‘ঘাড় ধরে’ ভোট গ্রহণ

• ব্যালটে কেবল একজন প্রার্থীর নামই থাকে।
• প্রকাশ্যে ব্যালট বাক্সে ভরতে হয় ভোটারকে।
• ভোট দিতে পারার জন্য নেচে-গেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে হয়।
উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং-উন ক্ষমতায় আসার পর গত রোববার দেশটিতে দ্বিতীয়বারের মতো পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। দেশটির ভোটাররা তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে দলে দলে ভোটকেন্দ্রে যান। এই নির্বাচনের সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো, এতে ভোটাররা আসলে প্রার্থী পছন্দের সুযোগ পান না। ব্যালটে কেবল একজন প্রার্থীর নামই থাকে। সেই ব্যালট হাতে নিয়ে প্রকাশ্যে ব্যালট বাক্সে ভরতে হয় ভোটারকে। আর তারপর ভোটকেন্দ্রের প্রাঙ্গণে গিয়ে ভোট দিতে পারার জন্য নেচে-গেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে হয়। এর ব্যত্যয় ঘটলেই বিপত্তি।
পঞ্চাশের দশকে কোরিয়া ভেঙে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া নামে দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। এরপর থেকে কিম পরিবার উত্তর কোরিয়া শাসন করে আসছে। উত্তর কোরিয়ার সব নাগরিককে কিম পরিবারের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রকাশ করতে হয়।
উত্তর কোরিয়ায় তিনটি রাজনৈতিক দল রয়েছে। একটি কিম জং-উনের নেতৃত্বাধীন ওয়ার্কার্স পার্টি। পার্লামেন্টে এই দলটিই সংখ্যাগরিষ্ঠ। বাকি কয়েকটি আসন সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি ও কনডোইস্ট চঙ্গু পার্টির ‘দখলে’ থাকে। দল তিনটি হলেও এসব দলের কাজের ধরন একই। তার ওপর এই ‘পুতুল পার্লামেন্টের’ কোনো ক্ষমতাই নেই।
দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে বসবাসকারী উত্তর কোরিয়াবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ফিয়োদর টারটিটস্কি বলেন, ‘ভোট দিতে গেলে আপনাকে একটি ব্যালট পেপার দেওয়া হবে, যেখানে একটাই নাম থাকবে। পূরণ করার বা সিল দেওয়ার মতো কিছু থাকে না সেখানে। আপনি কেবল ব্যালট পেপারটি নেবেন, আর ব্যালট বাক্সে ভরে আসবেন।’
মিন ইয়ং লি নামে আরেক বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘প্রতিটা ভোটকেন্দ্রের বাইরেই থাকে ‘চিয়ার গ্রুপ’, যাঁরা উৎসব উদ্যাপন করেন। ভোটারদেরও ভোট দিয়ে তাঁদের সঙ্গে যোগ দিতে হয়, ‘বিজ্ঞ নেতৃত্বকে’ ভোট দিতে পারার জন্য উল্লাস প্রকাশ করতে হয়।
জনসংখ্যা গণনা এবং কতজন নাগরিক দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, তা জানতে ও তাঁদের চিহ্নিত করতে এই নির্বাচন উত্তর কোরিয়ার সরকারের জন্য এক মোক্ষম ‘অস্ত্র’।

No comments

Powered by Blogger.