ইভিএম ব্যবহার হলে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মামলার হুঁশিয়ারি

একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হলে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ইভিএম সংক্রান্ত এক সেমিনারে ফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও জেএসডি’র সভাপতি আ স ম আবদুর রব এ হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই- সংবিধান লঙ্ঘন হবে ইভিএম ব্যবহার করলে। সংবিধানের বিরোধিতা হবে, রাষ্ট্রদ্রোহিতা হবে। এটা রাষ্ট্রীয় অপরাধ, সাংবিধানিক অপরাধ। এটা যদি নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে ব্যবহার করতে যায় আমরা আমাদের নেতা সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করবো।
আমি নির্বাচন কমিশনকে বলতে চাই, এটা সংবিধান বিরোধী, রাষ্ট্র বিরোধী, মামলা হবে; জেলে যাবেন। আমরা ছাড়বো, দেশের ১৮ কোটি মানুষ ছাড়বে না। রাজধানীর গুলশান লেকশোর হোটেলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের উদ্যোগে ‘ইভিএমকে না বলুন, আপনার ভোটকে সুরক্ষিত করুন’- শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
সেমিনারে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে কিভাবে ভোট কারচুপি করা যায়  একটি ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রয়োগিক ব্যবহারে ভোট প্রদান করে তার ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। সেখানে দেখানো হয় কিভাবে এক প্রতীকের ভোট অন্য প্রতীকের বক্সে জমা হয়।
বিএনপি মহাসচিব ও ফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, একাদশ নির্বাচনে অংশগ্রহণ সম্পর্কে ফ্রন্টের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, নির্বাচনে আমরা যাবো, নির্বাচনকে জনগণের রায়ে পরিণত করতে জাতি নির্বাচনে যাবে। সেই নির্বাচনকে অবশ্যই জনগণের রায়ে পরিণত করতে জনগণ সেই লড়াই, সেই যুদ্ধে লড়বে। ভোটের যুদ্ধে লড়বে। সেখানে কোনো কিছুই তাদেরকে আটকিয়ে রাখতে পারবে না। ভোট বিপ্লব হবে, জনগণ সেই ভোট বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত হয়ে রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা যখন আজকে নির্বাচনে যাচ্ছি, তখনও আমাদের অসংখ্য নেতা কারাগারে রয়েছেন। আমাদের প্রার্থী হওয়ার উপযুক্ত যারা, তারা কারাগারে রয়েছেন। তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এমনকি আমাদের মনোনয়নপত্র নেয়ার জন্য আসার পথেও নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আবারও বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার জন্য জোর করে সব অপকৌশল ব্যবহার করছে। জনগণের ওপরে যখন কোনও আস্থা থাকে না, তখনই এসব কৌশলের আশ্রয় নেয়া হয়। নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করে মির্জা আলমগীর বলেন, ইসি নিজে থেকেই সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এই কারণে জনগণের কোনো কথাই তাদের কানে যাচ্ছে না।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম বলেন, বর্তমান সরকার এবার ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবে কিনা আমার সন্দেহ আছে। ইভিএম’র এই রকম প্রেজেনেটশন আরো সব জায়গায় দেয়া দরকার। এতে মানুষ আরো সাহসী হবে। মূলত আমাদের দরকার মানুষকে সাহসী করে তোলা।
নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ক মাহমুদুর রহমান বলেন, ভোটের দিন ভোটের মাঠে ভোট দিতে যান। এবার স্লোগানটা দিতে হবে নিরাপদ ভোট চাই, নিরাপদ ভোটকেন্দ্র চাই। আমরা একটা শঙ্কামুক্ত, প্রশ্নমুক্ত নির্বাচন চাই।
গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের উদ্দেশ্যই হচ্ছে, জনগণের ভোট ডাকাতি করা। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, ভোট ডাকাতির পরিণতি হবে ভয়াবহ। এজন্য জনগণ এই সরকারকে কখনোই ক্ষমা করবে না। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছতা আজ প্রশ্নবিদ্ধ। তাদের উপর বিশ্বাস ও আস্থা রাখার কোনো সুযোগ নেই।
সেমিনারের মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ইভিএম এর মূল ভোটিং প্রোগ্রাম পরিবর্তন করা যায় এবং এর মাধ্যমে ভোটের ফলাফল পরিবর্তন করা সম্ভব। সময়ভিত্তিক কারচুপির মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের পর যে প্রার্থীকেই ভোট দেয়া হোক না কেন তার নির্দিষ্ট মার্কায় যাবে। সংখ্যা নির্ভর কারচুরি মাধ্যমে কোনো ব্যালট ইউনিটি (ক) মার্কায় যদি নির্দিষ্ট সংখ্যার চেয়ে বেশি ভোট পায় তবে পরবর্তী সকল ভোট (খ) মার্কায় যাবে। চূড়ান্ত ফলাফল নির্ভর কারচুপির মাধ্যমে ভোটের ফলাফল যাই হোক না কেন, ফলাফল ডিসপ্লেতে পূর্বনির্ধারিত ফলাফল প্রদর্শন করবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে ও  বিজ্ঞান-প্রযুক্তি সম্পাদক প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজুর পরিচালনায় সেমিনারে গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও জাতীয় পার্টি (জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার বক্তব্য দেন। সেমিনারে ২০ দলীয় জোটের শরিক খেলাফত মজলিশের অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইসহাক, ইসলামী ঐক্যজোটের এমএ রকীব, বিজেপি’র আন্দালিব রহমান পার্থ, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক, এলডিপি’র রেদোয়ান আহমেদ, জাগপা’র তাসমিয়া প্রধান, খন্দকার লুৎফর রহমান, এনপিপি’র ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, মুসলিম লীগের এএইচএম কামরুজ্জামান খান, পিপল্‌স লীগের গরীবে নেওয়াজ, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, বাংলাদেশ ন্যাপের এমএন শাওন সাদেকী, ইসলামিক পার্টির আবু তাহের চৌধুরী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা নূর হোসাইন কাশেমী, মুফতি মো. ওয়াক্কাস, মহিউদ্দিন ইকরাম, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, ডিএল’র সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, জাতীয় লীগের সৈয়দ এহসানুল হুদা ও পিপিবি’র শামসুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মাহবুবউল্লাহ, সাংবাদিক শওকত মাহমুদ, সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর তাজমেরী এস ইসলাম, প্রফেসর মামুুন আহমেদ, প্রফেসর ডা. একেএম আজিজুল হক, প্রফেসর ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, প্রফেসর সিরাজউদ্দিন আহমেদ, প্রফেসর ফরহাদ হালিম ডোনার, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সেলিম ভূঁইয়া, বেবী নাজনীন, শাকিল ওয়াহিদ, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, শামীমুর রহমান, আশরাফ উদ্দিন বকুল, তাবিথ আউয়াল, ফয়সল আলিম, সৈয়দ সাদাত আহমেদ, কেএম আসাদুজ্জামান, হাছিন আহমেদ, সারোয়ার হোসেন, বিএফইউজে মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, ডিইউজে সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম।

No comments

Powered by Blogger.