ইরানে হামলা চালানোর পরিকল্পনা নিতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল

পেন্টাগনকে ইরানে সামরিক হামলা চালানোর পরিকল্পনা নিতে গত বছর নির্দেশ দিয়েছিল হোয়াইট হাউস। সেপ্টেম্বরে ইরাকে দুটি ঘটনার পর এমন নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। প্রথম ঘটনায় বাগদাদের যে কূটনৈতিক এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস তার কাছে শিয়া মিলিশিয়ারা তিনটি মর্টার শেল নিক্ষেপ করে। এর দু’একদিন পরেই বসরা নগরীতে যুক্তরাষ্ট্রের কনসুলেটের কাছে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের ছোড়া দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছিল। এরপরই প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বল্টন নেতৃত্বাধীন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল ওই পরিকল্পনার নির্দেশ দিয়েছিল পেন্টাগনকে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে লন্ডনের অনলাইন দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
এতে বলা হয়, এমন নির্দেশের পর পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা বলশূন্য হয়ে পড়েছিলেন। এসব কথা বলেছেন বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা।
যদিও প্রশাসনের ক্ষেত্রে ভবিষ্যত একটি যুদ্ধের পরিকল্পনা স্বাভাবিক অংশ, কিন্তু যেভাবে যে সুরে ওই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল তাতে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মতে, জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক সাবেক উপ উপদেষ্টা মিরা রিকার্ডেল। তিনি ইরাকের ওই হামলাকে যুদ্ধের পরিণতি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। সে অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সাবেক একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, এমন নির্দেশে লোকজন অবশ্যই হতাশ হয়েছিল। কিভাবে ইরানে হামলা চালানো হবে তা নিয়ে অনেকেরই মন চমকে উঠেছিল।
জন বল্টনের নির্দেশের পর পেন্টাগন কাজ সম্পন্ন করেছিল। তবে এ বিষয়টি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানতেন কিনা অথবা পরিকল্পনাটি কতটা গুরুত্বপূর্ণভাবে এগুচ্ছিল সে সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু জানা যায় নি। ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর নীতি অবলম্বন করেন জন বল্টন। সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে তিনি ইরানকে সতর্ক করেছিলেন। বলেছিলেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র বা তার কোনো মিত্রের কোনো ক্ষতি করে ইরান তাহলে তাদেরকে নরকে পাঠিয়ে দেয়া হবে।
উল্লেখ্য, ইরানের সঙ্গে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার করা পারমাণবিক চুক্তি ২০১৮ সালের মাসে প্রত্যাহার করেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন বারাক ওবামা। এর বাইরে ছিলেন বৃটেন, চীন, রাশিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইউরোপিয় ইউনিয়নের নেতারা। চুক্তিটি হয়েছিল ২০১৫ সালে। রোববার জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের গ্যারেট মারকুইস এক বিবৃতিতে বলেছেন, বিভিন্ন রকম হুমকির বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে প্রেসিডেনটকে নীতিগ্রহণে সমন্বয় করে তার প্রতিষ্ঠান। তিনি আরো জানান, বাগদাদে দূতাবাস ও বসরায় যুক্তরাষ্ট্রের কনসুলেটে হামলা করার উদ্দেশ্য রিভিউ করা হচ্ছে। তাদের নিরাপত্তা ও যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণাঙ্গ স্বার্থ রক্ষা করবো আমরা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এরই মধ্যে মধ্যপ্রাচ্য সফর শুরু করেছেন। এর উদ্দেশ্য ইরানের বিরুদ্ধে তার প্রশাসনের অবস্থানকে সামনে ঠেলে দেয়া। রোববার কাতার থেকে তিনি সৌদি আরবে গিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে ওই অঞ্চলে ইরান যে হুমকি হয়ে উঠছে তার বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছেন। গত সপ্তাহে মাইকেল পম্পেও একটি ঘোষণা দিয়েছেন। তাতে তিনি বলেছেন, ফেব্রুয়ারিতে ইরান ইস্যুতে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করবে পোল্যান্ড। তার এ ঘোষণায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ইরান। এর জবাবে রোববার পোল্যান্ডের ওয়ারশতে নিযুক্ত ইরানের শীর্ষ কূটনীতিককে দেশে তলব করে এবং পোলিশ চলচ্চিত্র উৎসব থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়।

No comments

Powered by Blogger.