এত কষ্ট নিয়ে কীভাবে বাঁচবে ছোট্ট রামিম by পিয়াস সরকার

তরিকুল ইসলাম রামিম। বয়স ১১। বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আবদুর রউফ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। এক বন্ধুর কান ফুটার অনুষ্ঠানে অংশ নিতে মা-বাবা ও চার বছরের ভাইকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছিল। এক রিকশায় ছিলেন পরিবারের চার সদস্য। কিন্তু চুড়িহাট্টার সর্বনাশা আগুন ছোট রামিমকে চিরদিনের জন্য বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে মা-বাবা আর ভাইয়ের আদর থেকে। আগুন লাগার পর বাবা রাশিদুল রামিমকে রিকশা থেকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে তাকে বাঁচানোর চেষ্টায় সফল হয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু স্ত্রী আর ছোট সন্তানকে নিয়ে জীবন্ত দগ্ধ হয়েছেন রিকশায় বসেই।
মারা গেছেন ওই রিকশার চালকও। চোখের সামনে প্রিয় মা-বাবা আর ভাইকে পুড়তে দেখেছে রামিম।
তার ছোট্ট শরীরেও আগুনের হল্কা লেগেছে। ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছে সে। প্রথমে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হলেও এখন ফলোআপ করাতে হচ্ছে। রামিমের বাবা রাশিদুল ইসলাম (৩৯) ছিলেন ব্যবসায়ী। রাজধানীর হাতিরপুলে টাইলসের দোকান আছে তার।
মা সোনিয়া ইসলাম (৩১) গৃহিণী। তারা থাকতেন লালবাগের ৩৬/১ ডুরি আঙ্গুর লেনের পৈত্রিক বাসায়। ২০শে ফেব্রুয়ারি বুধবার রাতে চকবাজারের রামিমের এক বন্ধুর কান ফুটার অনুষ্ঠানে যাচ্ছিল পরিবারটি। চুড়িহাট্টায় পড়েন যানজটের মুখে। রিকশায় ছিলেন তারা। বাবার কোলে ছিল রামিম। মায়ের কোলে সাহির।
রামিমের ভাষ্য অনুযায়ী- হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পায় সে। এরপর দেখে আগুন। আগুন দেখার পর বাবা তাকে রিকশা থেকে নিচে ফেলে দেন। মাথায় আঘাত পায় রামিম। দেখে রিকশায় থাকা তার বাবা-মা-ভাই ও রিকশা চালকের গায়ে আগুন ধরেছে। তাদের চিৎকার কানে আসে অসহায় রামিমের। তার শরীরেও এসে লাগে আগুনের হল্কা। পুড়ে যায় মাথার বাম পাশ। দগ্ধ হয় বাম হাত, পিঠের একাংশ ও বাম পা।
রামিম আরো জানায়- এ সময় কেউ একজন তাকে সেখান থেকে কোলে করে নিয়ে যায়। রামিম তার মামা রায়হান আলমের মোবাইল নাম্বার বলার পর সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলে। উদ্ধারকারী ব্যক্তি রামিমের মামাকে জানান- তার ভাগ্নেকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরে তিনি দ্রুত চলে আসেন ঢামেকে। আগুনে ১৫ শতাংশ পুড়ে যায় রামিমের শরীর। শরীরে করা হয় ব্যান্ডেজ। ঘটনার দিনই রামিমকে প্রাথমিক চিকিৎসা ও ব্যান্ডেজ দিয়ে ছেড়ে দেন চিকিৎসরা।
রামিমের মামাও থাকেন লালবাগে। বোনের বাসার পাশেই। মামার কাছেই পড়তেন রামিম। ঘটনার দিন রাত ৮টার দিকে রামিমের মা ফোন করে বলেন, একটু তাড়াতাড়ি ছাড়তে। বলেন, দাওয়াত খেতে যাবেন। সাড়ে ৮টার দিকে রামিমকে বাসার নিচে দিয়ে আসেন মামা। এই ছিল বোনের সঙ্গে তার শেষ কথা। এই কথা বলতেই অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন রায়হান। এরপর ১০টার দিকে দাওয়াত খাবার উদ্দেশ্যে বের হন তারা। রায়হান আলম আরো বলেন, এই বছরই রামিম বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তির সুযোগ পায়।
এ নিয়ে খুব খুশি ছিল পরিবারের লোকজন। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পরদিন ২১শে ফেব্রুয়ারি লাশের সন্ধানে ঢাকা মেডিকেল মর্গে যায় স্বজনরা। লাশ শনাক্ত করেন তারা। পরের দিন তাদের সমাহিত করা হয় আজিমপুর কবরস্থানে। গতকাল বুধবার মামা ও খালার সঙ্গে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে এসেছিল রামিম। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন রামিম সুস্থ আছে। তার ক্ষত বৃদ্ধি বা সংক্রমণ ধরা পড়েনি। পোড়া স্থানে নতুন করে ব্যান্ডেজ করে দেয়া হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.