বিজয়ী নুরুর নাম শুনেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে ছাত্রলীগঃ ভিসিকে ভিপির চ্যালেঞ্জ

ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে প্রথম বক্তব্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন ডাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নুর। বলেন, আমি ভিসি স্যারকে চ্যালেঞ্জ করছি, যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, আর ছাত্রলীগ একটি পদও পায়, তাহলে স্বেচ্ছায় ভিপি পদ ত্যাগ করে চলে যাবো। আজ ছাত্রলীগের হামলার পর নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে এবং পুন:তফসিল ঘোষণার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সমাবেশে বক্তব্যকালে তিনি এ চ্যালেঞ্জ করেন।  এ সময় তিনি অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘটের ডাক দেন।
বক্তব্যের শুরুতে নুর বলেন, আপনার জানেন ২৮ বছর পর ডাকসুতে নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজের দিকে তাকিয়ে ছিলো সারাদেশ। যখন জাতীয় নির্বাচনসহ অন্যান্য নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি মানুষের বিরূপ ধারনা তৈরী হয়েছে, সেই জায়গা থেকে দেশের মানুষ ডাকসু নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে ছিল। কিন্তু দলকানা প্রশাসন নীলনকশা অনুযায়ী যতরকম কারচুপি করা যায়, তার সবই করেছে।
নবনির্বাচিত ভিপি বলেন, এতো কারচুপির পরও আমাকে আর আখতারকে তারা আটকাতে পারেনি।
তবে অন্যদের আটকাতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি ছাত্রী হলগুলোর উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে শামসুন্নাহার হল, কুয়েত-মৈত্রী হলের মতোই সব ফলাফল হতো। এসময় তিনি ভিসিকে উদ্দেশ্য করে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন।
নির্বাচনের দিনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সব অনিয়ম এবং কারচুপি তুলে ধরায়  রোকেয়া হলের সামনে ছাত্রলীগের লেডি সন্ত্রাসীদের হাতে আমাকে আহত হতে হয়েছে। আজও এই অনিয়মের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় ছাত্রলীগের সেই হাতুড়ি এবং হেলমেট বাহিনী আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।
নুর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অগ্নিস্ফুলিঙ্গ। এখানে কোন অনিয়ম ছাত্রসমাজ মেনে নেবে না। তাদের স্ফুলিঙ্গে সব ছারখার হয়ে যাবে। প্রশাসনের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ছাত্রীদের যৌন হয়রানী ও নিপীড়নকারীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করতে হবে।
প্রহসনের মাধ্যমে আপনাকে জেতানো হয়েছে ছাত্রলীগের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের জবাবে নুর বলেন, ছাত্রলীগ একটা গুজবলীগ। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তাদের অবস্থা হতো শামসুন্নাহার হলের মতো।
ভিপি পদ গ্রহণ করবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, এটা কোন নির্বাচন হয়নি। এতো কারচুপির পরও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। প্রয়োজনে এ পদে থেকেই অনিয়মের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাবো।   
পরে ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে স্বচ্ছ নির্বাচনের দাবিতে অনির্দষ্টকালের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘট ডেকেছেন ডাকসুর নবনির্বাচিত এই ভিপি।
ডাকসু নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি) পদে বিজয়ী হিসেবে নুরুল হকের নাম ঘোষণা করতেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে ছাত্রলীগ।
গতকাল সোমবার দিবাগত রাত সোয়া তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান ডাকসু নির্বাচনের ফল ঘোষণা করেন।
ভিপি পদে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করতেই বিক্ষোভ শুরু করেন উপস্থিত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
ছবি : দিপু মালাকার
ভিপি পদে নির্বাচিত নুরুল হক কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের প্রার্থী।
নুরুল হকের নাম শুনেই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ‘শেইম’ ‘শেইম’ বলে জোরে দুয়োধ্বনি দেন। মিনিট পাঁচেক ধরে তাঁরা বিক্ষোভ দেখান।
বিক্ষোভ কিছুটা কমে এলে ডাকসু নির্বাচনে বাকি পদে বিজয়ী প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন উপাচার্য।
ছবি : দিপু মালাকার
বিজয়ীদের মধ্যে যখন নিজেদের কোনো প্রার্থীর নাম আসছিল, তখন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হাততালি দিয়ে ফলকে স্বাগত জানাচ্ছিলেন।
পুরো ফল ঘোষণা শেষ হলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ফের বিক্ষোভ শুরু করেন। তাঁদের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদে সিনেট ভবনের যেখানে ফল ঘোষণা করা হচ্ছিল, সেখানে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়।
চিৎকার, চেঁচামেচি, হট্টগোল ছড়িয়ে পড়ে পুরো কক্ষে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উপাচার্য অনেকটা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।
ছবি : দিপু মালাকার
একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সিনেট ভবন ছেড়ে ক্যাম্পাসে বেরিয়ে পড়েন। তাঁরা বিক্ষোভ-মিছিল বের করেন।
বিক্ষোভ-মিছিল নিয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে যান। তাঁরা সেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখান।
ছবি : দিপু মালাকার
দীর্ঘ ২৮ বছর ১০ মাস পর ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে উৎসাহ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু গতকাল ভোটের দিনে বেশ কিছু অনিয়মের কারণে তা অনেকটাই ম্লান হয়ে যায়। একপর্যায়ে ছাত্রলীগ বাদে প্রায় সব প্যানেল নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়। ফল ঘোষণা নিয়েও গভীর রাত পর্যন্ত অপেক্ষায় রাখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ছবি : দিপু মালাকার
গত রাত সোয়া তিনটায় ঘোষিত ফলে দেখা যায়, ভোট বর্জন করেও সহসভাপতি (ভিপি) পদে নির্বাচিত হয়েছেন নুরুল হক। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে নির্বাচিত হয়েছেন ছাত্রলীগের গোলাম রাব্বানী। সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) হয়েছেন সাদ্দাম হোসেন। ডাকসুর মোট ২৫টি পদের মধ্যে ২৩ টিতেই ছাত্রলীগের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন।
ছবি : দিপু মালাকার
১৮টি হল সংসদের মধ্যে ১২ টিতে ভিপি পদে জয়ী হয়েছে ছাত্রলীগ। বাকি ছয়টি হলে ভিপি পদে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ছাত্রদের হলে ছাত্রলীগ প্রায় একচেটিয়া জয় পেলেও ছাত্রীদের পাঁচটি হলের মধ্যে চারটিতেই হেরেছে তারা।
ছবি : দিপু মালাকার
ছবি : দিপু মালাকার
ছবি : দিপু মালাকার
ছবি : দিপু মালাকার
ছবি : দিপু মালাকার
ছবি : দিপু মালাকার

No comments

Powered by Blogger.