এমন ইলেকশন হলে দেশে শান্তির ঢল নামতো by জাবেদ রহিম বিজন, মাহবুব খান বাবুল ও ইসহাক সুমন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) নির্বাচনী এলাকার আশুগঞ্জে স্থগিত ৩ কেন্দ্রে সুষ্ঠু ভোট গ্রহণের মডেল সৃষ্টি করেছে নির্বাচন কমিশন। আর এই ব্যবস্থায় খুশি ভোটাররা। সোহাগপুর কেন্দ্রে সলিম মিয়া নামের এক ভোটার বলেন- এমন শান্তির ইলেকশন হলে বাংলাদেশে শান্তির ঢল নামতো। সোহাগপুর কেন্দ্রে ফারুক হোসেন বলেন- জীবনে অনেক ভোট দিছি। এমন অবস্থা কখনো পাইনি। গত ৩০ তারিখ কি অবস্থাডা না অইছিল। এরে মাইরালা, হেরে ধইরালা। কি যে ভয়াবহ কাণ্ড।
আজকের দিন একটা ইতিহাস।
গতকাল ওই তিন কেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েক শ’ সদস্য মোতায়েন করা হয়। ১২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ৩জন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দায়িত্ব পালন করেন এসব কেন্দ্রে। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে আসা ৩ জন কর্মকর্তাও সার্বক্ষণিক উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রে। তবে ভোটারের উপস্থিতি ছিল নগণ্য। ৩ কেন্দ্রের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গোটা উপজেলাকে ঢেকে ফেলা হয় নিরাপত্তার চাদরে। ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন নানা অনিয়মের অভিযোগে আশুগঞ্জ উপজেলার যাত্রাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সোহাগপুর দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বাহাদুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়। ওই তিন কেন্দ্রের ১০৫৭৪ জন ভোটারের ভোট গ্রহণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল চোখে পড়ার মতো। ৩৩৯ জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয় কেন্দ্র ৩টিতে। পুলিশের ১৩টি মোবাইল টিম এবং ৭টি স্ট্রাইকিং ফোর্স কেন্দ্র তিনটি ছাড়াও টহল দেয় গোটা উপজেলা। একেক কেন্দ্রে ২৪ জন পুলিশ ও ১২ জন আনসার সদস্য নিয়োজিত করা হয়। এ ছাড়া ২ প্লাটুন বিজিবি ও ২ প্লাটুন র‌্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়। নিরাপত্তার এ বিষয়টিও হয়ে উঠে দেখার মতো। প্রত্যেক কেন্দ্রের মাঠ ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের গাড়িতে ঠাসা। সোহাগপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শফিকুর রহমান বলেন- সরকার এবং নির্বাচন কমিশন চাচ্ছে নির্বাচন যেন সুষ্ঠু হয়। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী সেজন্য সবধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
ভোটাররা খুশি এই নিরাপত্তায়। তবে ব্যাপক কড়াকড়ির কারণে এবং পরিচয়পত্র দেখিয়ে ভোট দেয়ার কথা বলায় ভোটার উপস্থিতি ছিল নগণ্য। তবে সোহাগপুর কেন্দ্রটিতে ভোটারদের উপস্থিতি সকাল ১০টা পর্যন্ত ছিল উল্লেখ করার মতো। এরপরই কেন্দ্রটি ফাঁকা হয়ে যায়। এর আগে প্রত্যেক সারিতে ৪০/৫০ জন করে ভোটার ছিল। বাহাদুরপুর কেন্দ্রে সকাল সোয়া ১০টায় পুরুষের ভোটের সারিতে ৫/৬ জন ভোটার দেখা গেছে। মহিলা সারিতেও ছিল একই অবস্থা। যাত্রাপুর কেন্দ্র সকাল থেকেই ছিল ফাঁকা। মাঝেমধ্যে ২/১ জন করে এসে ভোট দিয়েছেন। বেলা ১২টা পর্যন্ত এই কেন্দ্রে ভোট পড়ে ৯শ’। কেন্দ্রের মোট ভোটার ৩০১২। এই কেন্দ্র থেকে ভোট দিয়ে ফেরার পথে হালিমা বেগম (৭০) বলেন- আগের ভোটে বিরাট গ্যাঞ্জাম হয়েছে। কেন্দ্রের বাইরে অনেক ঝামেলা ছিল। ভোট দিতে ভয় পাইছি। সারাক্ষণ চিন্তায় ছিলাম না জানি কি হয়। এবার আগের অবস্থা আর নাই। খুব ভালো লাগছে। শান্তি পাইছি। এমন ভোটই আমরা চাই। সঙ্গে থাকা তার মেয়ে ফরিদা ইয়াছমিন (২৮) বলেন- প্রশাসনের এত লোক আগে কোনো সময় দেখিনি। এদের কারণেই আজকে নিরিবিলি ভোট দিলাম। আজকে কেন্দ্রে আসতে কোনো ভয় পাইনি। তাজুল ইসলাম (৭৩) নামের আরেক ভোটার বলেন-লোক একদম কম। এমন পরিবেশে জীবনে কোনোদিন ভোট দিতে পারিনি।
৩০ ডিসেম্বর এই আসনের মোট ১৩২ কেন্দ্রের মধ্যে ১২৯ কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এতে বিএনপির উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া পান ৮২ হাজার ৭২৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগ যুগ্ম সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবকলীগ সহসভাপতি মো. মাঈন উদ্দিন মইন ‘কলার ছড়ি’ প্রতীকে পান ৭২ হাজার ৫৬৪ ভোট। তাদের দু-জনের ভোটের পার্থক্য দাঁড়ায় ১০ হাজার ১৫৯। আর স্থগিত তিন কেন্দ্রে ভোট রয়েছে ১০৫৭৪টি।

No comments

Powered by Blogger.