আবার আলোচনায় বেরলুসকোনির সেক্স পার্টি: বিষ প্রয়োগে মডেলের মৃত্যু!

আবার আলোচনায় ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বেরলুসকোনির রগরগে যৌনলীলা ‘বুঙ্গা বুঙ্গা’ পার্টি। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তিনি মিলানের কাছে নিজের বিলাসবহুল বাসভবন ভিলা আরকোরে’তে বসিয়েছিলেন ওই পার্টি। সেখানে ভাড়া করেছিলেন পতিতাদের। তার মধ্যে প্রাপ্ত বয়স্ক নয় এমন বালিকাদের সঙ্গে তিনি অর্থের বিনিময়ে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন বলে অভিযোগ। এ নিয়ে মামলা চলমান। কিন্তু এমন সময়ে ওই বুঙ্গা বুঙ্গা পার্টির প্রত্যক্ষদর্শী, মামলার সাক্ষী, মডেল ইমানে ফাদিল (৩৪) মারা গেছেন।
কেউ মারা যাওয়া স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু মরক্কোয় জন্ম নেয়া ফাদিলকে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
গত বছর মামলা থেকে রেহাই পেতে তাকে অর্থ দিয়েছিলেন বেরলুসকোনি- এমন অভিযোগ আছে। সামনেই ইউরোপীয়ান পার্লামেন্টের এমপি নির্বাচন। সেই নির্বাচনে বহুল বিতর্কিত বেরলুসকোনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে শোনা যাচ্ছে। তবে কি পথের কাঁটা সরিয়ে দেয়ার কোনো চেষ্টা হয়েছে ইমানে ফাদিলের শরীরে বিষ প্রয়োগ করে! এসব নিয়ে পশ্চিমা মিডিয়ায় বিস্তর লেখালেখি।
বৃটেনের একটি ট্যাবলয়েড পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ লিখেছে, নিন্দিত রাজনীতিক সিলভিও বেরলুসকোনি আবার রাজনীতিতে ফেরার চেষ্টা করছেন। তিনি ইউরোপীয়ান পার্লামেন্টের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। কিন্তু ইমানে ফাদিলের মৃত্যু তার সেই বুঙ্গা বুঙ্গা পার্টিকে আবার সামনে এনে দিয়েছে। শুরু হয়েছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। আবার মুখে মুখে ফিরছে তার সেই বুঙ্গা বুঙ্গা পার্টি।
ইমানে ফাদিলের বয়স ৩৪ বছর। তাকে মিলান’স হিউম্যানিটাস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে নিদারুণ যন্ত্রণা ভোগ করার পর ১লা মার্চ মারা গেছেন তিনি। অভিযোগ করা হচ্ছে, তার ওপর বিষাক্ত কিছু প্রয়োগ করা হয়েছে। তার বোন ফাতিমা বলেছেন, ফাদিলের পেট ফুলে গিয়েছিল। চোখ হলুদ হয়ে গিয়েছিল। চোখে কালো দাগ পড়েছিল। নাক দিয়ে মাঝে মাঝেই রক্ত আসছিল। এমন অভিযোগে ফাদিলের ময়নাতদন্ত হয়েছে মঙ্গলবার। মারা যাওয়ার আগে তিনি আইনজীবী ও মেডিকেল স্টাফদের বলে গিয়েছেন, তার শরীরে বিষাক্ত কিছু প্রয়োগ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার যে ময়নাতদন্ত হয়েছে তাতে দেখা গেছে তার শরীরে উচ্চ মাত্রায় বিষাক্ত পদার্থ আছে। এর মধ্যে রয়েছে ক্যাডমিয়াম, কোবাল্ট, নিকেল ও ক্রোম। এর মধ্যে ব্যাটারি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় ক্যাডমিয়াম। এ ছাড়া বিপুল পরিমাণে অন্যান্য বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
মিলানের ভিলা আরকোরে’তে ক্ষমতায় থাকার সময় সপ্তাহে তিনবার যুবতীদের নিয়ে যে উদ্দাম পার্টির আয়োজন করতেন সিলভিও বেরলুসকোনি, তাতে যারা উপস্থিত থাকতেন তার মধ্যে অন্যতম ইমানে ফাদিল। ওই রগরগে পার্টিতে আমন্ত্রণ জানানো হতো পতিতাদের। বাইরে থেকে এমন পার্টির নাম দেয়া হয়েছিল সেক্স পার্টি। তখন ওই ভিলার ভেতরে যুবতীদের নগ্ন হয়ে হাঁটা, নাচার দৃশ্য প্রকাশ হয়েছিল পত্রিকায়। খবরে ঠাসা ছিল পশ্চিমা মিডিয়া। ল্যাপ-ড্যান্সে যে যুবতী বিজয়ী হতেন তাকে সিলভিও বেরলুসকোনির সঙ্গে ঘুমানোর আমন্ত্রণ জানানো হতো।
এ নিয়ে যে মামলা হয়েছে তাতে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সাক্ষ্য দেয়ার সাহস দেখিয়েছিলেন ইমানে ফাদিল। এ ছাড়া তিনি একটি বই লিখছিলেন। তাতে ভিলা আরকোরের ভেতরে ওই পার্টিতে কি সব শয়তানি কর্মকাণ্ড পরিচালনা হতো তা তুলে ধরছিলেন। এ ছাড়া উৎকোচ গ্রহণের একটি মামলায় তার কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর কথা ছিল। অভিযোগ আছে যে, বেরলুসকোনি যাতে রাজনীতিতে ফিরতে পারেন, স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন, সে জন্য এই মামলা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য, গত বছর সাক্ষী হিসেবে ফাদিলকে অর্থ দিয়েছিলেন বেরলুসকোনি, যাতে তিনি উল্টো সাক্ষ্য দেন আর মুক্তি পান বেরলুসকোনি। তবে তাতে সম্ভবত থামেন নি ইমানে ফাদিল। মুখ খোলার জন্য তাকে হয়তো বেরলুসকোনির চেয়ে অনেক বেশি অর্থ দেয়া হয়ে থাকতে পারে। সিলভিও বেরলুসকোনির বয়স এখন ৮২ বছর। ইতালির একটি পত্রিকা দাবি করেছে, তার সঙ্গে মডেল ইমানে ফাদিলকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন সিরিয়ার ব্যবসায়ী সায়েদ গানায়ামি। তিনি বারগামোতে স্টিল কারখানা পরিচালনা করেন। ওদিকে ইমানে ফাদিলের শরীরে বিষাক্ত পদার্থ প্রয়োগ করার কথা অস্বীকার করেছেন বেরলুসকোনি। এমন কি তাকে তিনি চেনেনই না বলে দাবি করেছেন।
তবে চারদিকে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে যে, তার যেসব সাঙ্গপাঙ্গ আছে আন্ডারওয়ার্ল্ডে তাদের কেউ একজন ইমানে ফাদিলের শরীরে বিষাক্ত পদার্থ প্রয়োগ করে থাকতে পারে। এ অবস্থায় ইমানে ফাদিল যে বইটি লিখছিলেন তার পাণ্ডুলিপি জব্দ করেছে মিলানের প্রসিকিউটররা। তারা হত্যার তদন্ত শুরু করেছে। ফাদিলের লেখা বইটির নাম- ‘আই মিট দ্য ডেভিল’। অর্থাৎ আমি শয়তানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি।
যদিও প্রাথমিক পরীক্ষায় তার শরীরে তেজস্ক্রিয়তা থাকার কথা অস্বীকার করা হয়েছে, তবু ইতালির শীর্ষ স্থানীয় প্যাথলজিস্ট ক্রিস্টিনা ক্যাটানিও ও তার টিম ইমানে ফাদিলের মৃতদেহ মঙ্গলবার পরীক্ষা করার সময় পরে নিয়েছিলেন ‘এন্টি-নিউক্লিয়ার স্যুট’ অর্থাৎ পারমাণবিকতা বিরোধী পোশাক। তাদের পরীক্ষার রিপোর্ট আগামী ৬ সপ্তাহের মধ্যে প্রকাশ হওয়ার কথা রয়েছে। বেরলুসকোনি যেখান থেকে নির্বাচনে দাঁড়াতে চাইছেন সেই আসনে নির্বাচনের সামান্য আগে প্রকাশিত হবে ওই রিপোর্ট। আইনজীবী পাওলো সেভেসিকে মারা যাওয়ার আগে ইমানে ফাদিল বলে গিয়েছে, তার শরীরে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে। তবে প্রসিকিউটররা আশা করছেন, আসলে কি ঘটেছিল ইমানে ফাদিলের তা রিপোর্ট প্রকাশ হলেই জানা যাবে। তারপরই নির্ধারিত হবে বেরলুসকোনির ভাগ্য, যিনি নিজেকে ‘জেসাস ক্রাইস্ট অব পলিটিক্স’ বা রাজনীতির যিশু খ্রিস্ট বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
সিলভিও বেরলুসকোনি কেলেঙ্কারির ৯ বছর
২০১০ সালের অক্টোবর: বেরলুসকোনির বাসভবন থেকে চুরির অভিযোগ করা হয় ১৭ বছর বয়সী পতিতা কারিমা আল মাহরুজের বিরুদ্ধে। তিনি রুবি দ্য হার্ট স্টিলার হিসেবেও পরিচিত। বুঙ্গা বুঙ্গা পার্টিতে তিনিও উপস্থিত ছিলেন এবং তার অপ্রাপ্ত বয়স্ক এই রুবির সঙ্গে অর্থের বিনিময়ে বেরলুসকোনি যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন বলে অভিযোগ আছে। এই অভিযোগ নিয়ে তখন তোলপাড় হয় ইতালির রাজনীতি। একপর্যায়ে রুবিকে চুরির দায় থেকে পুলিশ যেন মুক্ত করে দেয় এমন দাবি করেন সিলভিও বেরলুসকোনি।
২০১৩ সাল: অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালিকাদের সঙ্গে অর্থের বিনিময়ে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগে অভিযুক্ত হন বেরলুসকোনি। এ অভিযোগে তাকে সাত বছরের জেল দেয়া হয়।
২০১৮ সাল: এ বছর বিচারকরা তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ উল্টে দেন। তারা বলেন, বেরলুসকোনি যা করেছেন তাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা যায় না।
২০১৯ সালের জানুয়ারি: ২০১২ সালে বেরলুসকোনির বিরুদ্ধে মামলায় সাক্ষ্যপ্রমাণ দিয়েছিলেন মডেল ইমানে ফাদিল। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। অভিযোগ করা হয়েছে, তার শরীরে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে। অবশেষে ১লা মার্চ ফাদিল মারা যান। তার শরীরে পাওয়া যায় উচ্চ মাত্রার রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি। এ বছরেই মে মাসে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের নির্বাচনে দাঁড়াবেন বেরলুসকোনি।
অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালিকাদের সঙ্গে অর্থের বিনিময়ে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়ে মামলায় বেরলুসকোনির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন আরেকজন মডেল। তিনি ফিলিপাইনের বংশোদ্ভূত মডেল আমব্রা বাত্তিলানা। তিনি বলেছেন, ইমানে ফাদিলের ভাগ্যে যা ঘটেছে তা অত্যন্ত উদ্ভট বিষয়। তিনি একটি বই লিখছিলেন। আর এমন সময় তাকে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে। বিষয়টি ভাবলেই গা ছম ছম করে ওঠে।
২০১২ সালে বেরলুসকোনির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়ার পর নিজের জীবন নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বাত্তিলানা। ফলে তিনি নিরাপত্তার জন্য পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে।

No comments

Powered by Blogger.