নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ by কাজী সোহাগ

সব ঠিক থাকলে অক্টোবরের শেষে বা নভেম্বরের শুরুতে ঘোষিত হতে পারে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল। তফসিল ঘোষণার দুই মাসের মাথায় হবে নির্বাচন। জোট-মহাজোটের জটিল সমীকরণ আর নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনায় সরব রাজনৈতিক দলগুলো। আলোচনা-বিতর্ক থাকলেও সংবিধানে বিদ্যমান ব্যবস্থায় নির্বাচন আয়োজনে এগোচ্ছে সরকার। পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী মাসের মাঝামাঝিতে গঠন হবে নির্বাচনকালীন সরকার। তখন মন্ত্রিসভা হবে ছোট আকারের। সংসদ বহাল থাকবে মেয়াদ পর্যন্ত। নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের মধ্যদিয়ে সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হবে। এ কার্যক্রম শুরু হলে বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং জোটের পক্ষ থেকে কেমন প্রতিক্রিয়া হবে তা বিবেচনায় রেখেই দল ও জোটের করণীয় ঠিক করে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, এখন থেকে তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে সাংগঠনিক কর্মসূচি পালন ও নির্বাচনী প্রস্তুতি নেয়ার বার্তা দেয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতাদের। আওয়ামী লীগের পাশাপাশি ১৪ দলীয় জোটের পক্ষ থেকেও তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করা হবে। লক্ষ্য থাকবে মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের আয়ত্তে রাখা।
দল ও জোটের নেতারা বলছেন, এখন নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার সময়। তাই সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় যাওয়া শুরু করেছেন। তারা নির্বাচনকেন্দ্রিক কাজ করছেন। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা দল ও জোটের প্রার্থীর সহায়ক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে কাজ করছেন। তৃণমূল পর্যায়ে বর্ধিত সভা, কমিটি গঠনকেন্দ্রিক কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে ইতিমধ্যে। গত শনিবার আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির কার্যালয়ে আয়োজিত দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় সামনের করণীয় নিয়ে নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ওই বৈঠকে সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদারের নির্দেশনা দেয়া হয়। বৈঠক সূত্র জানায়, যেসব জেলা, উপজেলায় কাউন্সিলের কাজ শেষ হয়নি তা দ্রুত শেষ করতে বলা হয়। এ ছাড়া তৃণমূল পর্যায়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করে নেতাদের সক্রিয় থাকার নির্দেশনা দেয়া হয় বৈঠকে। তফসিল ঘোষণার আগে কি ধরনের কর্মসূচি নিয়ে আওয়ামী লীগ মাঠে থাকবে জানতে চাইলে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ মানবজমিনকে বলেন, এখন সামনে শুধু নির্বাচন। নেতারা ইতিমধ্যে যার যার এলাকায় নির্বাচনকেন্দ্রিক কাজ শুরু করেছেন। কেন্দ্রও সম্ভাব্য প্রার্থীর বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে। নির্বাচনকেন্দ্রিক কর্মসূচি নিয়েই এই মুহূর্তে নেতাকর্মীরা ব্যস্ত থাকবেন। নিজেও নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বিশেষ কোনো কর্মসূচি না থাকলেও প্রয়োজন হলে যেকোনো কর্মসূচি দেয়া হবে। আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিম জানিয়েছেন, নির্বাচন সামনে রেখে বরাবরই এক ধরনের ষড়যন্ত্রের পরিবেশ তৈরি হয়। একটি শ্রেণি নির্বাচন নিয়ে নানা ধরনের তৎপরতা শুরু করে।
সফল নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্য সামনে রেখে আগামী ১৮ই সেপ্টেম্বর থেকে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে ১৪ দল। তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে সারা দেশে কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানান তিনি। দলের ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল দলীয় কর্মসূচির বিষয়ে বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের আগ পর্যন্ত নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে সাংগঠনিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে সক্রিয় থাকতে বলা হয়েছে। আমরা সে অনুযায়ী তৃণমূল পর্যায়ে বর্ধিত সভা, কাউন্সিলর সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। তিনি বলেন, দলীয় কর্মসূচি এখন মূলত নির্বাচন সামনে রেখে হচ্ছে। দলীয় প্রার্থীদের সহায়ক কর্মসূচি নিয়েই আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল মাঠে থাকবে। নির্বাচন সামনে রেখে জোটের করণীয় ঠিক করতে শনিবার আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক করেন ১৪ দলের নেতারা। বৈঠকে ঢাকাসহ সারা দেশে কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠক শেষে জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম সাংবাদিকদের বলেন, সফল নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্য সামনে রেখে ১৮ই সেপ্টেম্বর থেকে আমরা মাঠে নামবো। পর্যায়ক্রমে সারা বাংলাদেশে বিভাগীয় সমাবেশ করবো। এই সমাবেশ সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা হওয়ার পর দল এবং জোটের নেতারা নির্বাচনী কাজে ঝাঁপিয়ে পড়বেন। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নির্বাচনী কর্মকাণ্ড দেশব্যাপী শুরু হয়ে গেছে। যেহেতু সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে আগামী ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে, সেই কারণেই নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা রয়েছে, দলের প্রস্তুতিও আছে। জোটের পক্ষ থেকে কি ধরনের কর্মসূচি পালন করা হবে জানতে চাইলে ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক বলেন, সামনে নির্বাচন।
এছাড়া ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এ অবস্থায় জোটের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচনকালীন পরিস্থিতিতে নতুন কর্মসূচি আসতে পারে আবার পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি পরিবর্তনও হতে পারে। জোট সূত্র জানায়, এই মুহূর্তে জোটের নেতারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন নিয়েও দর কষাকষি করছেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে নির্বাচনে ৬০ থেকে ৭০টি আসন শরিক দলের জন্য ছেড়ে দেয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করলে তাদের জন্য বড় সংখ্যায় আসন ছাড়তে হবে আওয়ামী লীগকে। এর বাইরে ১৪ দলের শরিকরাও চাইছেন আগের নির্বাচনের চেয়ে বেশি আসন। নেতারা বলছেন, দরকষাকষি করে দলীয় প্রার্থীদের জন্য আসন আদায় করা, প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারের সঙ্গে জোটবদ্ধ কর্মসূচি চালিয়ে নেয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.