শিক্ষকদের এ কেমন ভুল! by ইব্রাহিম খলিল

এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনে এবার প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকানো গেলেও অব্যবস্থাপনা ঠেকানো যায়নি। পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্বশীল শিক্ষকরা ভুল প্রশ্নপত্র সরবরাহ করেছে চট্টগ্রাম বোর্ডের আওতাধীন সাত কেন্দ্রের কিছু কক্ষে। এতে বিপাকে পড়েছে প্রায় তিন শতাধিক পরীক্ষার্থী। 
তবে ভুল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দেয়ায় শিক্ষার্থীদের কোনো ক্ষতি হবে না বলে আশ্বস্ত করেছে বোর্ড কর্তৃপক্ষ। ভুলের কারণ জানতে সাত কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিবদের তিন দিনের মধ্যে কারণ জানাতে শোকজ করা হয়েছে বোর্ডের পক্ষ থেকে।
শোকজ হবে, শোকজের জবাবও হবে। কিন্তু ২০১৯ সালের এসএসসি পরীক্ষা দিতে এসে যদি ২০১৮ সালের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিতে হয়- এটা কেমন হলো? এটা কেমন ভুল শিক্ষকদের? কেমন দায়িত্বশীলতা? এমন হাজারো প্রশ্ন এখন সংশ্লিষ্ট মহলে।
বিশেষ করে সাতটি কেন্দ্রের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক মহলের মাঝে নানা প্রশ্ন ও ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে। কেন্দ্রগুলো হচ্ছে-ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মিউনিসিপ্যাল মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, পতেঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়, গরীবে নেওয়াজ উচ্চ বিদ্যালয় এবং কক্সবাজারের পেকুয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, উখিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও উখিয়া পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়।
এসব কেন্দ্রের বিভিন্ন কক্ষে নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ২০১৮ সালের প্রশ্নপত্র বিলি করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ দেয়ার পরও অনেক কেন্দ্রের পরিদর্শকরা প্রশ্নপত্র পরিবর্তন করে দেয়নি।
এসব পরীক্ষা কেন্দ্রে বাস্তবে কি হয়েছিল জানতে চাইলে ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্র সচিব ও প্রধান শিক্ষক সাহেদা বেগম বলেন, আমাদের পরীক্ষা কেন্দ্রের কয়েকটি কেন্দ্রে ভুলক্রমে গত বছরের প্রশ্নপত্র বিলি হয়েছে। এতে নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের গত বছরের সিলেবাসের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিতে হয়েছে। আমাদের হিসেবে তা ১৯ জন হতে পারে। তবে ১৪ জন শিক্ষার্থী রিপোর্ট করেছে।
কেন এমন হলো- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভুলক্রমে গত বছরের সিলেবাসের পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্রের প্যাকেটটি নিয়মিত প্রশ্নপত্রের প্যাকেটের সঙ্গে মিশে যায়। এতেই সমস্যা হয়েছে।
বোর্ডের নির্দেশনা রয়েছে পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে অনিয়মিত পরীক্ষার্থীরা থাকতে পারবে না-তাহলে কি আপনার কেন্দ্রে নিয়মিত ও অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের একই কক্ষে সিট বসানো হয়েছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যাঁ, শুধুমাত্র এফ গ্রেডের শিক্ষার্থীদের আলাদা কক্ষে রাখা হয়েছে। এতে কি বোর্ডের আদেশ ভঙ্গ হলো না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একটু ভুল হয়ে গেল।
একই অভিযোগ অন্যান্য পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও। নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের কাছে অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্র বণ্টন করা হয়েছে। তবে এ ঘটনা ঘটেছে শুধুমাত্র বাংলা প্রথম পত্রের নৈর্ব্যত্তিক প্রশ্নপত্রে। সৃজনশীল প্রশ্নপত্রে কোনো সমস্যা হয়নি।
কেন এমন ঘটলো- জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহবুব হাসান বলেন, এবারের পরীক্ষায় ২০১৬, ২০১৮ ও ২০১৯ সালের সিলেবাসের পরীক্ষার্থীরাও অংশ নিচ্ছে। নিয়মিত ও অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে প্রশ্নপত্র বণ্টন নিয়ে সমস্যা হতে পারে বিবেচনা করে আমরা অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের পৃথক রুমে সিট বসানোর জন্য কেন্দ্র সচিবদের নির্দেশনা দিয়েছি।
তিনি বলেন, বোর্ডের আওতায় ১৯০ পরীক্ষা কেন্দ্রের মধ্যে সাতটি কেন্দ্র ছাড়া অন্য কোথাও এ সমস্যা হয়নি। ওই সাত কেন্দ্রের সচিবরা নির্দেশনা না মানার কারণেই এ সমস্যা হয়েছে।
প্রশ্নপত্র বিলি করার সময় কক্ষ পরিদর্শক তো দেখছেন এটি কোন্‌ সালের পরীক্ষার্থীদের জন্য প্রশ্নপত্র। তারপরও কেন এমন হলো- জবাবে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে অবশ্যই কক্ষের পরিদর্শকরা দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। এখানে শিক্ষকের দায়িত্ব এবং অজ্ঞতারও প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
এ ছাড়া পরিদর্শক প্রশ্নপত্র পরিবর্তন করে দিতে পারতেন। এমনও অভিযোগ পাওয়া গেছে, শিক্ষার্থীরা বলার পরও অনেক কক্ষ পরিদর্শক তা পরিবর্তন করে দেননি।
এ বিষয়ে বোর্ডের পদক্ষেপ কি জানতে চাইলে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহবুব হাসান বলেন, আমরা তিন কার্যদিবসের মধ্যে পুরো ঘটনা জানাতে কেন্দ্র সচিবদের নোটিশ দিয়েছি। তাদের শোকজ করা হয়েছে। কোন কোন শিক্ষার্থী ভুল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিয়েছে, তাদের রোল নম্বর চাওয়া হয়েছে। সবকিছু পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে প্রায় ৩০০ পরীক্ষার্থীর ক্ষেত্রে হয়তো এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে।
এই পরীক্ষার্থীদের ভাগ্যে কী ঘটবে-উত্তরে তিনি বলেন, তাদের আশঙ্কা বা চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। পরীক্ষার্থীরা কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

No comments

Powered by Blogger.