চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদের বিপক্ষে বৃটিশ পার্লামেন্ট

খসড়া ব্রেক্সিট চুক্তি, নয়তো কোনো চুক্তি ছাড়াই বিচ্ছেদ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ তথা  ব্রেক্সিট ইস্যুতে বৃটিশদের সামনে এ দুইটি পথ খোলা রেখে এগোচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে’। খসড়া ব্রেক্সিট চুক্তির বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে বৃটেনে সমালোচনার ঝড় বইছে। চেকার্সের ওই খসড়া চুক্তির সঙ্গে ভিন্নমত প্রকাশ করে ইতিমধ্যে পদত্যাগ করেছেন বৃটিশ সরকারের প্রভাবশালী একাধিক মন্ত্রী। এবার চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বৃটিশ এমপিরা। পার্লামেন্টে মঙ্গলবার একটি অর্থ বিলে চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটকে বাধার মুখে ফেলবে এমন সংশোধনী আনার জন্য ভোটাভুটি হয়। এতে ৩০৩-২৯৬ ভোটে এমপিরা জানিয়ে দেন, তারা চুক্তি ছাড়া বৃটেনের ইইউ ত্যাগ মেনে নেবেন না। আর এর মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে’ পার্লামেন্টে লজ্জাজনক পরাজয়ের মুখে পড়লেন।
অর্থাৎ তার কোনো বিকল্পের ওপরই আস্থা রাখতে পারছেন না বৃটিশরা। আগামী ১৫ই জানুয়ারি খসড়া ব্রেক্সিট চুক্তির ওপর ভোটাভুটি হওয়ার কথা রয়েছে। স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে যে, ওই ভোটেও বড় ব্যবধানে হারবেন প্রধানমন্ত্রী।
বৃটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, নিজ দলীয় ও লেবার পার্টির এমপিদের কাছে লজ্জাজনক হারের মুখোমুখি হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে’। এসব এমপি চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টের ক্ষমতা প্রদর্শন করেছেন। চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট রোধ করতে লেবার পার্টির এমপি ইভেতি কুপার মঙ্গলবার একটি অর্থ বিলে সংশোধনী আনার প্রস্তাব দেন। এ সংশোধনীতে বৃটিশ প্রশাসনের ক্ষমতা কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে। অর্থাৎ চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটের পর কর আইনে পরিবর্তন করার জন্য বৃটিশ প্রশাসনকে পার্লামেন্টের অনুমোদন নিতে হবে। শুধুমাত্র প্রশাসনিক ক্ষমতা এক্ষেত্রে যথেষ্ট হবে না। এ ছাড়া এই বিলের কারণে চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট প্রতিরোধে পার্লামেন্টের আরো কিছু পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
মঙ্গলবারের ভোটে কনজারভেটিভ পার্টির ২০ সদস্য সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দেয়। এদের মধ্যে সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মাইকেল ফ্যালন ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী জাস্টিন গ্রিনিংও রয়েছেন। এদিন কনজারভেটিভ পার্টির এমপি অলিভার লিটউইন এক আবেগঘন বক্তৃতায় বলেন, ‘আমি আমার সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দিচ্ছি। অনেকটাই আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে। মার্চের শেষ পর্যন্ত আমি এটাই করে যাবো।’
সংস্কার বিল পাস করানোর ক্ষেত্রে যারা বেশি উদ্যমী ছিলেন, তাদের মতে এই বিল হয়তো চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটের প্রস্তুতিতে তেমন প্রভাব ফেলবে না। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল পার্লামেন্ট সদস্যদের উজ্জীবিত করা যে, এখানে চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট রুখে দেয়ার মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। পার্লামেন্টে ভবিষ্যতে উত্থাপিত বিলগুলোতেও দীর্ঘ মেয়াদে এর প্রভাব পড়বে। হাউস অব কমন্সে দেয়া বক্তৃতায় লেবার পার্টির এমপি কুপার বলেন, পার্লামেন্টারিয়ানরা এখন চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদের ভয়াবহতার বিষয়ে একমত। তিনি বলেন, আমি উদ্বিগ্ন ছিলাম যে, হয়তো সফল হবো না। পার্লামেন্ট হয়তো চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট রুখে দেয়ার সক্ষমতা অর্জন করবে না। এ অবস্থায় আমাদের কিছু দায়িত্ব পালন করা দরকার।

No comments

Powered by Blogger.