পুরান ঢাকার কেমিক্যাল উচ্ছেদ: অভিযানে ফল আসেনি by শাহনেওয়াজ বাবলু

চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের পর ২৫শে ফেব্রুয়ারি পুলিশের পক্ষ থেকে রাসায়নিক গুদাম ও কারখানার তালিকা ১৫ দিনের মধ্যে জমা দেয়া হবে বলা হয়েছিল। একই আশ্বাস এসেছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকেও। এরপর গত ২৮শে ফেব্রুয়ারি পাঁচটি দলে বিভক্ত হয়ে রাসায়নিক কারখানা ও গুদাম সরাতে সংশ্লিষ্ট সবক’টি সরকারি দপ্তরের প্রতিনিধি নিয়ে অভিযানও শুরু করে বিশেষ টাস্কফোর্স। প্রথমদিকে জোরেশোরে অভিযান চালালেও আস্তে আস্তে তা ঝিমিয়ে যায়। সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিনে অভিযান রাখা হয় বন্ধ। এ ছাড়া অভিযানে গেলেও দু-তিন ঘণ্টা থেকে সাত-আটটি বাড়ি পরিদর্শন শেষে নিজ কার্যালয়ে ফিরে যান কর্মকর্তারা। টাস্কফোর্সের কেমিক্যাল উচ্ছেদ অভিযানের নির্ধারিত সময় শেষ হয় গত ১লা এপ্রিল। সিটি করপোরেশনের তথ্য মতে,  টাস্কফোর্সের অভিযানে দাহ্য রাখার অভিযোগে ১৭০টি বাড়ির পরিসেবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
এর মধ্যে অনেক বাড়ি থেকে অবৈধ কেমিক্যাল এবং গোডাউন সরিয়ে ফেলা হয়। পরে ওইসব বাড়িতে সব ধরণের সংযোগ ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।
সরেজমিনে পুরান ঢাকায় গিয়ে দেখা গেছে, অনেক কারখানা থেকে এখনো মালামাল সরানো হয়নি। কয়েকজন ব্যবসায়ী মানবজমিনকে জানান, তারা এখনো কেমিক্যাল কারখানা স্থানান্তরের বিপক্ষে। রাসায়নিক বা কেমিক্যাল কারখানার পরিবর্তে প্লাস্টিক কারখানাগুলোতে শুরুতেই অভিযান চালানো হয় বেশি। এ কারণে অভিযানের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে ব্যবসায়ীদের বাধার মুখে পড়ে টাস্কফোর্স। এরপর কয়েক দফা বৈঠকের পর ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে গত ১০ মার্চ প্লাস্টিককে অভিযানের আওতামুক্ত ঘোষণা করেন ডিএসসিসির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। এর পর থেকে রাসায়নিকের পাশাপাশি পলিথিন কারখানা ও গুদামে অভিযান চালায় টাস্কফোর্স।
অভিযান পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা জানান, অভিযানের সময় ঠিকমতো রাসায়নিক গুদাম বা কারখানা পাওয়া যায়নি। কারণ ব্যবসায়ীরা খবর পেয়ে অভিযানের আগেই সব রাসায়নিক সরিয়ে নেয়। জানা যায়, পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গুদাম সরকারের পক্ষ থেকে কেরানীগঞ্জসহ অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হতে পারে। এছাড়া শ্যামপুর ও টঙ্গীতে সরকারিভাবে রাসায়নিক সরানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু সেখানে এখনো কোনো গুদাম তৈরি করা হয়নি।
পুরান ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই এলাকায় কয়েক হাজার রাসায়নিক গুদাম রয়েছে। চকবাজারের উর্দু রোডের বাসিন্দা আমজাদ হোসেন বলেন, এটা একটা লোক দেখানো অভিযান হয়েছে। এখনো প্রত্যেকটি বাড়িতে কারখানা এবং গোডাউন রয়েছে। হিসেব করলে পুরো চকবাজার এলাকায় কয়েক হাজার কেমিক্যাল পাওয়া যাবে এখনো।
এ নিয়ে ঢাকা সিটি দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের টাস্কফোর্সের অভিযান ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। আমরা এখন সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করবো। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী রোববার দাহ্য নয় এমন কেমিক্যালের ব্যবসা যারা করেন তাদের সঙ্গে মিটিং রয়েছে। ৯ এবং ১০ তারিখে পুরান ঢাকার সকল কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের নিয়ে আরমানীটোলা মাঠে আমরা এবং ফায়াস সার্ভিস মিলে একটি প্রশিক্ষণশালা করবো। পরে মন্ত্রণালয় গোডাউন শিপ্টিংয়ের জন্য যে জায়গা দিচ্ছে এই সব বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করব।
বাংলাদেশ কেমিক্যাল অ্যান্ড পারফিউম মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বেলায়েত হোসেন মানবজমিনকে বলেন, আমরা রাসায়নিক গুদাম সরানোর বিপক্ষে না। তবে সরিয়ে রাখব কোথায়? সরকার রাসায়নিক সরানোর আলাদা জায়গা বা যত দ্রুত আমাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবে তত দ্রুত আমরা সরে পরবো। যে ২৯টি কেমিক্যাল নিষিদ্ধ করা হয়েছে সেগুলো এখন আর ব্যবসায়ীরা রাখে না। টাস্কফোর্সের অভিযানের পরও কেউ যদি এই নিষিদ্ধ কেমিক্যালের ব্যবসা করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে আমরা বাধা দিব না।

No comments

Powered by Blogger.