টিকে থাকবে তো তেরেসা মে’র সরকার

ব্রেক্সিট ইস্যুতে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে’র সরকার টিকে থাকতে পারবে কিনা তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। নিজ দলে বিদ্রোহ। এমনকি মন্ত্রিপরিষদ নিয়েও যে তিনি স্বস্তিতে আছেন তা নয়। এর ওপর সরকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে পার্লামেন্টের। এ অবস্থায় মন্ত্রিপরিষদের আচরণের সমালোচনা করেছেন ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির চিফ হুইপ জুলিয়ান স্মিথ। তিনিই দলে শৃঙ্খলা ধরে রাখেন। বৃটেন নমনীয় ব্রেক্সিট চুক্তি করবে কিনা তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ যখন দ্বিধা-বিভক্ত তখনই এমন সমালোচনার তীর ছুড়েছেন জুলিয়ান স্মিথ। ওদিকে ব্রেক্সিট নিয়ে বৃটেনে যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে তা সমাধানের বিকল্প পন্থা খুঁজে বের করতে সোমবার হাউস অব কমন্সে দ্বিতীয় দফায় ভোট হওয়ার কথা।
গত সপ্তাহে এমপিদের জমা দেয়া বিকল্প প্রস্তাবগুলোর মধ্য থেকে আটটি বাছাই করে পার্লামেন্টে ভোটে দেন স্পিকার জন বারকাউ। কিন্তু কোনো প্রস্তাবই পাস হয় নি। ওই প্রস্তাবগুলো থেকে স্পিকার আবার যাচাই বাছাই করে সোমবার হাতেগোনা কয়েকটি প্রস্তাব ভোটে দিতে পারেন। এর সংখ্যা হতে পারে তিন থেকে চার। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি ও স্কাই নিউজ।
ব্রেক্সিট নিয়ে বিবিসি ডকুমেন্টারি তৈরি করছে। এর নাম দেয়া হয়েছে ‘দ্য ব্রেক্সিট স্টর্ম: লরা কুয়েন্সবার্গস ইনসাইড স্টোরি’। এতে সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে কনজারভেটিভ পার্টির চিফ হুইপ জুলিয়ান স্মিথের। প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে’কে অবমাননা করার চেষ্টা করছেন মন্ত্রীরা- ওই সাক্ষাৎকারে তিনি মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন, আমি প্রত্যক্ষ করেছি মন্ত্রীরা কেবিনেট টেবিলের চারদিকে বসে আছেন। তারা চেষ্টা করছেন তাকে (তেরেসা মে) অস্থিতিশীল করতে। এসব মন্ত্রীর আচরণ সম্পর্কে তিনি বলেন, তাদের এই আচরণ বৃটিশ রাজনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্য বিশৃঙ্খল। ২০১৭ সালের নির্বাচনে যখন সরকার হেরে গেল তখন সরকারের এটা উচিত ছিল যে, ব্রেক্সিট সম্পাদনার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক থাকবে ঘনিষ্ঠ- এটা মেনে নেয়া। তখনই বোঝা উচিত ছিল যে সফট ব্রেক্সিট হতে যাচ্ছে। কিন্তু এখন পার্লামেন্টের দিকে তাকালে বলা যাবে না ব্রেক্সিট কোন ধরনের হবে।
অর্থ বিষয়ক চিফ সেক্রেটারি লিজ ট্রাস বিবিসি রেডিও ৪’কে বলেছেন, এখন পর্যন্ত এমপিরা কাস্টমস ইউনিয়নের প্রতি তাদের অবস্থান দেখান নি। উত্তরটা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর চুক্তি আধুনিকায়নের মধ্যে। ক্রমশ আমরা পরীক্ষাকালীন সময়ের দিকে ধাবিত হচ্ছি। এটা এমন একটা সময় যখন সরকার সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে এবং নানা মুনির নানা মত আসছে।
ব্রেক্সিট সম্পাদনের সময় দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বৃটেনের বেরিয়ে যাওয়ার নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ই এপ্রিল। ফলে প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে পার্লামেন্টের মাধ্যমে তার চুক্তিকে অনুমোদনের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। পর পর তিনবার তার চুক্তি হাউস অব কমন্স প্রত্যাখ্যান করার পর তিনি চতুর্থ ও শেষ দফায় ওই চুক্তি পার্লামেন্টে ভোটে দিতে পারেন। আগেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যদি তার চুক্তিকে পার্লামেন্ট অনুমোদন দেয় তাহলে নির্ধারিত সময়ের আগেই তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ ত্যাগ করবেন। এমন
প্রস্তাবের পরও তৃতীয় দফায় তিনি পরাজিত হন। চতুর্থ দফা যদি তিনি চুক্তি ভোটে দেন এবং তাতেও হেরে যান অথবা যদি হেরে যাবেন এমনটা বুঝতে পারেন তাহলে তিনি বৃটেনে আগাম নির্বাচন ডাকতে পারেন। কিন্তু এর পক্ষেও পার্লামেন্টের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন প্রয়োজন হয়। তা তিনি পাবেন বলে মনে হয় না। কারণ, তার মন্ত্রিপরিষদের অনেকেই প্রকাশ্যে বলে দিয়েছেন নতুন নির্বাচন ডাকলে সেই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে তারা ভোট দেবেন। এমনকি অনেকে পদত্যাগও করতে পারেন বলে বলা হচ্ছে।
সপ্তাহান্তের ছুটির সময়টাতে প্রধানমন্ত্রী তার চুক্তি অনুমোদনের দিকেই দৃষ্টি রেখেছেন। এমপিদের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা চালানো হয়েছে। এক্ষেত্রে  বেঁকে বসা কিছু এমপি হয়তো তাকে সমর্থন দিতে পারেন। কিন্তু সিদ্ধান্তে অটল আছে ডিইউপি। তারা তেরেসা মে’র বিরুদ্ধে ভোট দিতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। তারা আগাগোড়াই এই চুক্তির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.