরা মা-বাবা বা আপনজনদের ডাকে সাড়া না দিয়ে নীরব থাকে। এই সমস্যাগুলো সাধারণত তিন বছরের মধ্যেই প্রকাশ পায়। যার ব্যাপ্তি সারাজীবন বিদ্যমান থাকে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার এ ‘স্পেকট্রাম’ শব্দের অর্থ হলো প্রত্যেক শিশুর লক্ষণ বিভিন্ন হতে পারে। লক্ষণগুলো স্বল্পমাত্রা থেকে গুরুতর মাত্রায় হতে পারে।
অটিজম কেন হয়? অটিজমের ধরন যেমন এক নয়, তেমনি অটিজমের কোনো একক কারণ নেই বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। বংশগত বা জিনগত- এটা ব্যাপকভাবে গৃহীত। অবশ্য, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, জিনগত ঝুঁকি পরিবেশগত ঝুঁকির দ্বারা প্রভাবিত হয়। চিহ্নিত ঝুঁকির পর্যায়গুলো হলো- অপরিণত বয়সে শিশু জন্মগ্রহণ করলে (অর্থাৎ ২৬ সপ্তাহের কম) বা বেশি বয়সে মা হলে। এফ্রাজাইল এক্সসিনড্রোম, এনজেলম্যান সিনড্রোম, টিউবেরাস সিনড্রোম, ক্রোমোসোম ১৫ ডুপ্লিকেশন সিনড্রোম এবং অন্যান্য একক জিনসমূহ ও ক্রোমোসোমাল ব্যাধি। লক্ষণ ১২ মাস বয়সের মধ্যে আধো আধো বোল না বলা, পছন্দের বস্তুর দিকে ইশারা না করা। ১৬ মাসের মধ্যে কোনো একটি শব্দ বলতে না পারা, ২৪ মাস বয়সের মধ্যে দুই বা ততোধিক শব্দ দিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করতে না পারা, ভাষার ব্যবহার রপ্ত করতে পারার পর আবার ভুলে যাওয়া এবং বয়স উপযোগী সামাজিক আচরণ করতে না পারা।
শনাক্ত ও নির্ণয়: শনাক্তে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার, স্বাস্থ্যকর্মী, স্বাস্থ্য সহকারী/সাকমো/প্যারামেডিকস, প্রশিক্ষিত জনবলের কাছে যেতে হবে। নির্ণয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অভিভাবকদের করণীয় সম্পর্কে চিকিৎসকরা বলেন, লক্ষণগুলো গোপন করবেন না, হতাশ হবেন না, অযথা বিভ্রান্তি থেকে মুক্ত থাকুন। পরিবারের সদস্যরা সম্মিলিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও ধৈর্য ধরুন, সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করুন, শিশুর সঙ্গে খেলুন। অটিজম নিয়ে কিছু ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। যেমন অটিজম-এর কারণ একটি অভিশাপ, জিন বা খারাপ বাতাস থেকে এটি হয়, অটিজম মানে মানসিক প্রতিবন্ধী,  মা এর জন্য দায়ী ইত্যাদি। এগুলোর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। ২০০৭ সালের ১৮ই ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়। ২০০৮ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.