ভৌতিক মামলা: মৃত, রোগী প্রবাসী বাদ যাচ্ছেন না কেউই by কাফি কামাল

ঘটনা নেই, কিন্তু মামলা আছে। একটি-দু’টি নয়, অনেক। সারা দেশে, থানায় থানায়। সবখানে গায়েবি মামলা দায়েরের রীতিমতো প্রতিযোগিতা। ১লা সেপ্টেম্বর বিএনপি’র ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর পর থেকে প্রতিটি কর্মসূচির পরই দায়ের হচ্ছে নতুন নতুন মামলা। একেকটি মামলায় আসামি তালিকায় থাকছে শত শত নাম। উল্লিখিত নামের চেয়ে অজ্ঞাতনামা সংখ্যাই থাকছে দুই-তিনগুণ বেশি। যাদের বেশির ভাগই বিএনপি ও তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থক।
আসামির তালিকা থেকে বাদ পড়ছে না মৃত, প্যারালাইজড রোগী, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, অশীতিপর বৃদ্ধ, কারাবন্দি, হজ পালনসহ নানা কাজে বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তিদের নাম। রাজধানীতেই দায়ের হচ্ছে সবচেয়ে বেশি মামলা।
রাজধানীতে এসব মামলায় কমন আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে বিএনপি ও অঙ্গদলের অর্ধশতাধিক কেন্দ্রীয় নেতার নাম। রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় দায়েকৃত এক মামলায় আসামি হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক প্রফেসর। আসামির তালিকা থেকে বাদ পড়ছেন না পেশাদার আইনজীবীরাও। বিএনপি মহাসচিবসহ দলটির দায়িত্বশীল নেতারা বারবার এসব মামলাকে আখ্যায়িত করছেন গায়েবি মামলা হিসাবে। আইনজীবীরা আদালতে মামলাগুলো যে গায়েবি তা প্রমাণে নানা যুক্তি প্রমাণ তুলে ধরলেও জামিন মিলছে না গ্রেপ্তারকৃতদের। উল্টো আদালত গ্রেপ্তারকৃতদের পুলিশি রিমান্ডে নেয়ার অনুমতি দিচ্ছেন। গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নিয়ে অর্থ আদায় করছে পুলিশ। চলতি সেপ্টেম্বরে দায়েরকৃত মামলা নিয়ে বিএনপি নেতারা এসব তথ্য জানান।
রাজধানীতে গায়েবি মামলা: ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দায়েরকৃত মামলাগুলোতে যে গায়েবি তার পক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরছেন বিএনপি নেতারা। তারা বলছেন, ৩০শে সেপ্টেম্বর বিএনপি সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করেছে পুলিশ ২২টি শর্ত সাপেক্ষে জনসভার অনুমতি দিয়েছিল। শর্ত মেনেই জনসভা করেছে বিএনপি।
শান্তিপূর্ণ এ কর্মসূচিতে বিপুল লোক সমাগম হলেও সমাবেশ ঘিরে আশপাশের এলাকায় কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি সেদিন। কিন্তু সমাবেশে যাওয়া ও ফেরার পথে আশপাশের এলাকা থেকে বিএনপি ও অঙ্গদলের তিনশ’র বেশি নেতাকর্মী ও সমর্থককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একইভাবে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও কারামুক্তির দাবিতে ১০ই সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও ১২ই সেপ্টেম্বর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে পুলিশের অনুমতি নিয়ে প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। কর্মসূচির দিন সংশ্লিষ্ট সময়ে আশপাশে কোনো ঘটনা-দুর্ঘটনা ঘটেনি। তেমন কোনো খবরও প্রকাশ-প্রচার হয়নি গণমাধ্যমে। অথচ প্রতিটি কর্মসূচির পর কয়েকশ নেতাকর্মীকে আটক করে তাদের বিরুদ্ধে দেয়া হয়েছে গায়েবি মামলা। যার সবশেষ উদাহারণ, ১লা অক্টোবর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপি ও অঙ্গদলের ৫৫ জন কেন্দ্রীয় নেতাকে আসামি করে হাতিরঝিল থানায় দুইটি মামলা দায়ের। হাতিরঝিলের মামলাটি যে গায়েবি তার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বিএনপি নেতারা জানান, সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানের রোববারের সমাবেশটি শেষ হয়েছে বিকাল ৫টার পর। সমাবেশ থেকে ফেরার পথে মগবাজারে গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটলে সেটা বিকাল সাড়ে ৫টা থেকে ৬টার সময় সংঘটিত হওয়ার কথা।
কিন্তু বাস্তবে রোববার সারাদিন মগবাজারে কোনো ধরনের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি। এ ধরনের কোনো সংবাদ গণমাধ্যমেও প্রকাশ হয়নি। সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে অংশ নিতে যাওয়ার পথে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল রহমানকে বিকাল ৩টার সময় রমনা পার্ক এলাকা থেকে নেতাকর্মীদের সামনেই গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে আসামি দেখানো হয় মুগদা থানার একটি মামলায়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, সমাবেশ থেকে ফেরার পথে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপের। কিন্তু সোহেল রহমানের বাড়ি মোহাম্মদপুরে, তিনি মোহাম্মদপুর এলাকার নেতাকর্মীদের নিয়েই সমাবেশে যাচ্ছিলেন। তার ভাই মনু বলেন, মোহাম্মদপুর রাজধানীর পশ্চিমপ্রান্তে আর মুগদা পূর্ব প্রান্তে।
আমার ভাই সমাবেশ থেকে মোহাম্মদপুর না ফিরে মুগদা যাবে কেন? সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে সমাবেশ থেকে ফেরার পথে পুলিশের ওপর হামলার। কিন্তু তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন সমাবেশস্থলে ঢোকার মুখে বিকাল ৩টায়। কুমিল্লা জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৪৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিউদ্দিনসহ ৭ জনকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। অথচ মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়াকে সমাবেশে যাওয়ার পথে কাকরাইল মোড় থেকে নেতাকর্মীদের সামনেই গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একই মামলায় গ্রেপ্তারকৃত শফিউদ্দিনকে দুইজন কর্মীসহ কাকরাইল মোড় থেকে আটকের পর দুই কর্মীকে ছেড়ে দেয়া হলেও তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয় মগবাজারে।
মৃত ব্যক্তি যখন আসামি: ১১ই সেপ্টেম্বর পল্টন থানায় রাস্তা বন্ধ করে যানচলাচলে ব্যাঘাত ঘটনোর অভিযোগে দায়েরকৃত এক মামলার ২৬ নম্বর আসামি রাজারবাগ ইউনিট বিএনপি’র সাবেক সভাপতি মিন্টু কুমার দাস। তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন ১১ বছর আগে ২০০৭ সালের ২৩শে জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগর কামরাঙ্গীরচর থানায় ৫ই সেপ্টেম্বর একটি মামলা দায়ের করে পুলিশ। সে মামলায় আসামির তালিকায় রয়েছেন নূরুল ইসলামের নাম। যিনি মামলা দায়েরের ৫দিন আগে ৩১শে আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন। ৫ই সেপ্টেম্বর গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশের ওপর ককটেল নিক্ষেপের অভিযোগে একটি মামলা হয় চকবাজার থানায়। মামলার একজন আসামি চকবাজার থানা বিএনপি’র সাবেক আহ্বায়ক আজিজ উল্লাহ মৃত্যুবরণ করেছেন দুই বছর আগে ২০১৬ সালের মে মাসে।
মৃত ব্যক্তি আসামি হয়েছেন ঢাকার বাইরেও। ২রা সেপ্টেম্বর খুলনার দাকোপ থানায় দায়েরকৃত একটি নাশকতা মামলার আসামি যুবদল নেতা ফয়সাল ঘটনার তিন দিন আগে ২৯শে আগস্ট ভারতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দায়েরকৃত এক মামলায় ৫ নম্বর আসামি শম্ভুপুরা ইউনিয়ন বিএনপি’র সাবেক সভাপতি মজিবর রহমান। কিন্তু তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন ২০১৬ সালের ২৬ অক্টোবর।
প্রবাসী ও বিদেশে অবস্থানকারীও আসামি: সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের পর ৩০শে সেপ্টেম্বর হাতিরঝিল থানায় দায়েরকৃত নাশকতা মামলার আসামিদের অন্যতম বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন ২৬শে সেপ্টেম্বর। সুদূর যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করেও তিনি হয়েছেন নাশকতা মামলার আসামি। মামলার আরেক আসামি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দীর্ঘদিন ধরেই অবস্থান করছেন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। তিনিও সমাবেশে অংশ নিতে কার্যালয় ছেড়ে যাননি। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপি’র মানববন্ধনের দিন সকালেই নিজের অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে সিঙ্গাপুর যান গাজীপুর জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল। কিন্তু সেদিন ১১ই সেপ্টেম্বর জয়দেবপুর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়েরকৃত এক মামলায় আসামির তালিকায় রয়েছে তার নাম। গাজীপুর জেলা বিএনপি সভাপতি ফজলুল হক মিলন বলেন, পুলিশ যখনকার ঘটনা দেখিয়ে মামলা দায়ের করেছে তখন গাজী বাবুল ছিলেন বিমানে। ৫ই সেপ্টেম্বর রাজধানীর চকবাজার থানায় দায়েরকৃত মামলার আরেক আসামি চান মিয়া।
৪ঠা আগস্ট হজ করতে সৌদি আরবে যাওয়ার পর ঘটনার দিন পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করছিলেন। ১৪ই আগস্ট রাতে বিএনপি’র মিছিল থেকে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ও ককটেল নিক্ষেপের অভিযোগে চকবাজার থানায় ৩রা সেপ্টেম্বর একটি মামলা হয়। সে মামলায় আসামি বিএনপি নেতা খতিবুর রহমান হজ পালন করতে ১০ই আগস্ট থেকে সৌদি আরবে রয়েছেন। হাজারীবাগ থানা বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি ধানমন্ডি থানায় দায়েরকৃত এক মামলায় আসামির তালিকায় রয়েছে এককালে হাজারীবাগ থানা বিএনপি’র সঙ্গে যুক্ত ইঞ্জিনিয়ার প্রিন্সের নাম। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই ইঞ্জিনিয়ার প্রিন্স মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। ৩রা সেপ্টেম্বর ওয়ারী থানায় দায়েরকৃত মামলার আরেক আসামি বিএনপি’র ওয়ার্ড নেতা সাব্বির আহমেদ আরিফ। অথচ ১লা সেপ্টেম্বর থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি ভারতে অবস্থান করছিলেন। বিএনপি’র মানববন্ধন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গাজীপুরের শ্রীপুরে দায়েরকৃত বিস্ফোরক দ্রব্য ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলায় আসামির তালিকায় নাম উঠা উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি সিরাজ কাইয়া আগে থেকেই চিকিৎসার জন্য অবস্থান করছিলেন কলকাতায়।
এ মামলায় আরেক আসামি হলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সহ-সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু ছিলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কেন্দ্রীয় মানববন্ধনে। কুমিল্লার মুরাদনগরের আহাদ খলিফা একজন বাহরাইন প্রবাসী। তিনি ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে ছুটে কাটাতে দেশে আসেন এবং ২০১৮ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারি বাহরাইনে ফিরে যান। কিন্তু প্রায় ৮ মাস পরে মুরাদনগর থানায় ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে দায়েরকৃত এক মামলায় আসামির তালিকায় নাম উঠেছে তার। রাজশাহীর তানোর থানা পুলিশ ৩রা সেপ্টেম্বর নাশকতার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করে। সে মামলার একজন আসামি জামালউদ্দিন হজ পালনের জন্য ওই সময় সৌদি আরবে অবস্থান করছিলেন। ২০১৮ সালের ২৮শে আগস্ট থেকে ৪ঠা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিদেশে অবস্থান করছিলেন নেত্রকোনা জেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোখলেছুর রহমান। কিন্তু প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে ৩রা সেপ্টেম্বর দায়েরকৃত দুটি মামলায় তিনি আসামি। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তৈমূর আলম খন্দকার জানান, সোনারগাঁ উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আজহারুল ইসলাম মান্নান, সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি খন্দকার আবু জাফর, কাঁচপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবদুল মোমেন ও তারাবো পৌর বিএনপির সভাপতি নাসিরউদ্দিন সেপ্টেম্বর মাসে নিজ নিজ এলাকায় দায়েরকৃত মামলায় আসামি হয়েছেন।
কিন্তু ঘটনা এবং মামলার সময় তারা চারজনই পবিত্র হজ পালনে সৌদি আরবে অবস্থান করছিলেন। এছাড়া ৮ই সেপ্টেম্বর ফতুল্লা থানায় দায়েরকৃত মামলার আসামি রানা মজিদ দীর্ঘদিন থেকেই অবস্থান করছেন দক্ষিণ কোরিয়ায়। এদিকে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, নগরীর বন্দর এলাকার বাসিন্দা প্রবাসী শেখ সেলিম। দেশে না থাকলেও তার নামে মামলা দিয়েছে পুলিশ। কালিয়াকৈরে দায়েরকৃত মামলার আসামি থানা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক খলিলুর রহমান ইবরাহিম হজ পালনে অবস্থান করছিলেন সৌদি আরবে।
শয্যাশায়ী ও অশীতিপর বৃদ্ধ আসামি: ১২ই সেপ্টেম্বর পল্টন থানায় দায়েরকৃত তিন মামলায় অন্যতম আসামি বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম। জটিল কিডনি রোগের পাশাপাশি তার শরীরে দুরারোগ্য ক্যানসার ধরা পড়ে চলতি বছরের প্রথমদিকে। গত এক বছর ধরে তার বেশিরভাগ সময় কেটেছে দেশ-বিদেশের হাসপাতালে। দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকা স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও পর্যন্ত অংশ নিতে পারছেন না তিনি। সবচেয়ে বড় কথা অন্যের সাহায্য ছাড়া তিনি চলাফেরাই করতে পারেন না। কিন্তু তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে নাশকতা ও পুলিশের কাজে বাধাদানের। ৩রা সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ বয়েজ ক্লাব মাঠে বিরোধী নেতাকর্মীরা জমায়েত হয়ে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে ৯৬ জনকে আসামি করে একটি মামলা করে ওয়ারী থানা পুলিশ। ওই মামলায় উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও কিডনি জটিলতায় আক্রান্ত ৮২ বছর বয়স্ক লুৎফুল কবিরকে আসামি করা হয়। তিনি অন্যের সাহায্য ছাড়া একাকী চলাফেরা করতে পারেন না।
যিনি ১১ই আগস্ট পর্যন্ত ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালের ৫৬০ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ৭ই সেপ্টেম্বর নাশকতার অভিযোগে একটি মামলা হয় বগুড়ার ধুনট থানায়। সে মামলায় ৮৬ বছরের প্যারালাইজড রোগী আবদুল খালেক সরকারকে আসামি করা হয়, যিনি দীর্ঘদিন ধরেই শয্যাশায়ী। সেপ্টেম্বর মাসে দ্বিতীয় সপ্তাহে নেত্রকোনা সদর থানায় দায়েরকৃত এক মামলায় আসামি হয়েছেন এহতেশাম হায়াত খান রিংকু। নেত্রকোনা জেলা বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত রিংকু কিডনি জটিলতার কারণে তিন বছর ধরে রাজনীতিতে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয়। দীর্ঘদিন ভারতে চিকিৎসা নেয়ার পর তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হলেও সপ্তাহে একবার কিডনি ডায়ালেসিস করতে হয়। তার শারীরিক অবস্থা এতটাই নাজুক যে, অন্যের সাহায্য ছাড়া চলাফেরাই করতে পারেন না। অথচ সদর থানায় দায়েরকৃত তিনটি মামলায় আসামির তালিকায় রয়েছে রিংকুর নাম।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ও কারাবন্দি আসামি: আসামির তালিকায় থাকা অ্যাডভোকেট শহীদুজ্জামান সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ঘটনার সময় সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসাধীন ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। দলের আরেক নেতা অ্যাডভোকেট মনির ঘটনার দুই সপ্তাহ আগে থেকেই চিকিৎসার জন্য অবস্থান করছিলেন ভারতের ভেলোরে। সোনারগাঁ থানায় দায়েরকৃত এক মামলায় ১১নং আসামি থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রউফ। যিনি প্যারালাইজস হয়ে সাভার সিআরপিতে ভর্তি রয়েছেন। কালিয়াকৈরে দায়েরকৃত মামলার আসামি যুবদল মৌচাক শাখার সভাপতি রিয়াজ মেম্বার বিগত ৬ মাস ধরে কারাগারে আটক রয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.