একাত্তরের পর পাকিস্তান-ভারত বিমানযুদ্ধ এবারই প্রথম by মাহাদী হাসান

পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে ভারতীয় বিমান বাহিনীর হামলা ১৯৭১ সালে সংঘটিত বাংলাদেশের ঐতিহাসিক মুক্তির সংগ্রামের প্রেক্ষাপটকে সামনে এনেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগীর ভূমিকা পালনকারী ভারত সে সময় পাকিস্তানের অতর্কিত বিমান আক্রমণের শিকার হয়ে পাল্টা জবাব দিয়েছিল। মাঝখানের ৪৮ বছরের মধ্যে কার্গিলে ভারত-পাকিস্তান আনুষ্ঠানিক যুদ্ধও হয়েছে বটে। তবে আকাশ থেকে বোমা ফেলার মতো বিমানযুদ্ধের ঘটনা ঘটেনি। এবারের ভারতীয় বিমান হামলার পর থেকে কাশ্মির সীমান্তজুড়ে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার প্রদর্শনী চলছে।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মিরের পুলওয়ামায় ‘সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশফোর্সের’ গাড়িবহরে আত্মঘাতী বোমা হামলায় বাহিনীটির অন্তত ৪০ সদস্য প্রাণ হারায়। পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মোহাম্মদ হামলার দায় স্বীকার করে। মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ভারতীয় বিমানবাহিনী ৭১-পরবর্তী ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের আকাশসীমায় ঢুকে বিমান হামলা চালানোর পর জানায়, ভেতরে সেই জইশ-মোহাম্মদের ঘাঁটি ধ্বংসের উদ্দেশ্যেই তারা ওই ‘অসামরিক অভিযান’ পরিচালনা করেছে।
এই হামলাকে ‘অসামরিক ও স্বতঃপ্রণোদিত’ দাবি করে ভারত জানায়, জঙ্গিদের উপস্থিতি নিশ্চিত হয়েই তারা পাকিস্তানি ভূখণ্ডে গিয়ে হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তানের দাবি, ভারতীয় বিমান প্রবেশের পর পাকিস্তানি বাহিনী তাদের পিছু হটতে বাধ্য করেছে। এছাড়া বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) তাদের আকাশসীমায় ভারতের দুটি যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করা হয়। ভারতের দাবি, তারাও পাল্টা জবাব দিতে একটি পাকিস্তানি ফাইটার জেট ভূপাতিত করেছে। পাকিস্তান অবশ্য তা স্বীকার করছে না।
পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের ইতিহাসে নজর ফেরালে দেখা যায়, দুই দেশের মধ্যকার বৈরী সম্পর্ক ও পাল্টাপাল্টি গুলির ঘটনা ঘটলেও ১৯৭১ সালের পর এমন বিমান হামলার ঘটনা এবারই প্রথম। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের কাছে পরাজয়ের মুখে ৩ই ডিসেম্বর ভারতের ১১টি বিমান ঘাঁটি ও রাডার স্টেশনে বিমান হামলা চালায় পাকিস্তান। এছাড়া কাশ্মিরে ভারতীয় অবস্থান লক্ষ্য করে বোমাবর্ষণ করে তারা। পাকিস্তান বিমান বাহিনীর ওই হামলার সাংকেতিক নাম ছিল ‘অপারেশন চেঙ্গিস খান।’
হামলার জবাবে একইদিন মধ্যরাতেই ভারত যুদ্ধ ঘোষণা করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। রাত ৯টায় ২৩টি ভারতীয় বিমান পাকিস্তানের ৮টি বিমান ঘাঁটিতে আক্রমণ করে। এছাড়া তখনকার মতো পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণাধীন ঢাকার তেজগাঁও ও কুর্মিটোলা (শাহজালাল) বিমানবন্দরে বোমাবর্ষণ করা হয়। ধ্বংস হয় তাদের ১৮টি বিমান ও একটি হেলিকপ্টার। মাত্র দুইদিনে তাদের নিয়ন্ত্রণ ক্ষুণ্ণ করে আকাশে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে ভারতীয় বিমানবাহিনী।
এর মাঝে ১৯৯৯ সালের মে-জুলাই মাসে কাশ্মিরের কার্গিল জেলায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষ শুরু হলেও বিমান থেকে বোমা বর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। সেবার নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে পাকিস্তানি সেনা সদস্যরা ভারতে ঢুকে কয়েকটি ঘাঁটি দখল করলে এই যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। ধারণা করা হয়, পারভেজ মোশাররফ সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে না জানিয়ে সামরিক সংঘাতের সূচনা করেন। সে বছরই ১২ অক্টোবর একটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সেনাপ্রধান পারভেজ মোশাররফ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেন।
যুদ্ধের ‍শুরুতেই বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে ফেলায় প্রাথমিকভাবে সুবিধা পাচ্ছিলো পাকিস্তানি বাহিনী। স্থানীয়দের কাছ থকে তথ্য নিয়ে ভারত সেই ঘাঁটিগুলো দখলের অভিযান চালায়, যার নাম দেওয়া হয় অপারেশন বিজয়। সেই যুদ্ধে ৫৩০ জন সেনা নিহত হয়েছিলেন। তবে দুইপক্ষের আকাশপথে কোনও বোমাবর্ষণ হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.