সংলাপে সায়

এতদিন নাকচ করে আসলেও জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে বিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে বসছে আওয়ামী লীগ। গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দেন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। গতকাল বিকালে ওই আহ্বানে সাড়া দিয়ে সংলাপে বসার সিদ্ধান্ত জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দলের এই সিদ্ধান্তকে জাতির জন্য সুখবর এবং চমক আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে দলের নেতৃত্ব দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
খুব শিগগির সংলাপের দিন, সময় ও স্থান জানিয়ে দেয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই এই সংলাপ হবে। তবে ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবি মানা হবে কিনা এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, এটি আলোচনার মাধ্যমেই ঠিক হবে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনীতির মাঠে অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার মধ্যেই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংলাপের ইতিবাচক সিদ্ধান্ত এলো।
অকস্মাৎ এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও ক্ষমতাসীন দলের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, সংলাপের আহ্বানে সাড়া দেয়ায় রাজনীতিতে বরফ গলার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সংলাপে কী ফল আসে এটিই এখন দেখার বিষয়। এদিকে সংলাপ আহ্বানে ক্ষমতাসীন দলের তরফে সাড়া পাওয়ায় ঐক্যফ্রন্ট পূর্ব নির্ধারিত একটি কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করেছে। আজ সার্বিক বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধি দলের বৈঠক করার কথা ছিল। গতকাল বিকালে ওই কর্মসূচি স্থগিতের কথা জানানো হয়।
গতকাল বিকালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনার দরজা কারো জন্য বন্ধ হয় না, বন্ধ থাকে না। এর মধ্য দিয়ে আপনারা বুঝতে পারছেন যে, আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে বসতে সম্মত। আমরা ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের সঙ্গে সংলাপে বসবো। তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে আমাকেও একটা চিঠি দিয়েছেন। সেটা অবশ্য গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক দিয়েছেন। সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বরাবর অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে আমাদের সঙ্গে সংলাপের প্রত্যাশায় তারা চিঠি দিয়েছেন। যার সঙ্গে সাত দফা প্রস্তাব এবং ১১টি লক্ষ্য সংযুক্ত করে দেয়া হয়েছে। চিঠিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা সংলাপ করতে চেয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা চাপের মুখে নতি স্বীকার করিনি। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা কাউকে সংলাপে ডাকিনি। তবে তারা সংলাপ করতে চান। ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের সংলাপ বিষয়ে দরজা বন্ধ করে দিতে চান না, তিনি (শেখ হাসিনা) সেকথা বলেছেন। এ খবরে রাজনীতির মাঠে শান্তির বাতাস বইবে বলে মনে করি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর নেত্রী (শেখ হাসিনা) আমাদের নিয়ে একটি অনির্ধারিত বৈঠক করেন। উপস্থিত দলীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং সবার মতামত জানতে চান। অনির্ধারিত এ আলোচনায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর দরজা কারো জন্য বন্ধ নয়। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, আমরা সংলাপে বসতে রাজি। আমরা এবং আমাদের নেত্রী ঐক্যফ্রন্টের প্রস্তাবে রাজি এবং তাদের সঙ্গে সংলাপে বসবো।
সেতুমন্ত্রী বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে সংলাপে নেতৃত্ব দিবেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। খুব শিগগিরই আমরা সময়, স্থান ও আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো তাদের জানিয়ে দেবো। এটা অনতিবিলম্বে জানিয়ে দেবো। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংলাপ তফসিলের আগেই হবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফার অন্য দাবিগুলো মানা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়, আলোচনা যখন হবে, আলোচনার রেজাল্টের জন্য অপেক্ষা করেন।
সংলাপ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, তথ্য সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন প্রমুখ।
উল্লেখ্য, দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর থেকেই সরকারকে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে আসছে বিএনপি। এতে সাড়া দেয়নি আওয়ামী লীগ। একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখেও দলটির পক্ষ থেকে সংলাপের আহ্বান ছিল। এ ছাড়া সুশীল সমাজ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও সরকার এবং বিরোধী জোটের মধ্যে কার্যকর সংলাপের তাগিদ দিয়ে আসছে। তবে নির্বাচন ঘনিয়ে আসলেও সংলাপের আভাস না মিলায় রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সাধারণ নাগরিকদের মধ্যেও এক ধরনের শঙ্কা বিরাজ করছিল। গত ১৩ই অক্টোবর বিএনপি, গণফোরাম, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়।
এদিনই আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন, তফসিল ঘোষণার আগে সংসদ ভেঙে দেয়া ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ রাজবন্দিদের মুক্তিসহ সাত দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্য তুলে ধরা হয়। সাত দফা দাবিতে সিলেট ও চট্টগ্রামে মহাসমাবেশ করে ঐক্যফ্রন্ট। একই দাবিতে আগামী ২রা নভেম্বর রাজধানীতে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে গতকাল। রোববার সংলাপ চেয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদককে দেয়া ঐক্যফ্রন্টের চিঠিতেও সাত দফা ও ১১ লক্ষ্য সংযুক্ত করে দেয়া হয়।

No comments

Powered by Blogger.