পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির দাবিতে মজুরি বোর্ড ঘেরাও

তৈরি পোশাক শ্রমিকরা তাদের ন্যূনতম মজুরির প্রস্তাবনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার দাবিতে নিম্নতম মজুরি বোর্ড ঘেরাও করেছে। গতকাল বেলা তিনটায় তারা নিম্নতম মজুরি বোর্ডের প্রধান কার্যালয় ঘেরাও করে। পরে সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে শ্রমিক সংগঠনের নেতারা মজুরি বোর্ডের সঙ্গে আলোচনার পর ঘেরাও কর্মসূচি স্থগিত করে। ঘেরাও কর্মসূচি চলাকালে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের চতুর্থ বৈঠক মজুরি বোর্ডের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বোর্ড কর্তৃপক্ষ শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে ১২ই সেপ্টেম্বর পরবর্তী বৈঠকের তারিখ নির্ধারণ করেন। শ্রমিক নেতারা আশা করছেন ওই বৈঠকে তাদের দাবির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বৈঠকে শ্রমিক নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, শামছুন্নাহার ভূঁইয়া, বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমই) সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান ও বোর্ডের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে বোর্ডের তৃতীয় বৈঠকে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি মালিকদের পক্ষ থেকে ৬ হাজার ৩০০ টাকা করার প্রস্তাবনা আসে। শ্রমিক নেতারা সেটি প্রত্যাখ্যান করেন। পোশাক শ্রমিক নেতারা জানিয়েছেন, ন্যূনতম মজুরির খসড়া প্রস্তাবনা ৩১শে জুলাইয়ের মধ্যে শ্রম মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়ার নির্দেশ ছিল। কিন্তু সেটি করা হয়নি। গত ৬ মাসে মাত্র তিনটি বৈঠক হয়েছে। শ্রমিকরা মনে করছেন যত দেরি করে খসড়া দেয়া হবে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে তত বিলম্ব হবে। টেক্সটাইল গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তপন সাহা বলেন, পোশাক শ্রমিকদের দাবির প্রেক্ষিতে জানুয়ারির ৩০ তারিখে নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করে ছয় মাসের মধ্যে প্রস্তাবনা জমা দেয়ার নির্দেশনা ছিল। সংশ্লিষ্টরা সেই প্রস্তাবনা জমা দিতে ব্যর্থ হন। পরে জুলাই মাসে পুনরায় আরো তিন মাস সময় বাড়িয়ে নেয়া হয়।
আগামী ডিসেম্বরে নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন: এদিকে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে পোশাক শ্রমিকদের নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন হবে বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। তবে নতুন মজুরি কত হচ্ছে এখনও তা নির্ধারণ করতে পারেনি সরকার গঠিত ন্যূনতম মজুরি বোর্ড। মজুরি নির্ধারণে বোর্ডের কাছে দেয়া প্রস্তাব থেকে কিছুটা ছাড় দিয়ে মালিক ও শ্রমিক উভয় পক্ষকে ভারসাম্যে আসার আহ্বান জানিয়েছেন ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান সিনিয়র জেলা জজ সৈয়দ আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, মজুরি নির্ধারণে আগামী ১৭ই অক্টোবর বোর্ড থেকে সরকারের কাছে চূড়ান্ত প্রস্তাব পাঠানো হবে। পরে তা উঠবে শ্রম মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ে। আর আগামী ১২ই সেপ্টেম্বর বোর্ডের পঞ্চম সভা অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল রাজধানীর তোপখানা রোডে ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের চতুর্থ বৈঠকে সংশ্লিষ্টরা এসব তথ্য জানান। বৈঠকে চার সদস্য বিশিষ্ট স্থায়ী ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের  চেয়ারম্যান সিনিয়র জেলা জজ সৈয়দ আমিনুল ইসলাম, মালিক পক্ষের প্রতিনিধি কাজী সাইফুদ্দীন আহমদ, শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি ফজলুল হক মন্টু ও নিরপেক্ষ প্রতিনিধি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অস্থায়ী প্রতিনিধিদের মধ্যে বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান ও শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি জাতীয় শ্রমিক লীগের নারী বিষয়ক সম্পাদক বেগম শামসুন্নাহার ভূঁইয়া। এর আগে ১৬ই জুলাই তৃতীয় বৈঠকে মালিক ও শ্রমিক পক্ষ তাদের প্রস্তাবনা জমা দেয়। ওই বৈঠকে শ্রমিক পক্ষ সর্বনিম্ন মজুরি ১২ হাজার ২০ টাকা করার দাবি করে। তবে মালিক পক্ষ ৬ হাজার ৩৬০ টাকার প্রস্তাব দেয়। মজুরি বোর্ডের বৈঠক শেষে এক সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, বৈঠকে মালিক ও শ্রমিক উভয় পক্ষকে আমরা অনুরোধ করেছি একটু বিবেচনা করে দেখার জন্য, তাদের প্রস্তাব থেকে কিছুটা ছাড় দেয়া যায় কি না। একটু কাছাকাছি আসা যায় কি না। এই বিষয়ে আমরা উভয় পক্ষের কাছে প্রস্তাব রেখেছি। উভয় পক্ষই এ ব্যাপারে আমাদের আশ্বস্ত করেছে। মালিক ও শ্রমিক পক্ষ উভয়ই তাদের সংগঠনগুলোর সঙ্গে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করবে।
বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আলোচনা করে আমরা কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারিনি বিধায় আবার আরেকটি মিটিং দেয়া হয়েছে। সেই মিটিংয়েই যে হয়ে যাবে সেটাও আমরা বলতে পারছি না। আমরা চেষ্টা করছি সবাই মিলে এমন একটা জায়গায় আসা যায় যাতে শিল্পের সক্ষমতা এবং শ্রমিকের প্রয়োজনীয়তা রক্ষা পায়। সেই চেষ্টাটাই আমরা করে যাচ্ছি। আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলেই ফাইনাল অ্যামাউন্ট (নতুন মজুরি) আমরা আপনাদের জানাতে পারবো।

No comments

Powered by Blogger.