কে জিতবেন রায়গঞ্জে?

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ লোকসভা আসনটির দিকে এখন সবার দৃষ্টি। এই আসন থেকে চার নামী রাজনীতিবিদ অংশ নিচ্ছেন। কে জিতবেন, তাই নিয়ে এখন রাজনৈতিক মহলে হিসাবনিকাশ চলছে। এই আসনে এবার চতুর্মুখী লড়াই নিশ্চিত। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী চার প্রার্থীই শক্তিশালী। চার প্রার্থীরই দাবি, এবার তাঁরাই জিতছেন।
আসলে কে জিতছেন, তা এখনো স্পষ্ট হয়নি। সর্বশেষ নিয়েলসনের জনমত সমীক্ষায় আভাস দেওয়া হয়, এবার পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৮টিতে জিততে পারে ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপি। ওই ৮টি আসনের মধ্যে রয়েছে এই রায়গঞ্জ আসনটি।
রায়গঞ্জ আসনের বর্তমান বা বিদায়ী সাংসদ রয়েছেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতা ও পলিটব্যুরো সদস্য মোহাম্মদ সেলিম। তিনি এবারও এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এই আসনের সাবেক সাংসদ প্রয়াত কংগ্রেস নেতা ও কেন্দ্রীয় সাবেক তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সীর স্ত্রী দীপা দাসমুন্সী। দীপা দাসমুন্সীও ছিলেন কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ আমলের কেন্দ্রীয় নগর উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী। এই আসনটি প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সীর থাকলেও ২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সী তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী থাকাকালে হঠাৎ গুরুতর হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হন। একটানা ৯ বছর কোমায় থাকার পর তিনি প্রয়াত হন ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর।
আসন নিয়ে এখন লড়াই শুরু হয়েছে চার প্রার্থীর মধ্যে। একদিকে বর্তমান সাংসদ মোহাম্মদ সেলিম, অন্যদিকে সাবেক সাংসদ দীপা দাসমুন্সী আর নতুন দুই প্রার্থী বিজেপির দেবশ্রী চৌধুরী আর তৃণমূলের কানাইয়া লাল আগরওয়াল। কানাইয়া লাল ছিলেন এই রায়গঞ্জ আসনের ইসলামপুর বিধানসভার কংগ্রেস বিধায়ক এবং ইসলামপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান। তিনি সম্প্রতি কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলে তৃণমূল তাঁকে এই রায়গঞ্জ লোকসভা আসনের প্রার্থী করে।
আগরওয়াল মনে করেন, কংগ্রেসের কর্মী হিসেবে তাঁর বিরাট জনপ্রিয়তা রয়েছে এই এলাকায়। এবার তিনি তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় বাড়তি জনপ্রিয়তা পাবেন। ভোট বাড়বে। তিনি নিশ্চিত মমতার উন্নয়নের জোয়ারে তিনি জিতে যাবেন। কংগ্রেস বা সিপিএম এখানে দাঁড়াতে পারবে না। কারণ, তাদের আর সেই শক্তি নেই।
বিজেপি এই আসনে প্রার্থী করেছে রাজ্য সাধারণ সম্পাদক দেবশ্রী চৌধুরীকে। দেবশ্রী একজন বিজেপির নারী নেত্রী হিসেবে নিজেকে রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ইসলামপুরের দাড়িভিটা হাইস্কুলে জোর করে উর্দু শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিলে এলাকাবাসীসহ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদে গর্জে ওঠে। তাদের দাবি ছিল, এখানে উর্দু পড়ার কোনো ছাত্র নেই। কেন এখানে উর্দু শিক্ষক নিয়োগ করা হবে? এই নিয়ে গড়ে ওঠা আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর মারা যান দুই সাবেক ছাত্র। আর এই আন্দোলনে নেতৃত্বে চলে এসেছিলেন বিজেপির নেত্রী দেবশ্রী চৌধুরী। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, এবার এই আসন যাবে বিজেপির থলিতে। মানুষ ঘুরে গেছে বিজেপির দিকে। তিনিও নিশ্চিত জয়ের ব্যাপারে। বলেছেন, এই রাজ্যে আর পেরে উঠছে না কংগ্রেস। বাম দল ব্রাত্য হয়ে গেছে। তৃণমূল খুনের রাজনীতিতে মেতেছে। গণতন্ত্র হরণ করেছে। সুতরাং তাঁদের দিন সামনে।
এই রায়গঞ্জ আসনের আরেক শক্তিশালী প্রার্থী হলেন সিপিএমের মোহাম্মদ সেলিম। এবার নির্বাচনের প্রাক্কালে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস-বাম জোট নিয়ে তৎপরতা শুরু হলে বাধা আসে এই রায়গঞ্জ আসন নিয়ে। কারণ, এই আসন থেকে এবার লড়ার জন্য নেমে পড়েন কংগ্রেস নেত্রী দীপা দাসমুন্সী। কিন্তু বাম দল এতে সায় দেয়নি। বাম দল বারবার প্রস্তাব রাখে, গত ২০১৪ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস যে চারটি এবং সিপিএম যে দুটি আসনে জয়ী হয়েছিল, সেই আসনগুলোতে সেই সব দলই প্রার্থী দেবে। কিন্তু এই প্রস্তাব মেনে নিতে পারেনি কংগ্রেস। অগত্যা ভেঙে যায় বাম-কংগ্রেস জোট। লড়াইতে নেমে পড়ে পৃথকভাবে।
তবুও সিপিএম বা বামফ্রন্ট আশাবাদী তারাই ফের এই আসনে জিতবে। গত নির্বাচনে এই আসনে সিপিএম নেতা মোহাম্মদ সেলিম জিতেছিলেন মাত্র ১ হাজার ৬৩৪ ভোটের ব্যবধানে। সেলিম পেয়েছিলেন ৩ লাখ ১৭ হাজার ৫১৫ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী দীপা দাসমুন্সী পেয়েছিলেন ৩ লাখ ১৫ হাজার ৮৮১ ভোট। আর বিজেপি প্রার্থী অভিনেতা নিমু ভৌমিক পেয়েছিলেন ২ লাখ ৩ হাজার ১৩১ ভোট।
এবার গত বছরের ভোট অঙ্ক মিলিয়ে দীপা দাসমুন্সী মনে করেন, জয় তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে। রায়গঞ্জের মানুষ এখনো মনে রাখছেন তাঁদের প্রিয় নেতা প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সীকে। তাই তাঁকে মনে করে এবার রায়গঞ্জের মানুষ কংগ্রসকেই ভোট দেবেন।
চার প্রার্থী জয়ের জন্য আশাবাদ ব্যক্ত করলেও এখনো এটা স্পষ্ট হয়নি যে কে জিততে চলেছেন। চার প্রার্থীই ভোটের হিসাবনিকাশ করে দাবি করেছেন, জয় তাঁদেরই হবে। যদিও এবার এই আসনটি জনমত সমীক্ষার ইঙ্গিতে বিজেপির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। বিজেপি এই আসনে জিততে পারবে কি না সেই প্রশ্নটি এখন পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। কারণ, মমতা তো আগেই ঘোষণা দিয়েছেন এবার এই রাজ্যের ৪২টি আসনই পাচ্ছে তৃণমূল। বিরোধীরা এই রাজ্যে পাবে শূন্য আসন।

No comments

Powered by Blogger.