ডানপন্থী মোদির চ্যালেঞ্জ তিন নেত্রী

চলতি সপ্তাহে শুরু হতে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের লোকসভা নির্বাচন। প্রায় দেড় মাসব্যাপী এই নির্বাচন প্রক্রিয়া চলবে, এর মধ্যেই নির্ধারিত হবে বিশ্বের উদীয়মান পরাশক্তির দেশটির পরবর্তী শাসক কারা হতে যাচ্ছে। দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পরবর্তী মেয়াদের ক্ষমতায় আসার পথে অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রভাবশালী ৩ নারী নেত্রী। তারা হলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, ‘দলিত রাণী’ হিসেবে পরিচিত ৬৩ বছর বয়সী মায়াবতী নয়না কুমারী এবং চলতি বছর জানুয়ারিতে রাজনীতির পারিবারিক ধারায় নাম লেখানো প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।
পশ্চিমবঙ্গ মুখ্যমন্ত্রী: আসন্ন নির্বাচনে মোদির জন্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মমতা। তৃণমূল কংগ্রেসের এই নেত্রীর কাছ থেকে পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয়তা কেঁড়ে নিতে মোদিকে যে এক অগ্নিপরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে তা একেবারে স্পষ্ট। ভারতের এই রাজ্যের জনসংখ্যা জার্মানির থেকে বেশি। ভারতের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় এই রাজ্যে শিক্ষিতের হার তুলনামূলক বেশি এবং একে সাহিত্যিকদের রাজ্য বলেও সম্বোন্ধন করা হয়। এমন রাজ্যে মোদির ডানপন্থী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) যে সুবিধা করতে হলে বাঘিনী মমতার থাবার শিকার হবেন তা সমসাময়িক সময়ে রাজনৈতিক সমাবেশগুলির ভাষণেই স্পষ্ট। ‘এক্সপায়ারি বাবু, চৌকিদার, চাওয়ালা’ এমন কোনো বিষয় নাই যা নিয়ে মোদির সমালোচনা করতে ছেড়েছেন মমতা। ৬৪ বছর বয়সী এই নেত্রীকে মোদির সবচেয়ে গোঁড়া সমালোচকদের মধ্যে একজন হিসেবেই দেখা হয়। এমনকি বাংলার এই দাপুটে নেত্রীর উদ্দ্যেগেই ভারতজুড়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে এন্টি-মোদি জোট গঠন কন্ হয়।
মোদীর ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির আঁচ লাগতে দেয়নি মমতা। তার তৃণমূল কংগ্রেস পার্টির গোঁড়া এই পশ্চিমবঙ্গ, ২০১৪ সালের নির্বাচনে যেখানে সারাদেশে বিজেপির জয়জয়কার সেখানে মমতার তৃণমূল কংগ্রেসই নির্বাচিত হয়ে এসেছে। সাবেক জাতীয় রেলমন্ত্রী মমতা তার নম্র ধৃষ্টতা এবং নিম্নরথার শৈলীর থেকেও ‘দিদি’ (বড় বোন) হিসেবেই সমাধিক জনপ্রিয়।
নিম্ন বর্ণের চ্যাম্পিয়ন: বিচিত্র বর্ণ, ধর্ম, ভাষা, শ্রেণির দেশ ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গণে রঙ্গিন ক্যারিয়ার পার করে দেশটির সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য এবং নির্বাচনের বাজারে সবচেয়ে মূল্যবান পুরস্কার উত্তর প্রদেশের গুরুত্বপূর্ণ তারকা এই মায়াবতী। ২০ কোটি মানুষের উত্তর প্রদেশের দলিত শ্রেণির চ্যাম্পিয়ন মায়াবতী। আসন্ন নির্বাচনে মোদির বিজেপির জন্য মায়াবতীর কাছ থেকে এই উত্তর প্রদেশ ছিনিয়ে নেয়া যে মারাত্মক চ্যালেঞ্জের হতে যাচ্ছে তা বলাই বাহুল্য। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তার বহুজন সমাজ পার্টির (বিএসপি) জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছিল কিন্তু, তিনি তার পরম শত্রু সমাজবাদী পার্টির সাথে একটি জোট গঠন করেছিলেন।
দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা তার ২০১৪ সালের নির্বাচনে ছত্রভঙ্গের পেছনে তার চরমপন্থাকে দোষারোপ করেছেন। ইউএস লিকড ক্যাবল অনুসারে, তিনি একবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে একজোড়া জুতা কিনে নেয়ার জন্য তার ব্যক্তিগত জেট পাঠিয়েছিলেন এবং তার নিজ দলীয় প্রতিকের মূর্তিতে ভরা একটি কংক্রিট পার্ক নির্মাণের জন্যে বিতর্কিত হয়েছিলেন।
তবে, এবার যদি তার দল ভালো করে সেক্ষেত্রে জোটগঠনের আলোচনায় তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সমাজতান্ত্রিক পার্টির পরিচালনাকারী অখিলেশ যাদব একবার তার সঙ্গে একমত হওয়ার সাথে সাথে তিনি বিজেপিকে তার ‘বিভাজন ও শাসন সাম্প্রদায়িক রাজনীতি’ থেকে বের হওয়ার জন্য আহ্বান জানান।
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক: বেশ কয়েক বছর ধরে পর্যবেক্ষন করার পর ভারতের বিখ্যাত নেহরু-গান্ধীর সবচেয়ে তরূণ বংশধর প্রিয়াঙ্কা গান্ধী যোগ দিয়েছেন পারিবারিক রাজনীতিতে। ভারতের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী রাহুল গান্ধীর ক্যারিস্মাটিক ছোট বোনের জন্য উত্তর প্রদেশের থেকে দুর্দান্ত যুদ্ধক্ষেত্র আর কি হতে পারে। হিন্দুত্ববাদী এই রাজ্য মোদি সমর্থকদের একেবারে মূল ভিত্তি। এই রাজ্যে কংগ্রেস পার্টিকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য দায়িত্ব পালন করছেন ৪৭ বছর বয়সী প্রিয়াঙ্কা। যেখানে ২০১৪ সালের নির্বাচনে কংগ্রেসের শোচনীয় পরাজয় হয়েছিল। ৮০টি আসনের মধ্যে মাত্র দুটি আসন জিতেছিল কংগ্রেস আর বিপরীতে মোদির বিজেপি পেয়েছিল ৭১টি আসন।
হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির সনাতনীদের অত্যন্ত পবিত্র নদী গঙ্গায় নৌকায় করে প্রচারে নামার মাধ্যমেই ইন্দিরা গান্ধীর এই নাতনী জানান দিয়েছেন যে, ভানার্সির চ্যালেঞ্জ তিনি মাথার ভেতরে খুব ভালোভাবেই নিয়েছেন। বিশ্লেষকরা এই প্রতীকী প্রচারণাকে হারিয়ে ফেলেননি, বলেছিলেন যে, তার পদক্ষেপটি ছিল সমালোচনার মুখে। তার কংগ্রেস পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু ভোটারকে উপেক্ষা করেছে এবং ভারতের ১৭ কোটি মুসলমানের পক্ষপাতিত্ব করার সমালোচনার জবাব দিয়েছেন।
প্রিয়াঙ্কার ভক্তরা তার সাধারণ স্পর্শকে, তার চেহারা, ইন্দিরা গান্ধীকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। তার দাদী ইন্ধিরা ছিলেন ভারতের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। ১৯৮৪ সালে আততায়ীদের হাতে তিনি নিহত হন।

No comments

Powered by Blogger.