রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করবে নাগরিক প্ল্যাটফরম

এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফরমের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির আগে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করবে নাগরিক প্ল্যাটফরম। নির্ধারিত সময়ে তা করা না গেলে, ভোটের পর সারা দেশে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। একই সঙ্গে সুশীল সমাজের সঙ্গেও আলোচনা হবে। কারণ ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে আগামী সংসদ নির্বাচনে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে বেশ কয়েকটি দাবি জানিয়েছে দেশের যুব সমাজ।
গতকাল সিরডাপ মিলনায়তনে ‘এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফরম, বাংলাদেশ-এর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ড. দেবপ্রিয়। গত ১৪ই অক্টোবর রাজধানীতে অনুষ্ঠিত ‘যুব সম্মেলন ২০১৮: বাংলাদেশ ও এজেন্ডা ২০৩০ তারুণ্যের প্রত্যাশা’ শীর্ষক জাতীয় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সংগঠনটি। সেখানে দুই হাজারের বেশি যুবক অংশগ্রহণ এবং তাদের মতামত প্রকাশ করেন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ ছিল যুবক, যাদের বয়স ১৮ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে।
তাদের মতামতের ভিত্তিতে তৈরি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
যুব সম্মেলনে উল্লিখিত দাবিগুলো উপস্থাপন করে ড. দেবপ্রিয় বলেন, বর্তমানে মোট বেকার জনগোষ্ঠীর প্রায় ৮০ শতাংশ যুব সমাজের অন্তর্ভুক্ত। মানসম্মত শিক্ষার ঘাটতি ও কর্মোপযোগী দক্ষতা অর্জনের পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকায় শিক্ষা অনেক ক্ষেত্রেই কাঙ্ক্ষিত সুফল বয়ে আনছে না। নিজেদের উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে তোলার মতো আর্থিক সহায়তাও পাচ্ছে না যুব সমাজ।
যথাযথ সুযোগের অভাবে যুব সমাজের একাংশ এখন হতাশ। পরিণতিতে তাদের কেউ কেউ হয়ে পড়ছে মাদকাসক্ত এবং কেউ বা জড়িয়ে পড়ছে চরম পন্থায়। ফলে তাদের অপার সম্ভাবনা নষ্ট হচ্ছে। তারা দেশের বোঝা ও সমাজের জন্য দুশ্চিন্তার কারণে পরিণত হচ্ছে। কিন্তু যুবসমাজ দক্ষ, জ্ঞানবান নাগরিক হিসেবে এসডিজির অভীষ্ট লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশ গড়ার ও দেশসেবায় আত্মনিয়োগ করবে। উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে যুব সমাজের কার্যকর ভূমিকা রাখার সুযোগ করে দিতে নীতিনির্ধারকদের কাছে অনুরোধ জানায় যুবসমাজ।
যুবকদের দাবির মধ্যে আরো রয়েছে- মানসম্মত শিক্ষা, যুব সমাজের কর্মসংস্থান, মেধার ভিত্তিতে কর্মে নিয়োগ, যুব সমাজের উদ্ভাবনী শিক্ষার বিকাশ, সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অধিকার, উগ্রবাদের মোকাবিলা, মাদকাসক্তি প্রতিরোধ, মুক্তবুদ্ধির চর্চা, তথ্যপ্রযুক্তি ও বাক স্বাধীনতার অধিকার, যুববান্ধব শাসনব্যবস্থা, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুব সমাজের অন্তর্ভুক্তি ইত্যাদি।
এ সময় আসন্ন নির্বাচনে যুবসমাজকে সংযুক্ত করার বেশ কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন তিনি। দাবিগুলো হলো- নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোকে যুব সমাজের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে এবং তাদের মতামত বিবেচনায় নিতে হবে; যুব সমাজের দাবি নির্বাচনী ইশতেহারে রাখতে হবে; যুব সমাজের প্রাধিকারগুলো প্রচারণায় আনতে হবে; নাগরিক ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে যুবসমাজ ভোট পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করবে; নির্বাচনের পর সরকারের কর্মপরিকল্পনায় যুবসমাজের প্রত্যাশা ও প্রাধিকারের প্রতিফলন থাকতে হবে এবং নতুন সরকারের নীতিতে যুব উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, দেশের রাজনৈতিক দলগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যুবসমাজকে অপব্যবহার করছে। এটি রোধ করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে সব রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট ঘোষণা প্রদান করতে হবে। দেবপ্রিয় বলেন, সুশীল সমাজের সঙ্গে সরকার সংলাপ করবে কিনা আমাদের জানা নেই। এখন যে পরিস্থিতি, এ সময়ে সরকারের সঙ্গে আমাদের সংলাপ করার কোনো আগ্রহ নেই। তবে নির্বাচন নিয়ে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আমরা আলোচনা করতে চাই। এটি হবে তাদের নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে আলোচনা।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দেশে বর্তমানে মোট ভোটারের এক-তৃতীয়াংশ (প্রায় সাড়ে তিন কোটি) ভোটার যুব সমাজ। এর মধ্যে প্রায় দুই কোটি নতুন ভোটার। আগামী সংসদ নির্বাচনে যুব সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এক্ষেত্রে যুব সমাজের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের মতামত গ্রহণ করা নির্বাচনের জন্য ফলপ্রসূ হবে।
গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, সম্মেলনে যুবসমাজ কোটা সংস্কারের বিষয় তুলেছিল। তারা স্পষ্ট করে বলেছে, আমরা কোটা ব্যবস্থার সংস্কার চেয়েছি, কোটা বাতিল চাইনি। কওমি মাদরাসার ডিগ্রিকে স্নাতকোত্তর মানের স্বীকৃতি দেয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, তাদের একটি ডিগ্রিকে মাস্টার্সের সমমান ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু সেটা কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, আমার কাছে স্পষ্ট নয়। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ইক্যুভ্যালেন্সি ফ্রেমওয়ার্ক করা দরকার, সেটা করা হয়নি।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক বলেন, দেখা যায়, একটা যুবক বাবা-মায়ের টাকা খরচ করে পড়েছে, কিন্তু চাকরি পাচ্ছে না। এই বেকার যুবকদের একটা অংশ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। আর এদেরকে দলে ভেড়ানোর জন্য ওত পেতে থাকে জঙ্গিরা।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের যে রূপকল্প নিয়ে এসডিজির বৈশ্বিক এজেন্ডার যাত্রা। সেখানে বাংলাদেশের প্রগতিশীল ও অগ্রাভিমুখী রূপান্তর একই সূত্রে গাঁথা। উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় কাউকে পেছনে রাখা যাবে না। এই প্রত্যয়ে অনুপ্রাণিত হয়ে এসডিজি’র বৈশ্বিক অভীষ্ট বাস্তবায়নে সারাবিশ্বেই আজ তরুণরা বহুমুখী আন্দোলনের মাধ্যমে সক্রিয়। বাংলাদেশের যুবসমাজ নিজেকে এ পরিবর্তনমুখী বৈশ্বিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে মনে করে।
অনুষ্ঠানে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফরমের সমন্বয়ক আনিসাতুল ফাতেমা ইউসুফ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, সিপিডির বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম, শিক্ষাবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.